সাড়া জাগিয়ে শেষ হলো সংকল্প অভিযান,রাজ্যের কৃষি জাগরণে আশা দেখালেন রতন!!


অনলাইন প্রতিনিধি :-কৃষি ও কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আশার আলো জাগিয়ে সারা দেশের সাথে রাজ্যেও শেষ হলো বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান। গত ২৯ মে সারাদেশের সঙ্গে রাজ্যেও শুরু হয়েছিল এই বিশেষ অভিযান। শেষ হয়েছে গতকাল ১২ জুন। একটানা পনেরোদিনব্যাপী গোটা দেশজুড়ে এই মেগা কর্মসূচি কৃষি ও কৃষক সমাজে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। কর্মসূচিশেষে আজ নাগিছড়ায় রাজ্যের হর্টিকালচার রিসার্চ সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযানের বিস্তারিত তথ্য এবং সাফল্য তুলে ধরেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন কৃষিক্ষেত্রে ভারতবর্ষকে আধুনিক,সৃষ্টিশীল এবং স্থিতিশীল ব্যবস্থাপনার অধীনে এনে দেশকে বিশ্বের শস্য ভাণ্ডার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। কৃষি হচ্ছে ভারতবর্ষের অর্থব্যবস্থার মূল ভিত্তি। তাই কৃষির উন্নতি ছাড়া ভারতের সার্বিক উন্নয়ন অসম্পূর্ণ। দেশের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ‘এক দেশ, এক কৃষি, এক ভাবনা’ এই নীতির উপর ভিত্তি করেই কাজ করে যাচ্ছে। এর মূল লক্ষ্যই হলো বিকশিত ভারত নির্মাণ করা। মন্ত্রী বলেন, এই ভাবনাকে সামনে রেখেই ২০২৫-২৬ সালে কৃষি বাজেট রেকর্ড পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মাননিধির অধীনে দেশের এগারো কোটিরও বেশি কৃষককে এখন পর্যন্ত তিন লক্ষ নবুই হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।আমাদের রাজ্যে দুই লক্ষ চুরাশি হাজার কৃষক এখন পর্যন্ত পেয়েছে ৮৪৪ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় আমাদের রাজ্যে ৭ বছরে ১৪ লক্ষ ১৪ হাজার ৪৯৭ জন কৃষক পেয়েছে ১০ কোটি ১৭ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা।
মন্ত্রী বলেন,বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সমস্ত কৃষকদের সার্বিক আর্থ– সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে পনেরোদিনব্যাপী এই বিশেষ প্রাক খারিফ মরশুমে সারা দেশে বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান করেছে। ভারত সরকারের কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা সংস্থা, ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদ (আইসিএআর) এবং কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর সম্মিলিতভাবে সারা দেশে এই বিশেষ অভিযান সম্পন্ন করেছে।
মন্ত্রী জানান, এই বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে সারা দেশের সাতশ জেলার দেড় – কোটি কৃষকের কাছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সুফল পৌঁছে দেওয়ার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন দেশের প্রায় ষোল হাজার কৃষিবিজ্ঞানী এবং ২,১৭০টি কৃষি এবং সহযোগী ক্ষেত্রগুলি থেকে আগত আধিকারিকদের দল।
মন্ত্রী বলেন,দেশের ১৪৫ কোটি লোকের খাদ্য এবং পুষ্টির নিরাপত্তা দেওয়া, – ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা এবং প্রাকৃতিক – সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণই ছিল এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। মূলত ছয়টি বিশেষ পরিকল্পনাকে সামনে রেখে এই অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।সেগুলি হলো, কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ কমানো, উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, শস্য বৈচিত্র ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে গুরুত্বারোপ এবং প্রাকৃতিক এবং জৈব চাষে কৃষকদের উৎসাহদান। মন্ত্রী জানান, এই অভিযানে কৃষকদের বোঝানো হয়েছে যে, কৃষিই সমৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিই হাতিয়ার’।কৃষকদের কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও তথ্য পৌঁছে দেওয়া। বিভিন্ন প্রযুক্তি ও চাষ সম্পর্কে অবহিত করা। কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক চাষ পদ্ধতির প্রয়োগ। জৈব চাষ ও প্রাকৃতিক চাষের গুরুত্ব বোঝানো ইত্যাদি নানা বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, এই মেগা কর্মসূচি আমরা শুধু সাফল্যের সাথে শেষই করিনি, আমাদের নির্দিষ্ট টার্গেট অতিক্রম করে গোটা উত্তরপূর্বে বিশেষ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের টার্গেট ছিলো পনেরোদিনে সারা রাজ্যে এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার কৃষকের কাছে পৌঁছানো। আমরা ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ২৬৩ জন কৃষকের কাছে পৌঁছেছি। যার মধ্যে মহিলা কৃষকের সংখ্যা ছিল ৬৬ ২ হাজার ৮০৯ জন। এই অভিযানে আমাদের ৮৬৪টি সভা অনুষ্ঠিত করার টার্গেট এ ছিল, আমরা ৮৭৩টি সভা করেছি ৯৫৬টি ভিলেজ ও পঞ্চায়েতে। প্রতিটি জেলায় । তিনটি করে মোট চরিশটি কষি রথ কৃষি বিষয়ক প্রচার করেছে।
কৃষিমন্ত্রী শ্রীনাথ আরও বলেন, আগে আমেরিকা এবং বিদেশ থেকে চাল না এলে আমাদের খাদ্যের অভাব হতো। বর্তমানে আমরা খাদ্যে স্বয়ম্ভর। বরং আমরা এখন বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভিয়েতনামে চাল রপ্তানি করি। আমরা খাদ্যশস্য রপ্তানি করি ইরাক, সৌদি আরব, ইরান এবং ইউনাইটেড আরব এমিরেটসকে। চাল উৎপাদনে আমরা পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছি।
যদিও ২০২৪-২৫ এ ভারতে খাদ্যশস্যের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে ৩৪৭মিলিয়ন মেঃটন। আমাদের রাজ্যেও আগের থেকে বেশি ফলন হয়েছে।
ত্রিপুরায় বর্তমানে লোকসংখ্যা ৪২ লক্ষ ২২ হাজার।খাদ্যশস্যের চাহিদা ৯ লক্ষ ৫৩ হাজার মেঃ টন। উৎপাদন হয় ৮ লক্ষ ৪৯ হাজার মেঃ টন। ঘাটতি ১ লক্ষ ৪ হাজার মেঃ টন। ২০১৭-১৮ তে চালের চাহিদা ছিল ৮ লক্ষ ২৬ হাজার মেঃ টন। উৎপাদন হয়েছিল ৭ লক্ষ ৭০ হাজার মেঃ টন। ঘাটতি ৫৬ হাজার মেঃ টন।
বর্তমানে চালের চাহিদা ৮ লক্ষ ৭৭ হাজার মেঃ টন।
উৎপাদন হয় ৮ লক্ষ ৩০ হাজার মে: টন। ঘাটতি ৪৭ হাজার মে: টন। বর্তমানে রাজ্যে ৫৮টি ব্লকের মধ্যে ৩০টি ব্লক খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভর। আর তিনটি জেলা সিপাহিজলা, দক্ষিণ ত্রিপুরা এবং গোমতী খাদ্যে স্বয়ম্ভর। ধলাই জেলার ঘাটতি মাত্র ৩ হাজার ১শ ৮২ মে: টন এবং খোয়াইয়ের ঘাটতি মাত্র ৩ হাজার ৩শ ৯২ মে: টন। এই দুইটি জেলা প্রায় স্বয়ম্ভর। আমরা আশাবাদী আগামী খারিফ মরশুমে এবং রবি মরশুমে আমাদের রাজ্যে খুব ভালো ফলন হবে এবং অচিরেই ধলাই এবং খোয়াই জেলা খাদ্যশস্যে স্বয়ম্ভর হবে। মন্ত্রী জানান, আমাদের রাজ্যে খারিফ খন্দে প্রায় ২ লক্ষ ১ হাজার হেক্টর জমিতে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। এই অভিযানের সুফল হিসাবে বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে গড়ে হেক্টর প্রতি ফলন যদি ৫০০ কেজিও বাড়ানো যায়, তবে এ বছর রাজ্যের খাদ্যশস্য উৎপাদন এক লক্ষ মেট্রিকটন বাড়ানো সম্ভবপর হবে। তাহলেই এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য সার্থক হবে বলে কৃষিমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে আইসিএআর, রাজ্য সরকারের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি ও উদ্যান দপ্তরের বিভিন্ন আধিকারিক এবং কৃষিবিজ্ঞানীরা উপস্থিত ছিলেন।সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন রাজ্যের দশ জন উদ্ভাবনী কৃষককে দশ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয় রাজ্য কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে।