August 10, 2025

সরু রাস্তায় বড় স্বপ্ন, বাস্তবতা কোথায়?বিকল্প ছাড়া ফ্লাইওভার, প্রশ্নের ঝড়!!

 সরু রাস্তায় বড় স্বপ্ন, বাস্তবতা কোথায়?বিকল্প ছাড়া ফ্লাইওভার, প্রশ্নের ঝড়!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আগরতলার ব্যবসা কেন্দ্রের বুকে আরেকটি উড়ালপুল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।
অথচ শহরের মূল সমস্যা কোথায়? তার প্রকৃত চিকিৎসা ছাড়াই শুরু হচ্ছে ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্প। ব্যবসায়ীদের গলায় উৎকণ্ঠা। বিশেষজ্ঞরা সরাসরি বলছেন, এই প্রকল্পে শহরের যানজট কমবে না, বরং আরও জটিল হয়ে উঠবে নগর জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। শহরের বাণিজ্যিক মহল এবং ট্রাফিক বিশেষজ্ঞদের গলায় ধ্বনিত হচ্ছে একটাই প্রশ্ন – এই উড়ালপুল আদৌ প্রয়োজনীয় তো?
নেই বিকল্প রাস্তার বন্দোবস্ত।নেই বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনা। পূর্ত দপ্তরে টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রায় গুটিয়ে ফেলেছে। জানা গেছে, আগামী ১৪ আগষ্ট টেন্ডার খোলা হবে। তখন জানা যাবে কোন সংস্থা এই বিতর্কিত প্রকল্পের ভার কাঁধে তুলছে।কিন্তু ততদিনে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অনিশ্চয়তা আর আতঙ্ক।
শহরের হৃদয়স্থল আইজিএম চৌমুহনী থেকে শুরু করে সার্কিট হাউজ সংলগ্ন আরবিআই পর্যন্ত ডবল লেন ফ্লাইওভার এবং ওরিয়েন্ট চৌমুহনী থেকে শুরু হওয়া এক লেনের র‍্যাম্প আরএমএস চৌমুহনীতে গিয়ে মিলবে প্রধান ফ্লাইওভারে। এই পরিকল্পনা যত না শহরবাসীর স্বস্তি আনবে, তার চেয়ে বেশি উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, কাজ শুরু হলে গোটা এলাকা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে।
দোকানপাটে ঠনঠন করবে বাণিজ্য।
এই ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগে আদৌ বৈজ্ঞানিক নাকি অবৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো বিকল্প সড়কের চিন্তা না করেই মূল রাস্তায় নির্মাণ কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত।
এই ফ্লাইওভারে পাঁচটি ৯০ ডিগ্রির তীব্র বাঁক থাকবে।আরএমএস চৌমুহনী, হারাধন সংঘ, উত্তর গেট, কর্ণেল চৌমুহনীতে এক সঙ্গে দুটি বাঁক। এভাবে সংকুচিত রাস্তায় এ ধরনের নির্মাণ পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক। ফ্লাইওভারে এ ধরনের তীক্ষ্ণ বাঁক রিস্ক ফ্যাক্টর বাড়ায় বহু গুণে। গতি নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়, দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। শহরের এমন ব্যস্ত অঞ্চলে এত তাড়াহুড়ো করে এমন একটি অবৈজ্ঞানিক প্রকল্প নেওয়াকে ‘অদূরদর্শিতা’ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুধু ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশনে ‘আধুনিকতা’ ফুটিয়ে তোলা হলেও বাস্তব পরিস্থিতিতে এটি হতে পারে এক মহা বিপর্যয়। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকার বলছে, যানজট নিরসনের লক্ষ্যেই এই ফ্লাইওভার নির্মাণ।কিন্তু প্রকৃত চিত্র বলছে, শহরের এই অঞ্চলে যানজট শুধুমাত্র কর্ণেল চৌমহনী
থেকে হারাধন সংঘ পর্যন্ত ১৫০-২০০ মিটার অংশে। তাও অফিস টাইমে। আরএমএস থেকে বিদুরকর্তায় ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক। সেখানে জ্যামের প্রশ্নই ওঠে না।
তাহলে এই প্রকল্পে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে এই প্রকল্পের যৌক্তিকতা কোথায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণেল চৌমুহনী থেকে হারাধন সংঘের মাঝের সরু রাস্তাটি চওড়া করলেই পুরো সমস্যার সমাধান। এর জন্য দরকার জমি অধিগ্রহণ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। যা অনেক কম খরচে সম্ভব। কোনও বড় নির্মাণ নয়, বরং বুদ্ধিদীপ্ত রিডিজাইনিং-ই সমস্যার আসল সমাধান সম্ভব।
এদিকে প্রশ্ন উঠছে, বিকল্প রাস্তাই নেই, তবে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ কিভাবে হবে? এটাই এখন শহরবাসীর বড় প্রশ্ন। এই ফ্লাইওভার তৈরির জন্য যদি রাস্তাটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হয়, তাহলে কীভাবে মানুষ যাবেন জিবি হাসপাতাল, বিমানবন্দর, সচিবালয়, কৃষি কলেজে, টিআইটি, মোহনপুর, খোয়াই, কমলপুরে?ফায়ার ব্রিগেড হয়ে দুর্গা চৌমুহনীর বিকল্প রাস্তাটিও সরু এবং যানবাহনের চাপে ওভারলোডেড।
অথচ একটি কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া যেত আরো আগেই। বড়দোয়ালী থেকে ফায়ার ব্রিগেড পর্যন্ত উড়ালসেতুর ল্যান্ডিং কের চৌমুহনীতে করলে এবং দুর্গা চৌমুহনী বাজার চওড়া করলে গড়ে উঠত কার্যকর বিকল্প রুট। সেই চিন্তাটুকুও করা হয়নি।শহরবাসীর মধ্যে গুঞ্জন, একটু ধৈর্যই কি ছিল না সরকারের?
আগরতলার পশ্চিম পাশ ঘিরে তৈরি হচ্ছে রিংরোড তথা চার লেন বিশিষ্ট ওয়েস্টার্ন বাইপাস। আমতলি থেকে গোলচক্কর হয়ে এই বাইপাস গিয়ে মিলবে লেম্বুছড়া হয়ে খোয়াই জাতীয় সড়কে। এই ফোর লেন ওয়েস্টার্ন বাইপাস নির্মাণ শেষ হতে দেড়-দুই বছর সময় লাগবে। এরপর যানবাহনের চাপ ৫০ শতাংশ কমে যাবে শহরের উপর থেকে। তাহলে সেই বাইপাস চালু হওয়ার আগেই এত ব্যয়বহুল ফ্লাইওভার বানাতে এত তাড়া কিসের?
এই ফ্লাইওভার কি শহরবাসীর দীর্ঘমেয়াদী স্বস্তি নিশ্চিত করবে?নাকি অদূরদর্শিতার স্মারক হয়ে ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা, ব্যবসায়িক ক্ষতি আর নাগরিক দুর্ভোগের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে? প্রকল্পের পেছনে এত টাকা, এত ব্যস্ততা, অথচ সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের কোনও প্রতিফলন নেই?এখনও সময় আছে। প্রশ্ন শোনা হোক, উত্তর খোঁজা হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *