শক্তি সংরক্ষণে ফের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হলো ত্রিপুরা!!
সব দাবিই ফাঁপা!!
জিএসটি কমিয়ে বাজারে প্রাণ সঞ্চারের যে ঢাকঢোল মোদি সরকার সরকার নির্বাচনের মুখে বাজিয়েছে, তা যে চরম ফাঁপা ও বিভ্রম তৈরি ছাড়া আর কিছুই নয়- কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের পিএলএফএস রিপোর্টই তার প্রমাণ। কর কমানোয় নাকি বাড়বে কেনাকাটা, চাঙ্গা হবে বাজার, ফলে পাল্টাবে কর্মসংস্থানের চিত্র এই সরকারী ফর্মুলা যেন একেবারেই বালির বাঁধ প্রমাণিত হয়েছে। কারণ বাস্তবে মানুষের আয় না বাড়লে জিএসটি কমানোয় কীই বা ফলাফল হবে? দাম কমেনি, কেনাকাটা বাড়েনি, আর কর্মসংস্থানের গ্রাফ তো উলটোটাই দেখাচ্ছে- তীব্র নিম্নমুখী।
পিএলএফএস রিপোর্ট বলছে,দেশে বেকারির হার লাগাতার বাড়ছে।শহরে তার গতি আরও ভয়াবহ। অক্টোবরে ১৫ বছরের বেশি বয়সি যুবসমাজের বেকারির হার ৬.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ শতাংশ হয়েছে। আর শহর-গ্রাম মিলিয়ে সামগ্রিক বেকারির হার দাঁড়িয়েছে ৫.২ শতাংশে আগষ্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর একই স্তরে আটকে থাকা এই হারই প্রমাণ করে যে সরকার যা-ই প্রচার করুক, কর্মসংস্থানের বাস্তবচিত্র বদলানোর প্রচেষ্টা মোটেই ফলপ্রসূ হয়নি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক ছবি যুব সমাজের। সেপ্টেম্বর মাসে ১৫ থেকে ২৯ বছরের যুবকদের বেকারির হার বেড়ে হয়েছে ১৫ শতাংশ। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার ১৭.৮ শতাংশ দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা যে কর্মসংস্থানে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে, তার থেকে ভয়ঙ্কর আর কী হতে পারে? পুরুষদের হারও কম নয় – ১৩.৯ শতাংশ। তাহলে সরকারের আশ্বাস আর বাস্তবের মধ্যে এত বিশাল ফারাক কেন? কারণ খুব স্পষ্ট – সরকার যাকে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন বলে চালায়, তা অন্ত:সারশূন্য। জিএসটি কমানোয় বাজার চাঙ্গা হওয়া তো দূরের কথা, নিত্যপণ্যের দামেই কোনও হেরফের হয়নি। সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি, ফলে উৎসবের মরশুমেও কেনাকাটার গতি বাড়েনি। বিক্রি না বাড়লে উৎপাদন ও সেবা খাতে নতুন কাজ কোথা থেকে তৈরি হবে? এটাই স্বাভাবিক অর্থনীতির নিয়ম, যা সরকার বুঝতে না চায়, বা ইচ্ছাকৃতভাবেই উপেক্ষা করে। এর চেয়েও বড় সত্য- মোদি জমানায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ক্রমশ কমে যাচ্ছে। কেন্দ্রের নিজস্ব মাসিক পিএলএফএস রিপোর্টই তা জানাচ্ছে। যে অসংগঠিত খাত দেশের ৯০ শতাংশ শ্রমিককে কাজ দেয়, সেই খাত এখন সবচেয়ে করুণ অবস্থায়। নোটবন্দির ধাক্কা, জিএসটির জটিলতা, আবার করোনাকালীন লকডাউনের বহুমাত্রিক ক্ষত- সব মিলিয়ে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলি এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বহু কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এনএসও-র পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে – জানুয়ারী-মার্চে অসংগঠিত শিল্পে কর্মসংস্থান ছিল ১৩.১ কোটি, আর এপ্রিল-জুনে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২.৯ কোটিতে।অর্থাৎ মাত্র এক ত্রৈমাসিকে প্রায় এক কোটি শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। এটি শুধুই সংখ্যা নয়, প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে একটি পরিবার, একটি জীবনের সংকট, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা।
অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের নেই স্থায়ী কর্মসংস্থান, নেই কোনও সামাজিক সুরক্ষা যে কোনও সময় কাজ হারানোর সম্ভাবনা তাদের জীবনের অংশ। অথচ এই দুর্বল, নিরাপত্তাহীন খাতই ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এই মেরুদণ্ড ভেঙে দিলে দেশের সামগ্রিক কর্মসংস্থানই ভেঙে পড়বে- এ কথা সরকার জানে, কিন্তু জ্ঞানে বা অজ্ঞানে তাতে কোনও পরিকল্পিত সমাধান নেয় না। বরং নির্বাচনের মুখে জিএসটি কমানোর মতো কসমেটিক ঘোষণা করে জনমতকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা চলে।
বাস্তবতা হলো- অর্থনীতি পলিসি-শোরগোল দিয়ে নয়, মানুষের আয় বৃদ্ধির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। কর্মসংস্থান তৈরি হয় স্থায়ী বিনিয়োগ, কার্যকর শিল্পনীতি, ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোগকে বাঁচানোর মতো বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এই জায়গাগুলোতে সরকার যে ভয়ঙ্করভাবে ব্যর্থ, তা এখন পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। যুবসমাজ কর্মহীন, মহিলাদের কর্মসংস্থানে প্রবেশ আরও কঠিন, অসংগঠিত খাত ধুঁকছে, আর সরকারী প্রচার ‘বাজার চাঙ্গা, কর্মসংস্থান বেড়েছে’ – এ যেন এক বিমূর্ত প্রচারণা ছাড়া কিছুই নয়। যে দেশে ৯০ শতাংশ শ্রমিক অসংগঠিত খাতে, সেই দেশকে জিএসটির খেলায় আটকে রেখে উন্নয়নের গল্প লেখা যায় না। এবং তা পারলেও তা হবে শুধুই রাজনৈতিক গল্প, কর্মসংস্থানের বাস্তব ছবি নয়। সরকারের প্রচার নয়, রিপোর্টই সত্য বলে- মোদি জমানায় কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষমতা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে পড়ছে, আর সেই শূন্যতা সবচেয়ে বেশি চেপে বসছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর, যুবসমাজের উপর, দেশের শ্রমশক্তির উপর।