সভাপতি নির্বাচনে দেরি কেন!!
এক সময়ের আরএসএসের পোস্টার বয় এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। এক কিন্তু সেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের সময় সংঘের সাথে তার সম্পর্ক কি রকম? বলা যায় খুব একটা সুমধুর সম্পর্ক নয়। গত এগারো বছর ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই নরেন্দ্র মোদি গত এগারো বছরে এই কিছুদিন হলো সংঘের সদর দপ্তর নাগপুরে গিয়েছিলেন। বর্তমানে বিভিন্ন প্রান্তে আরএসএসের শতবর্ষ উদ্যাপন চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো বিজেপি বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির সাথে আরএসএসের শীতল সম্পর্কের জন্যই কি বিজেপির নয়া সভাপতি নির্বাচন এখনও থমকে আছে। বিজেপির নয়া সভাপতি কোথায়? বর্তমান সভাপতি জেপি নাড্ডার মেয়াদ তো শেষ হয়ে গেছে প্রায় দুই বছর আগে। তাহলে বিজেপি সভাপতি বাছতে বিজেপির এত দেরি হচ্ছে কেন? তাহলে কি বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে? নাকি আরএসএস এখনও সিগন্যাল দেয়নি বলে বিজেপির নয়া সভাপতি নির্বাচন এখনও থমকে আছে। ২০১৪ সালে বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে আসমুদ্র হিমাচলকে আন্দোলিত করে আরএসএসের পোস্টার বয় ‘হিন্দুত্বের আইকন’ নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। পরের নির্বাচন ২০১৯ সালেও জাতীয়তাবাদের জিগির তোলে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরেন নরেন্দ্র মোদি। ২০২৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ টানা দশ বছর নরেন্দ্র মোদির প্রবল প্রতাপ দেখেছে দেশ। সঙ্গে অমিত শাহ। অর্থাৎ গুজরাট লবির প্রবল দাপটে দেশে বিজেপির অন্দরে বাইরে এমনকী সংঘ পর্যন্ত চুপসে যায়। নরেন্দ্র মোদির কাছে দেশ, সরকার, সংগঠন এমনকী আরএসএস পর্যন্ত নতজানু। আর বিরোধীদের কথা বলে তো লাভ নেই। বিরোধীদের একেবারে বোতলবন্দি করে ফেলেন মোদি। এই অবস্থায় আরএসএসও পর্যন্ত মোদির সামনে টু শব্দটি করতে পারেনি। কেননা তিনি এককভাবে হয়ে উঠেন বিজেপির সর্বোচ্চ নেতা। তিনিই বিজেপি আবার বিজেপি মানেই মোদি। বলা যায়, নরেন্দ্র মোদি হয়ে উঠেন ‘লার্জার দ্যান দ্যা লাইফ’। এককথায় ইন্দিরা গান্ধী যেমনটা হয়ে উঠেছিলেন।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও নরেন্দ্র মোদি- শাহরা ভেবেছিলেন এবার ৪০০ পার হবেই হবে। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো মোদি-শাহকে ঝটকা খেতে হয়। বিজেপি থমকে দাঁড়ালো এসে ২৪০-এ। এখন মোদি-শাহকে ‘বৈশাখী’ নিয়ে চলতে হচ্ছে। একদিকে চন্দ্রবাবু নাইডু, অন্যদিকে নীতীশ কুমার। এতদিন তক্কে তক্কে ছিল সংঘ পরিবার। এতদিন যে সংঘকে পাত্তাই দিতো না মোদি-শাহ, বাগে পেয়ে সংঘও বিজেপির সমালোচনা করতে ছাড়লো না। একারান্তরে মোদির অহঙ্কারের সমালোচনা করলেন খোদ সংঘ প্রধান। সেই থেকে বিজেপির সাথে সংঘের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিলো তা কিছুটা ঘুচাতেও আরম্ভ করলো। তারই প্রভাব পড়ে এসে বিজেপি সভাপতি নির্বাচনেও। মোদি-শাহের আগের মতো প্রবল বিক্রম থাকলে হয়তো কবেই নয়া সভাপতি হিসাবে কোনো ‘পুতুল’কে বেছে ফেলা হতো। কিন্তু আরএসএস ব্যাগড়া দিতেই এবার মোদি-শাহের পক্ষে আর তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জেপি নাড্ডার মেয়াদ শেষ হলেও নয়া সভাপতি বাছাই করতে পারছে না বিজেপি। এর পেছনে যে কলকাঠি নাড়ছে সংঘ তা বোঝতে আর কারোর বাকি নেই। ফলে এতদিন পরেও বিজেপির নয়া সভাপতি উপহার দিতে পারছে না বিজেপি। সংঘঘনিষ্ঠ নীতীন গড়কড়ি কিংবা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথরা সংঘের কাছে ঘন ঘন রিপোর্ট করছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত সংঘের কারণে যে বিজেপি নয়া সভাপতি বাছাই করতে পারছে না তা পরিষ্কার। ততদিন জট লেগেই থাকবে। যতদিন না সংঘ নয়া সভাপতির নামে ছাড়পত্র দেয়। নরেন্দ্র মেদি-শাহদের এখন আরএসএসের মুখাপেক্ষী হওয়া ছাড়া উপায় নেই। অন্তত নয়া সভাপতি বাছাইয়ের প্রশ্নে।