স্মার্ট সিটি না স্মার্ট লুট? শহরের ড্রেন ফুটপাথ নিয়ে ক্ষোভের ঝড়!!
স্মার্ট সিটি না স্মার্ট লুট? শহরের ড্রেন ফুটপাথ নিয়ে ক্ষোভের ঝড়!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- আগরতলার পুরনো মোটরস্ট্যান্ডের দিক থেকে শুরু করে পোস্ট অফিস চৌমুহনী-বটতলা কিংবা ওরিয়েন্ট চৌমুহনী থেকে শুরু করে আইজিএম হাসপাতাল-ফায়ার ব্রিগেড চৌমুহনী – পুরো শহর জুড়ে এখন একটাই আলোচনা – এ কেমন স্মার্ট সিটি! কোটি কোটি টাকা ঢেলে তৈরি হচ্ছে ড্রেন। কিন্তু ফুটপাথের ব্যবস্থা কোথায়? ড্রেনের উপরেই তৈরি কি হবে ফুটপাথ ? কিন্তু ড্রেনের এত সংকীর্ণ প্রস্থ যে, সেখানে ফুটপাথ তৈরি হলে পাশাপাশি দুজন মানুষ হাঁটতে গেলেই রাস্তায় উল্টে পড়বে। স্মার্ট সিটি মিশনের অধীনে আগরতলার জন্য মোট বরাদ্দ ৫৪১.০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৯০ কোটি কেন্দ্রীয় তহবিল, বাকি ৫১.০৪ কোটি রাজ্যের অংশ। মোট ৬৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৬২টির কাজ প্রায় শেষ। খরচ হয়েছে ৩৭৫.৯৭ কোটি। কাগজে কলমে সাফল্য প্রায় ৯৫ শতাংশ। কিন্তু নাগরিকদের চোখে সাফল্যের বদলে স্পষ্ট হচ্ছে গলদ।
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, স্মার্ট সিটি প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি।অথচ এখানে দেখা যাচ্ছে সংকীর্ণ ড্রেন, সীমিত ফুটপাথ এবং এমন নকশা যা ভবিষ্যতের যানবাহন ও জলনিষ্কাশন চাহিদা সামলাতে সক্ষম নয়। শহরের অনেক এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা জলমগ্ন থাকে প্রধান সড়ক। এই পরিস্থিতি কাটাতে প্রয়োজন চওড়া ও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
প্রশ্ন উঠেছে, শহর নাকা বন্দি করে এসব কী তৈরি হচ্ছে? ড্রেন নাকি মিনি নালা?
শহরের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হওয়া নতুন ড্রেনের প্রস্থ অনেক জায়গাতেই এক মিটার বা তারও কম। বিশেষ করে আইজিএম হাসপাতাল ও উমাকান্ত স্কুলের মতো জনবহুল এলাকায় পরিস্থিতি আরও করুণ। এই ড্রেনের উপর যখন ফুটপাথ তৈরি হবে, তখন তা হবে এতটাই সরু যে একসাথে দুজন মানুষ চলা প্রায় অসম্ভব।
আগরতলা এমনিতেই সামান্য বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তা ডুবে থাকে। কারণ সংকীর্ণ ভঙ্গুর ড্রেন এবং অপরিকল্পিত জলনিষ্কাশনী পরিকাঠামো। বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্যকর ড্রেনের প্রস্থ এমন হতে হবে যাতে হঠাৎ বৃষ্টির জলও দ্রুত শহরের বাইরে চলে যায়। কিন্তু এখনকার নকশায় জল বেরোনোর চেয়ে আটকে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।শহরের রাস্তাগুলি প্রশস্ত কম থাকায় ড্রেন এবং ফুটপাথ আলাদা করে নির্মাণের সুযোগ নেই। তাই ড্রেনের ছাদ ফুটপাথ হিসাবে ব্যবহার করার জন্য রাখা হয়। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে এই জরাজীর্ণ ফুটপাথগুলিই বেদখল হয়ে আছে। ফলে আগরতলার বাসিন্দাদের মধ্যে ফুটপাথ ব্যবহারের অভ্যাস কখনো তৈরি হয়নি। যেখানে ফুটপাথ আছে, সেগুলি দখল হয়ে গেছে দোকান, স্টাল, বাইক পার্কিং কিংবা আবর্জনার স্তূপে। তাই মানুষ বাধ্য হয়ে রাস্তায় গাড়ির ফাঁকে ফাঁকে চলাচল করেন। ফল- যানজট, দুর্ঘটনা আর পথচারীর ভোগান্তি। চিকিৎসকরা হাঁটার উপকারিতা নিয়ে যতই বলুন, হাঁটার মতো স্মার্ট সিটি আগরতলায় নিরাপদ প্রশস্ত ফুটপাথ বা জায়গাই নেই। কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করার পরও সেই সুযোগ জুটবে না শহরবাসীর কপালে।
নাগরিকদের অভিযোগ, এই সব নির্মাণ কাজ মানুষের জন্য নয়। বরং ঠিকাদার, সাপ্লায়ার ও কিছু বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে। টাকা এলো, দ্রুত খরচ দেখাও, গুণগত মান নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কিছুদিন পরে ভেঙে আবার নতুন টেন্ডার, আবার টাকা- এমন চক্র চলছে বলেই মত শহরবাসীর। অনেকেই এটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত টাকা লুট বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
কোটি কোটি টাকা খরচ করেও কেন শহরে পরিকল্পিত সুপ্রশস্ত ফুটপাথ নির্মাণ হবে না? কেন সংকীর্ণ ড্রেন তৈরি করে জলনিষ্কাশন ব্যবস্থা আরও বিপর্যস্ত করা হচ্ছে? কেন স্মার্ট সিটির নামে অবৈজ্ঞানিক কাজের পাহাড় গড়ে উঠছে? আর এই টাকা কি সত্যিই শহরের উন্নয়নে লাগছে, নাকি কেবল উন্নয়নের ফটোসেশনের জন্যই? এই প্রশ্নগুলি শহরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের মুখে মুখে।
স্মার্ট সিটির স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল আধুনিক, বৈজ্ঞানিক, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু আগরতলার নাগরিকেরা এখন দেখছেন প্রকল্পের নিচে আছে কাদা। উপরে কাগজে কলমে সাফল্যের ফুলঝুরি। আর বর্ষায় সামনে আসে সেই পুরনো জলনগরীর ছবি আর জনদুর্ভোগ। সবথেকে মারাত্মক বিষয় হচ্ছে,সারা শহর জুড়ে যেভাবে এবং যে পদ্ধতিতে কভার ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে, তা পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। কেননা, রাস্তা থেকে ড্রেন অনেকটাই উঁচুতে। এর মধ্যে ড্রেনে জল ঢোকার যে সরু হোল রাখা হচ্ছে, সেগুলি ইতিমধ্যে মাটির নিচে চলে যাচ্ছে। ফলে এখন সামান্য বৃষ্টি হলে জল রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকছে। বহিঃরাজ্যের কনসালটেন্সি এজেন্সি দিয়ে পরিকল্পনার জন্যই এই হাল। আগরতলা শহর কড়াইয়ের মতো। যত পরিকল্পনাই হোক, এই শহরে জল জমবেই। এই শহরের বাস্তবতা মাথায় রেখেই পরিরকল্পনা করতে হবে। দিল্লী, চেন্নাই বা অন্য কোনো শহরের মতো চিন্তা করে পরিকল্পনা করলে হবে না। আগরতলার বাস্তবতা মাথায় রেখে এই শহরের প্রধান সমস্যার বিষয়টি মাথায় রেখেই পরিকল্পনা রূপায়ণ করা প্রয়োজন ছিল। তা না করে অবৈজ্ঞানিক কভার ড্রেন করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, আগরতলা শহর থেকে বৃষ্টির জল নিষ্কাশনের একটাই পথ। আর সেটা হলো আরও উন্নতমানের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প ব্যবহার করা। এছাড়া বিকল্প আর কোনো রাস্তা নেই। যতই ড্রেন হোক, তাতে কোনো লাভহবে না।