August 1, 2025

সন্ত্রাস সন্ত্রাস সন্ত্রাস!

 সন্ত্রাস সন্ত্রাস সন্ত্রাস!

সন্ত্রাস সন্ত্রাস আর সন্ত্রাস। চতুর্দিকে ‘সন্ত্রাস’ নামক এই একটি শব্দে আম জনতার কান একেবারে ঝালাপালা । বাজার হাট থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, বাড়ির রান্নাঘর থেকে পাড়ার আড্ডায় – সর্বত্র কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এই একটি শব্দ ‘সন্ত্রাস’।শয়নে-স্বপনেও জায়গা করে নিয়েছে সন্ত্রাস। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, সন্ত্রাস শব্দটি এখন হটকেক ! আমজনতা এই অভিশপ্ত শব্দটি ভুলে যেতে চাইলেও, ভুলতে দেওয়া হচ্ছে না। নানাভাবে, নানা উদ্যোগে, নানা কায়দায় বারবার মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, মানুষের মগজে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।এ নিয়ে আমজনতার মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি অনেকটা নামকরা কোনও কোম্পানির প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনের মতো পর্যায়ে চলে গেছে বলে মনে করছেন অনেকে। প্রায় প্রতিটি কোম্পানি যেমন ঘন্টায় ঘন্টায় বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ঠিক রাজ্যে সন্ত্রাস বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বারবার সন্ত্রাস-কেই মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কথায় আছে, কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। সেটা খাওয়ার জিনিসই হোক বা অন্যকিছু। সবকিছুই সঠিক পরিমাণে হলে, তাতে আর ভয় বা চিন্তার কিছু থাকে না।সবথেকে বিস্ময়কর ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, রাজ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ভোট গণনার পর সন্ত্রাসের আশঙ্কা করে সব থেকে বেশি বাজার গরম এবং মানুষের মগজধোলাই যারা করছে, তারাই কিন্তু এই সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এই রাজ্যের রাজনীতিতে সন্ত্রাস ও হিংসার জন্ম দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। এরাই নিজেদের স্বার্থে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মগজধোলাই করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করেছে। এখনও এই সংস্কৃতি অব্যাহত। রাজনৈতিক দলগুলিই পরিবারে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিভেদের বীজ বপন করেছে। সব থেকে মজার বিষয় হচ্ছে, এ রাজ্যে আজ পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা বা নেত্রীর সন্তানকে দেখা যায়নি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে। নিজেদের সন্তানদের এসব হিংসা, হানাহানির ঘটনায় জড়ানোর জন্য উস্কাতে দেখা যায়নি। নেতা-নেত্রীর সন্তানেরা থাকুক শতযোজন দূরে, দুধে-ভাতে, নিরাপদ আশ্রয়ে। আর সন্ত্রাসে লিপ্ত হোক সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। রাজনীতির আবেগকে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের ব্যবহার করে আসছে। এটাই বাস্তব। এটাই ঘটনা।২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার সন্ত্রাস নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হচ্ছে। খুব বেশি চর্চা হচ্ছে। এবার তো নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত ময়দানে নেমেছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে। একেবারে বুথে বুথে শান্তিসভা ও সর্বদলীয় বৈঠকের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন, যা রাজ্যের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এর আগে কখনও দেখা যায়নি নির্বাচন কমিশনকে এই ভূমিকা নিতে। উদ্যোগ মহৎ-এ নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ আরও চার-পাঁচ দশক আগে শুরু হলে হয়ত আজ এই দিন দেখতে হতো না। ‘রাজনৈতিক সন্ত্রাস’ হয়ত এই রাজ্যে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতো না। এই রাজ্যের কলঙ্কিত ও অভিশপ্ত- ঐতিহ্য ও পরম্পরা হয়ে উঠেতো না। যাই হোক, দেরিতে হলেও এই উদ্যোগ শুভ – এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হলো অন্য জায়গায়। রাজনৈতিক সন্ত্রাস নিরসনে রাজনৈতিক দল ও নেতা নেত্রীরা কতটা আন্তরিক ? এটাই হচ্ছে সবথেকে বড় প্রশ্ন। যদি রাজনৈতিক দলগুলি প্রকৃত অর্থেই আন্তরিক হয় তাহলে সন্ত্রাস এমনিতেই বিনাশ হয়ে যাবে। এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *