September 23, 2025

সুফল সত্যি মিলবে তো?

 সুফল সত্যি মিলবে তো?

জিএসটিতে নয়া যুগের সূচনা।২০১৭ সালে দেশে জিএসটি যুগের সূচনা হয়েছিলো তখন থেকেই জিএসটির হার নিয়ে সুর চড়িয়েছিলো বিরোধী থেকে নিম্ন, মধ্যবিত্তরা।একই সাথে নিম্ন, মধ্য ব্যবসায়ীরাও জিএসটির চড়া হারের বলি হয়েছেন।বড় ব্যবসায়ীদের সাথে পাল্লা দিয়ে পিছিয়ে পড়েছেন ছোট ছোট বহু ব্যবসায়ী, দোকানি। এছাড়াও জিএসটির চড়া হারের দরুন একদিকে সরকারী রাজস্বের পরিমাণ যেমন বেড়েছে তেমনি রাজ্য সরকারগুলি আনুপাতিক হারে তাদের বরাদ্দও পায়নি। এরকম বহু অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চললেও জিএসটি সংস্কারের পথে হাঁটেনি কেন্দ্রীয় সরকার। বহুবার মন্ত্রীগোষ্ঠীর বৈঠক, জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে বিভিন্ন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা জিএসটি সংস্কারের দাবি তোলে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সেই অভিযোগকে পাত্তাই দেয়নি। গত বছর ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের পর কেন্দ্রে বিজেপির শক্তি অনেকটা কমার পরই কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতার মনকে একটি চিঠি লিখেন কেন্দ্রীয় সরকারের অপর মন্ত্রী নীতীন গড়কড়ি। নীতীন গড়কড়ির দাবি হচ্ছে, এবং স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটির হার কমাতে হবে। কেননা স্বাস্থ্যবিমা মানুষ করেন গাঁটের টাকা খরচ করে কোন শথে নয়, ভবিষ্যতের সুরক্ষায়। একই কথা বিমার ক্ষেত্রেও ঘটে। তাই তিনি বিমা এবং স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটি কমানোর দাবি তোলেন। তার এই পথ অনুসরণ করে বিমা এবং স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটি কমানোর দাবি করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।অবশেষে এবছর স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চে দিল্লীর লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, দেশবাসী দেওয়ালিতে বড় উপহার পাবেন। কিন্তু দীপাবলী পর্যন্ত অপেক্ষা নয়। প্রায় একমাস আগে নবরাত্রিতেই দেশবাসী উপহার পেলো নয়া জিএসটি যুগ। জিএসটির হার কমলো বহু আইটেমে। এমনকী বিমা এবং স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটির হার কমে হল শূন্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একে নবরাত্রি বোনানজা হিসাবে অভিহিত করেছেন। বিরোধী কংগ্রেস বিশেষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী জিএসটি চালুর দিন থেকেই জিএসটির চড়া হার নিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করে আসছিলেন। রাহুল গান্ধী জিএসটিকে কটাক্ষ করে বলতেন গবুর সিং ট্যাক্স। তিনি সুযোগ পেলেই সরকারকে জিএসটি কমানোর কথা বলতেন। দাবি জানাতেন। অবশেষে জিএসটি সংস্কার আনা হল। একে জিএসটি ২.০ সংস্করন বলা হচ্ছে। আগে জিএসটির চারটি স্তর ছিল-৫%, ১২%,১৮% এবং২৮%। কিছু আইটেমের ক্ষেত্রে ৪০% জিএসটির হার ছিল। সব মিলিয়ে জিএসটির জাঁতাকলে পড়ে অনেক ছোট, মাঝারি ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েন।নিম্নবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তের উপর জিএসটির চড়া হারের প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে রাজ্যগুলিও জিএসটির হারের ফলে ক্ষতির মুখে পড়ে রাজস্বের ক্ষেত্রে। রাজ্যর যে শেয়ার তা কেন্দ্রীয় সরকার সঠিকভাবে রাজ্যকে প্রদান করেনি- এ নিয়ে বিভিন্ন সময় রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অভিযোগ জানিয়ে আসছিল। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই জিএসটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিল রাজ্যগুলি। একইভাবে রাজ্যগুলি রাজস্বের ক্ষতিপূরণ দেবারও দাবি জানিয়েছিল। শেষপর্যন্ত জিএসটির স্ল্যাব কমিয়ে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দেবার রাস্তায় হাঁটল কেন্দ্রীয় সরকার।
এতে বহু প্রতিদিনকার ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন রয়েছে তেমনি জীবনদায়ী বিভিন্ন ওষুধপত্রও রয়েছে। রয়েছে মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা বিমা এবং স্বাস্থ্যবিমার ক্ষেত্রেও। প্রধানমন্ত্রী একে নবরাত্রির উপহার বলে অভিহিত করেছেন। এতে দেশবাসী বেজায় উপকৃত হবেন বলে তার আশা। এবার দেখার। সত্যি সত্যিই জিএসটির হার কমার সুফল সাধারণ মানুষ পায় কিনা। সুফল ঠিকভাবে মানুষ পেলে এর থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না। আবার এমনও হতে পারে। সাধারণ মানুষকে টুপি পরানোর চেষ্টা হয়েছে। তবে এর জন্য সময় প্রয়োজন। সময়ই বলবে মানুষ জিএসটি সংস্কারের সুফল সত্যি সত্যি পেলো কিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *