সচেতনতাই কাম্য!!

 সচেতনতাই কাম্য!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ত্রিপুরা রাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে যানের সংখ্যা অনেক বেশি।সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে জানা গিয়েছিলো যে, প্রতি পাঁচ ব্যক্তিতে একটি যানবাহন রয়েছে এ রাজ্যে।ভারতবর্ষের অনেক রাজ্যে এত যানবাহন নেই যতটা ত্রিপুরায় রয়েছে অন্তত জনসংখ্যার তুলনায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাস্তার উপর চাপ বাড়ছে। শহরে বেরোলেই শুধু যানবাহন আর যানবাহন। রাজধানী আগরতলায় তাই এখন হাঁটাচলা করাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মফস্সল শহরগুলিতেও তুলনামূলক যানবাহন অনেক বেড়েছে। এই যানবাহনের মধ্যে দ্বিচক্রযানই সবচেয়ে বেশি। এছাড়া রয়েছে ছোট ত্রিচক্রযান যেমন অটো, টমটম, ব্যাটারিচালিত ত্রিচক্রযান, ইলেকট্রিক চালিত ত্রিচক্রযান ইত্যাদি। চার চাকার গাড়িগুলির মধ্যে প্রাইভেট কার মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে এ রাজ্যে। সমস্ত কিছুর প্রভাব পড়েছে এসে রাস্তায় অর্থাৎ সড়কে। এদিকে যান বিক্রির ফলে রাজ্য সরকারের রাজস্ব দারুণভাবে বেড়েছে, তেমনি রাস্তায় যান দুর্ঘটনার সংখ্যাও ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। ফলে অনেক মানুষের প্রাণহানি যেমন ঘটছে তেমনি অনেকেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে আহত হচ্ছেন, হাত-পা ভাঙছে, মাথা ফাটছে, কোমর ভাঙছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
সম্প্রতি রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে যে, যে সমস্ত সচেতন নাগরিকরা দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে তাদের পঁচিশ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার।শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তিদের কোনও আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে না।এই প্রকল্পটির নাম হচ্ছে রাহ-বীর প্রকল্প। অর্থাৎ রাস্তার বীর মানে সড়কে আহত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিকে বীরের মর্যাদা দেওয়া হবে।তাকে পঁচিশ হাজার টাকা দেওয়া হবে এবং শংসাপত্রও দেওয়া হবে।এই ধরনের প্রকল্প আগেও ছিল।জেলাশাসক মারফত এই টাকা পাওয়া যেতো।কিন্তু এ ধরনের সাহায্য কেউ পেয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
বেশিরভাগ মানুষই পথচলতি কোনও মানুষ দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে এখন পাশ কাটিয়ে যেতেই বেশি পছন্দ করে। কেননা, যদি কোনও পথচারী কোনও দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন তাকে নানা ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়।বিশেষ করে পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয় প্রত্যক্ষদর্শী বা সাক্ষী হিসাবে।তাই এখন বেশিরভাগ মানুষই রাস্তায় দুর্ঘটনা দেখলে পাশ কাটিয়ে চলে যান। এখন দমকলের গাড়িই বেশিরভাগ দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। যদিও ঘোষিত প্রকল্প রাহ-বীর সচেতন মানুষকে উৎসাহিতই করবে। যদি সত্যি সত্যিই মানুষকে সাহায্য করার বিনিময়ে কোনও ব্যক্তি যদি সরকারী তরফে পঁচিশ হাজার টাকা সাহায্য পান এবং শংসাপত্র পান তাহলে তা খুবই দারুণ ব্যাপার, যদিও এক্ষেত্রেও নানা ঝক্কি ঝামেলা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নানাবিধ কার্য করতে হবে। জেলাশাসকগণ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বহুবার এ ধরনের আবেদন নিবেদন করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কেউ এই ধরনের আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন বলে প্রচার নেই।
সম্প্রতি এ রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে রাহ-বীর পুরস্কারের কথা রাজ্যবাসীকে জানান। তিনি এও জানান যে, রাহ-বীর পুরস্কার একজন বছরে সর্বোচ্চ পাঁচবারও পেতে পারেন এবং জাতীয় ক্ষেত্রেও পেতে পারেন পুরস্কারস্বরূপ এক লক্ষ টাকা। সবকিছুরই উদ্দেশ্য হচ্ছে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। জনগণ সচেতন হলে তবেই তো মানুষ এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো সরকারের এই ঘোষণায়ও মানুষ কি এগিয়ে আসবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত সঙ্কটাপন্ন ব্যক্তিকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে? কেননা অনেক দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে যদি সঠিক সময়ে হাসপাতালে নেওয়া যায় তাহলে হয়তো তার জীবন বাঁচানো অনেক সময় সম্ভব হয়ে উঠে। তাই রাজ্য সরকারের এই প্রয়াস। তবে এর প্রচার ও প্রসার দরকার। মানুষ যত বেশি এ বিষয়ে জানবে ততই ভালো। এটা কাগজেপত্রে থাকলে কিছু হওয়ার নয়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তির সহায়তায় মানুষ এগিয়ে এলে তবেই এই প্রকল্পের সার্থকতা আসবে,এই ধরনের প্রচারের সার্থকতা আসবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.