October 20, 2025

সুশাসনের রাজ্যে স্বাস্থ্য বিপ্লবের নগ্নচিত্র, রোগীর চাপে অসুস্থ হাসপাতালের একমাত্র চিকিৎসক, ব্যাহত পরিষেবা!!

 সুশাসনের রাজ্যে স্বাস্থ্য বিপ্লবের নগ্নচিত্র, রোগীর চাপে অসুস্থ হাসপাতালের একমাত্র চিকিৎসক, ব্যাহত পরিষেবা!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় লাগাতার দিনের পর দিন রাত জেগে হাসপাতালে রোগী দেখতে দেখতে খোদ চিকিৎসক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে। রোগীর বেডেই চিকিৎসককে শুইয়ে স্যালাইন লাগিয়ে চলল চিকিৎসা। অথচ দিনের পর দিন স্থায়ী চিকিৎসক চেয়েও মিলছে না চিকিৎসক। ফলে চিকিৎসকের সংকটে লাটে উঠেছে চিকিৎসা পরিষেবা। ঘটনা পানিসাগর মহকুমার অন্তর্গত যুবরাজনগর বিধানসভার তিলথৈ প্রাথমিক হাসপাতালের। এতে ক্ষোভদেখা দিয়েছে এলাকাজুড়ে। প্রসঙ্গত তিলথৈ প্রাথমিক হাসপাতালটি যুবরাজনগর বিধানসভা এলাকার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। এই হাসপাতালের উপর আশপাশ এলাকার যেমন তিলথৈ, দেওছড়া, উপ্তাখালি, রৌয়া, পদ্মবিল, রামনগর, আনন্দবাজার সহ আশপাশের আরও বহু অঞ্চলের জনগণ নির্ভরশীল।জানা গেছে, ওইসব অঞ্চল থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০-১১০ জন রোগী হাসপাতালের আউটডোরে আসেন পরিষেবা নিতে। এছাড়াও হাসপাতালে ২০টি শয্যা রয়েছে। অনেক সময় পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় মাটিতে বিছানা পেতেও রোগীদের চিকিৎসা চলে। অতএব হাসপাতালে যেহেতু দিনরাত রোগী থাকে তাই চিকিৎসককে হাসপাতালে থাকতেই হয়। অথচ দিনের পর দিন এ হাসপাতালে ডিউটি করে চলেছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। যদিও এই হাসপাতালে কিছুদিন আগেও দুজন চিকিৎসকই ছিলেন।
এতেও প্রায়শই সমস্যা তৈরি হতো।কেননা,একজন ছুটিতে গেলে অন্যজনকে দিনের পর দিন একাই ডিউটি করতে হতো।এরমধ্যে আচমকা দুর্গাপুজোর প্রাকমুহূর্তে এক চিকিৎসককে অন্যত্র ট্রান্সফার করে দিলে সমস্যা আরও চরম আকার নেয়। একজনকে অন্যত্র ট্রান্সফার করা হলেও তৎক্ষণাৎ হাসপাতালের নতুন করে কাউকে দেওয়া হয়নি। এর ফলে চাপ সৃষ্টি হয় একজন চিকিৎসকের ওপর। বাধ্য হয়ে সেই হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসক ডা. নীলিমা সরকারকে দিনের পর দিন একাই ডিউটি করতে হয়। এভাবেই রাত জেগে একটানা সাত আটদিন ডিউটি করতে করতে একদিন হাসপাতালেই কর্তব্যরত অবস্থায় চিকিৎসক নিজেই অচেতন হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালের বেডে রেখে তার চিকিৎসা শুরু হয়। তার রিলিফার হিসেবে অন্য কোনো ডাক্তার না থাকায় খানিকটা সুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডেই শুয়ে শুয়েই হাসপাতালে আসার রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে থাকেন ডা. নীলিমা সরকার। এভাবেই পরপর কয়েকদিন নিজেই স্যালাইন নিতে নিতে হাসপাতালে আসা রোগীদের চিকিৎসা করে যান খোদ চিকিৎসক। অসুস্থ অবস্থাতেই চলতে থাকে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা।
আশ্চর্যজনক বিষয় এমন ঘটনার পরেও স্বাস্থ্য দপ্তর তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এভাবেই চলতে চলতে ক’দিন পর একজন চিকিৎসককে এই তিলথৈ প্রাথমিক হাসপাতালে ডেপুটেশনে আনা হয়। ওই চিকিৎসক হাতেগোনা কয়েকদিন পরিষেবা দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। আবারও বাধ্য হয়ে অসুস্থ মহিলা চিকিৎসককেই অসুস্থ অবস্থাতেই দায়িত্বে ফিরে আসতে হয়। এই হচ্ছে উত্তর জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবার বর্তমান হাল হকিকত। যেখানে চিকিৎসকরা পরিষেবার নামে অত্যধিক পরিমাণ রোগীর চাপে পড়ে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সেখানে সাধারণ জনগণ কি করে ভালো চিকিৎসা পরিষেবা পাবে বলে রোজ প্রশ্ন উঠছে চারিদিকে। অনেকে আবার বলছেন চিকিৎসক যখন নিজেই অসুস্থ। এই অসুস্থ অবস্থায় অন্যকে সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে গিয়ে যদি কোনো ভুল করে বসেন তবে এর দায় কে নেবে?এই হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসকের সংকট চরম আকার নিয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে এই সমস্যা চলতে থাকলেও বর্তমানে এই হাসপাতালের একজন চিকিৎসককে অন্যত্র বদলি করে দেওয়ায় এই সমস্যা চরম আকার নিয়েছে। এর ফলে একজনকে দিনের পর দিন অসুস্থ অবস্থাতেই একাই ডিউটি করে যেতে হচ্ছে। প্রতিদিন এই হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদেরকেও একাই চিকিৎসককে পরিষেবা দিতে হচ্ছে। এছাড়াও সারাদিন ইমারজেন্সি রোগীরা আসতেই থাকেন। কিন্তু চিকিৎসক একজনই।স্থানীয় জনগণের হাসপাতালে এই অবস্থা দেখে প্রতিদিন ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। স্থানীয়দের অভিমত খুব শীঘ্রই এ হাসপাতালে আরও চিকিৎসক না দিলে যেকোনো সময় বিক্ষুব্ধ জনগণ আন্দোলনে নামতে পারেন।
এই তাদের দাবি খুব শীঘ্রই যেন একজন চিকিৎসক ডেপুটেশনে হাসপাতালে নিয়োগ করা হোক। যাতে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট রোস্টারের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণদের সঠিকভাবে উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *