August 1, 2025

সম্বিত ফিরবে তো!!

 সম্বিত ফিরবে তো!!

কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণভাবেই লক্ষ্য করা গেছে যে, ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অর্থাৎ ইডি বিভিন্ন দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় যথেষ্ট পরিমাণে তৎপর হয়েছে। কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযান থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের আর্থিক দুর্নীতি তথা বেআইনি অর্থ সংযোগের ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইডি বড় ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে গেছে। যদিও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বরাবরই একটি অভিযোগ শোনা গেছে যে, কেন্দ্রে মোদি সরকার আসলে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি রুখতে যতটা না তৎপর তার চেয়ে বেশি সক্রিয় রাজনৈতিকভাবে ইডিকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা। অর্থাৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই যে ইডিকে হাতিয়ার করে বিরোধীদের দমন করা হচ্ছে এই অভিযোগ কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকেই উঠে আসতে শুরু করেছিল। এই ধরনের অভিযোগের যে একেবারেই সারবতা নেই, তেমনটা কিন্তু নয়। বরং বিভিন্ন সময়েই ইডির কাজকর্ম, ভূমিকা এবং সাফল্যের রেকর্ড প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়েছে। চলতি বছরই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক সংসদে একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে ২০১৫ থেকে ২০২৫ এই ১০ বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী, বর্তমান বা প্রাক্তন সাংসদ, বিধায়ক কিংবা কোনও রাজনৈতিক পদাধিকারীর বিরুদ্ধে এই সময়ের মধ্যে ১৯৩টি আর্থিক অপরাধ বা দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা ইডি আদালতে পাঠিয়েছে। অথচ এতগুলো দায়ের করে মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করতে পেরেছে ইডি। এই পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে ইডি’র সাফল্যের খতিয়ানের নিরীখে যথেষ্ট উদ্বেগজনক ও হতাশার। অর্থ মন্ত্রক সংসদে পেশ করা পরিসংখ্যানে অবশ্য স্পষ্ট করেনি, কোন রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক দলের কত জন করে নেতা নেত্রীর বিরুদ্ধে ইডি মামলা নথিভুক্ত করেছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে এবং ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষে মোট ১টি করে মামলায় ইডি অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছে। ২০২২-২০২৩ সালে মোট ৩২টি।কেন্দ্রের প্রদত্ত এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট ইডি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়েই নিজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঘটনা হল ইডি, সিবিআই কিংবা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক পক্ষপাত সুলভ আচরণের অভিযোগ উঠেছে বিরোধীদের তরফে বিভিন্ন সময়ে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী একাধিক সংস্থাকে বিভিন্ন সময়ে অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছে।
এদিন সোমবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এমনই একটি ঘটনায় কার্যত মুখ পুড়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র। ঘটনা হল, জমি বন্টনের ক্ষেত্রে দূর্নীতির অভিযোগে কংগ্রেস পরিচালিত কর্ণাটক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া, তার স্ত্রী পার্বতী এবং শ্যালক মল্লিকার্জুনের বিরুদ্ধে সমন জারি করে ইডি। মহীশূরে অভিজাত একটি এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর নামে ১৪টি ফ্ল্যাট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরেই তদন্তে নামে ইডি। নাম জড়ায় মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার। এই মামলায় মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে এবং তদন্তে সম্মতি দেন রাজ্যপাল। কর্ণাটকের মুডা কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত এই মামলায় ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়াকে ক্লিনচিট দিয়েছে লোকপাল এবং কর্ণাটক হাইকোর্ট। অথচ হাইকোর্ট ও লোকপালের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ইডি। এই মামলাকেই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ইডিকে উদ্দেশ্য করে বলেন- ‘রাজনীতির লড়াইটা রাজনীতিবিদদের লড়তে দিন না। আপনারা রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছেন কেন? আপনারা তো জানতেন সিঙ্গল বেঞ্চ ট্রায়াল কোর্টের রায় বহাল রেখেছে। তাছাড়া মামলা তো এখনো চলছে। এরপরই বিচারপতির কড়া হুঁশিয়ারি আমাদের মুখ খুলতে বাধ্য করবেন না। এরপর আমাদের ইডি নিয়ে কড়া কথা বলতে বাধ্য হব। ইডির কাজের পরিধি নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ এবং মন্তব্য নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জন্য বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। ইডিকে সুপ্রিমকোর্টের এই তুলোধুনো কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের উপরই রোষের প্রকাশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইডির সম্বিত আদৌ ফিরবে কিনা সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *