August 1, 2025

সত্য বলার জন্য অপেক্ষা!!

 সত্য বলার জন্য অপেক্ষা!!

সাম্প্রতিক কিছু মাস ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভারত সাসম্পর্কিত সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে একের পর এক চোখ ধাঁধানো খবর গোটা বিশ্বের সামনে যেভাবে প্রকাশ করে চলেছেন তাতে গোটা ভারতীয়দের কাছেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী একটি রাষ্ট্রের প্রধান। কিন্তু তিনি যা বলেন, সেটা যে সবসময় বিশ্বাস করা যায়, বিষয়টা তত সহজ নয়। অথচ দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেওয়ার পরপরই বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প যে সমস্ত বক্তব্য পেশ করে চলেছেন, বিশেষ করে বিগত মাস তিনেক ধরে ভারত ইস্যুতে ট্রাম্প যেভাবে তার অবস্থান এবং পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছেন তা শুধু সংবেদনশীলই নয়, যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে জোর জল্পনা, সংশয় থেকে যাচ্ছে। কেননা ওয়াশিংটন পোস্টের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রথম মেয়াদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ট্রাম্প মোট ৩০,৫৭৩ বার মিথ্যা কথা বলেছিলেন, অর্থাৎ যেটা প্রতিদিন গড়ে ২১টি মিথ্যা কথা বলার শামিল। কিন্তু যেহেতু বর্তমান যুগে কেউই সত্যবাদী যুধিষ্টির নন, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে এই অমূল্য বিষয়টি প্রত্যাশা করাটাই ভুল, সেখানে যারা ট্রাম্পের আদ্যোপান্ত জানেন এবং বিভিন্ন তথ্যসূত্রে তার সম্পর্কে জানেন, তারা নিশ্চয়ই ট্রাম্পের বক্তব্য যে ১০০ ভাগ খাঁটি একথা বিশ্বাস করবেন না। কিছু প্রশ্ন হল, ট্রাম্প যখন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক কথা বলে চলেছেন, অথচ যে কথাগুলো ট্রাম্পের তরফে ঘোষণা দেওয়ার কথা নয়-তখন পৃথিবীর শক্তিশালী একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে তার বক্তব্যকে একেবারে হেলাফেলা করাও উচিত হবে না। বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতকে ঘিরে পরিস্থিতি যেভাবে অবিশ্বাস্যরকম উত্তপ্ত অবস্থায় চলে গিয়েছিল, তখন কওয়া নেই বলা নেই আচমকা চারদিনের মাথায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অনাক্রমণ তথা শান্তিচুক্তির কথা ঘোষণা হয়ে গেল। আর এই ঘোষণাটি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে না হয়ে ঘোষণা করে ছিলেন খোদ ট্রাম্প। বলা হল, ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত পারমানবিক যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছিল। কিন্তু দুই দেশকে অনেক বেশি বাণিজ্যের সুযোগ করে দেবেন এই মধ্যস্থতার টোপ দিয়ে এই সর্বশক্তিমান ভদ্রলোক ভারত-পাকিস্তানকে সম্ভাব্য পারমানবিক যুদ্ধ থেকে বিরত রাখলেন। শুধু একবার দুবার নয়, অন্তত ১২ বার বিভিন্ন মঞ্চে ট্রাম্প নিজের কৃতিত্বের সপক্ষে এই প্রচার করে গেলেন। যদিও কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ১৭ জুন যখন মোদি কানাডা পৌঁছলেন, তখন ট্রাম্প আমেরিকা ফিরে গেছেন। সেখানে দুই নেতার মধ্যে ফোনালাপে প্রথমবার ভারত যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা নিয়ে ট্রাম্পের দাবি অস্বীকার করলেন। যদিও দিল্লীর তরফে প্রচারিত বিবৃতির পর তথাকথিত ফোনকলের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আবার ট্রাম্প পুনরাবৃত্তি করে জানালেন তিনিই ভারত-পাক যুদ্ধ থামিয়েছেন।পরদিন হোয়াইট হাউসে পাক সেনাপ্রধানকে মধ্যাহ্ন ভোজনে আমন্ত্রণ জানালেন ট্রাম্প।এরপরেও সব মিলিয়ে মোট ২২ বার ট্রাম্প ভারত-পাক যুদ্ধবিরতির জন্য নিজের কৃতিত্বের গান গেয়ে গেলেন। কিন্তু ভারতের তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এরপরেও ভারত সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে যেকোনো বড় ঘোষণা বিশ্বের দরবারে যিনি প্রথম প্রচার করছেন তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নন, এক্ষেত্রেও ভারতীয় তথ্যের সর্বময় কর্তা হিসাবে বিশ্বকে জানাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাস্ট। ট্রাম্প গোটা বিশ্বের সামনে ভারতের জন্য সেটা সবচেয়ে হটকারী তথ্য, সেই ভারত-পাক সংঘাতে ৫টি জেট বিমান ভূপাতিত হওয়ার খবরও প্রকাশ্যে প্রচার করলেন তিনি। প্রশ্ন হলো, ভারতের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা তথা প্রতিরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে যদিও কোনো তথ্য দেশ বা বিশ্বকে জানাতে হয় সেটা সবার আগে জানানোর দায়িত্ব ও অধিকার দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। অথচ ভারত সরকারের যেখানে কোনো বিবৃতি বা বক্তব্য নেই, যেখানে দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল স্বয়ং জানিয়েছেন, অপারেশন সিন্দুরে ভারতের ১ টি কাঁচ ভাঙার ঘটনাও ঘটেনি, সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কোন এক্তিয়ারে বিশ্বের সামনে ঘোষণা দেন যে, ভারত-পাক সংঘাতে ৫টি জেট ভূপাতিত হয়েছে। যদিও ৫ টি জেটের মধ্যে কোন দেশের কয়টি যুদ্ধবিমান তা তিনি উল্লেখ করেননি। কিন্তু নিঃসন্দেহে ট্রাম্পের এই বয়ান দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হানিকর। আর এখানেই দেশের বিরোধী দলগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারটা আসলে কে পরিচালনা করেন-নরেন্দ্র মোদি নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুর্ভাগ্যের ঘটনা হল, একদিকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত এবং অপরদিকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ভারত সংশ্লিষ্ট অত্যন্ত স্পর্শকাতর, গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধান কেউ নীরব। কেউ মুখর হয়ে উঠেছেন, যা দেশবাসীর পক্ষে চরম অস্বস্তির এবং উদ্বেগের। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কেউই আধুনিককালের হরিশচন্দ্র নন। তাই দেশের স্বার্থেই কেন্দ্রীয় সরকারকে তার অবস্থান জানাতে হবে এবং প্রতিটি নাগরিকের এই বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার অধিকার রয়েছে। সত্যের জন্য প্রতীক্ষার পাশাপাশি সত্যের মুখোমুখি আমাদের হতে হবে। তাই প্রকৃত সত্য কী-তা জানার জন্য উন্মুখ সকলেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *