August 23, 2025

স্মার্ট সিটির কাজের দৌলতে দুর্ভোগ চরমে, বিদ্যুৎহীন শহর!!

 স্মার্ট সিটির কাজের দৌলতে দুর্ভোগ চরমে, বিদ্যুৎহীন শহর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- প্রচারের ফানুস চুপসে যাচ্ছে প্রচার শেষ হওয়ার আগেই। আর সেই সুবাদে যথারীতি বিপাকে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। এবারও এর অন্যথা হয়নি। আগরতলা শহরের বিস্তীর্ণ অংশে টানা বারো ঘন্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাত বারোটার পর থেকে শুক্রবার বেলা প্রায় দুটো পর্যন্ত। আর এর মূলে যথারীতি স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজ দায়ী বলে খবর। অথচ গর্বের স্মার্ট সিটি নিয়ে প্রচার চলছে ও চলছে মাত্রাছাড়া গর্বের সঙ্গে। দাবি করা হয়েছে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজ একশ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে বলে।
এই প্রচারের পরও স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজ করার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বন্ধ হয়নি। আসলে শেষ হয়ে যায়নি প্রকল্পের কাজ। আগের মতোই কোনো ধরনের দায়বদ্ধতা বজায় না রেখে দিন ও রাতের বিভিন্ন সময় কাজ চলছে।এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনদুর্ভোগও চলছে। এর অবসান কবে হবে বলা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের তরফে। উল্লেখিত কারণে বিদ্যুৎ, নলবাহিত জল ও পাইপলাইন গ্যাস সরবরাহ চালু রাখা হয়ে পড়েছে রীতিমতো প্রশ্নবিদ্ধ। এই সংকটের কারণে ঘোরতর দুশ্চিন্তা দেখা গিয়েছে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম, জল পরিষদ ও ত্রিপুরা প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে যুক্তদের মধ্যে। প্রাপ্ত খবর অনুসারে আগরতলা শহরের বিদ্যুৎ, নলবাহিত জল ও পাইপলাইন গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে যে কোনো সময়। আগরতলা শহর হয়ে পড়তে পারে বিদ্যুৎ, জল ও গ্যাস শূন্য। শহরে দেখা দিতে পারে সামগ্রিক অচলাবস্থা।
কিছুটা হলেও এমনই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে। বৃহস্পতিবার রাত বারোটার কাছাকাছি সময় থেকে শুক্রবার দুপুরের পর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে থাকে। একই অবস্থা হয় নলবাহিত জল ও পাইপলাইন গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে। সবচেয়ে বেশি বিপত্তি অবশ্য ঘটেছে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে। বৃহস্পতিবার বেশি রাত থেকে শুক্রবার প্রায় সারাদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় নলবাহিত জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার বিষয়টি সেইভাবে ধরা পড়েনি। প্রাপ্ত খবর অনুসারে বিদ্যুৎ ও নলবাহিত জলের পাশাপাশি তুলনায় কম হলেও ব্যাঘাত ঘটেছে পাইপলাইন গ্যাস সরবরাহে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে শহরের কুমারীটিলা, জগৎপুর, উজান অভয়নগর, ইন্দ্রনগরের একাংশ ও ধলেশ্বর এবং বনমালীপুরের একাংশ সহ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে। ব্যাঘাত ঘটেছে পানীয় জল ও গ্যাস সরবরাহে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোথাও কোথাও এই সমস্যা বহাল রয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে নাকাল হতে হয়েছে আগরতলা শহরের মানুষকে। বিশেষত তীব্র গরমের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় শুরু হয় মশার উৎপাত। নাকাল হয়ে পড়ে জনজীবন। বহু মানুষের পক্ষে লাগামছাড়া গরম মশা সহ নানা ধরনের পোকামাকড়ের যন্ত্রণায় রাতে ঘুমোনো দায় হয়ে পড়ে। বিশেষত অভয়নগর, ইন্দ্রনগর এলাকার মানুষকে বেশি বিপাকে পড়তে হয়। শিশু এবং বাড়ির প্রবীণ ও প্রবীণাদের নিয়ে পড়তে হয় সংকটে। মোট কথায় বহু পরিবারের মানুষকে অসহনীয় যন্ত্রণা সইতে হয় বৃহস্পতিবার রাতভর। এর উপর জল সংকটে বহু পরিবারের মানুষের পক্ষে প্রাকৃতিক কর্ম করা সহ শুক্রবার নাওয়াখাওয়া করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

অন্য সময়ের মতো বৃহস্পতিবার রাতেও স্মার্ট সিটি প্রকল্পের কাজ করা হয় শহরের বিভিন্ন এলাকায়। আর কাজ শুরু হতে হতেই আগের বিভিন্ন সময়ের মতো একের পর এক বিপর্যয় ঘটতে থাকে। কাটা পড়তে থাকে ভূতল বিদ্যুৎ সরবরাহকারী তার। এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় তেত্রিশ কিলোভোল্ট তার কাটা পড়েছে। ক্ষতি হয়েছে ভূতল বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার অন্যতম অনুষঙ্গ কিয়স্ক সহ বিভিন্ন সামগ্রীর। এমন ঘটনা ঘটেছে অন্তত দশ থেকে বারোটি এলাকায়। প্রাপ্ত খবর অনুসারে এর ফলে রীতিমতো জেরবার হতে হয় রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমকে। বৃহস্পতিবার রাতে কোনো রকমে কাটলেও শুক্রবার সকাল থেকে অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। নতুন করে শুরু হয় ভূতল বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষতি হওয়া। একই ঘটনা ঘটতে শুরু করে নলবাহিত জল ও পাইপলাইন গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে।
এমতাবস্থায় স্মার্ট সিটি প্রকল্প ঘিরে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মহলে শুরু হয় ফোনাফোনি। তাতে অবশ্য তেমন কোনো লাভ হয়নি। লাগাম পরানো যায়নি প্রকল্পের কাজ রূপায়ণের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্মীদের। তারা যথারীতি যাবতীয় নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে লাগামছাড়া গতিতে কাজ করতে থাকে। সেই সঙ্গে ক্ষতি করছে নগর জীবনের আবশ্যিক অঙ্গ বিভিন্ন ভূতল ব্যবস্থার। জানা গেছে এর ফলে পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তৈরি বিপর্যয়কালীন সময়ের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থারও ক্ষতি হয়েছে মারাত্মকভাবে। আর এই কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে মাত্রাছাড়া পরিমাণে। এর অবসান কবে হবে এখন সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *