August 2, 2025

সংঘাতে মূল্যবৃদ্ধির ছ্যাঁকা!!

 সংঘাতে মূল্যবৃদ্ধির ছ্যাঁকা!!

ইরান-ইজরায়েল সংঘাত,দিন যত যাচ্ছে গোটা বিশ্বের জন্য ততই অশনি সংকেত হয়ে সামনে ধরা দিচ্ছে।এখনও পর্যন্ত ইরান-ইজরায়েলের পারস্পরিক হানাদারি ও আক্রমণকে যুদ্ধ হিসাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও,এই লড়াই যে মহাসংঘাতকে ছাড়িয়ে গেছে তা অবশ্যই বলা যায়।প্রায় আট দিন অতিক্রান্ত হয়েছে উভয়ের সংঘাত। কতদিন এই লড়াই স্থায়ী হবে, নাকি বড়সড় যুদ্ধের দিকে তা ছড়িয়ে পড়বে- এই ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়ার মতো অবস্থায় আপাতত কেউই নেই। তবে উভয় দেশের সংঘাত, বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থ ব্যবস্থায় অচিরেই বড়সড় ছায়া ফেলতে চলেছে এর আভাস ক্রমেই পরিসস্ফুট হতে চলেছে। বিশেষ করে এই আক্রমণ ও হানাদারি যত বাড়বেই, ততই তেল ও গ্যাসের আমদানি ও বাণিজ্য ব্যবস্থার উপর বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে।
কারণটা হলো ইরানের ভৌগোলিক অবস্থান।ইরান বিশ্ব মানচিত্রে এমন একটা জায়গা দখল করে আছে, সেখানে একদিকে ইউরোপের সঙ্গে, অপরদিকে আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যবর্তী ক্ষেত্র হিসাবে এশিয়ার সংযোগ রক্ষাকারী এলাকা। তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, ইরানের যেখানে অবস্থান, এর একদিকে রয়েছে কাস্পিয়ান সাগর, আর উল্টোদিকে আছে পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগর।এই দুই উপসাগরের মাজখানে দিয়ে একটি সামুদ্রিক রুট রয়েছে, এর নাম হরমুজ প্রণালী। পৃথিবীতে যতগুলি সমুদ্ররুটে যোগাযোগ ও পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়,এর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক রুট হল এই হরমুজ প্রণালী।পৃথিবীতে যতগুলি সমুদরুটে যোগাযোগ ও পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়,এর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক রুট হল এই হরমুজ প্রণালী।পৃথিবীতে প্রতিদিন যদি ৫টি তেলের ব্যারেল বিভিন্ন প্রান্তে জলপথে পাড়ি দেয়, তাহলে এর একটি এই হরমুজ প্রণালী দিয়ে যেতে হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই সমুদ্র পথে প্রতিদিন ২ কোটি ব্যারেল জ্বালানি তেল যাতায়াত করে। যার আর্থিক মূল্য ৬০ হাজার কোটি ডলার। আর এই সমুদ্র জলপথ ঘিরেই ঘুম উড়ে গেছে বিশ্বের বহু দেশের।এই রুট দিয়ে তেল রপ্তানি করে বেশিরভাগই সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, কাতার, আরব আমিরশাহি। আর এই তেলের বড় অংশই আমদানি করে চিন, ভারত, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং আরও বেশ কিছু দেশ।এই হরমুজ প্রণালীর একটা বড় এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইরানের। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে ইরান এই প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এই হুমকি অনেকটা পারমাণবিক অস্ত্রে স্বয়ম্ভর কোনো রাষ্ট্রের চোখ রাঙানির মতোই। ইরান চেষ্টা করলেও এই প্রণালী দিয়ে তেলবাহী জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে রুটটি বন্ধ করে দিতে পারে। আর ইরান এই প্রণালী বন্ধ করে দিলে শুধু এশিয়া নয়, বিশ্বের বিস্তীর্ণ এলাকায় জ্বালানি তেলের অভূতপূর্ব সংকট দেখা দেবে। মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম লাফিয়ে বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। তেলের মূল্য বৃদ্ধি মানেই তা সমস্ত ধরনের আমদানী রপ্তানির পণ্যের উপর প্রভাব ফেলবে।নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সমস্ত জিনিসের দাম হবে আকাশছোঁয়া।যদিও বেশকিছু দেশ অনেক আগে থেকে হরমুজ প্রণালী কোনোদিন বন্ধ হতে পারে আশঙ্কায় বিকল্প রুট তৈরি করে রেখেছে। কিন্তু সেটা মোট চাহিদার ১০-১৫ ভাগের বেশি পূরণ করতে পারবে না। এটাই এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের সামনে বড় আশঙ্কা ও ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই ইজরায়েল ইরানের তেলখনির উপর মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এবার ইরান-ইজরায়েলের চলমান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে জড়াবে কিনা সেই সিদ্ধান্তটি আপাতত ২ সপ্তাহের জন্য ট্রাম্প ঝুলিয়ে রাখায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অমান্য কমেছে। কিন্তু আগামী দিনে এই তেলের দাম যে ঊর্ধ্বগতিতে ছুটবে সেটা প্রায় সব দেশই স্বীকার করে নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই ইরান-ইজরায়েল দ্বন্দ্বের জেরে অপরিশোধিত তেলের সরবরাহে টান পড়তে পারে এই আশঙ্কায় ভারত সহ বিভিন্ন দেশ বিকল্প নিয়েও ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে। তবে উদ্বেগের হলো, শুধু অপরিশোধিত তেলই নয়, এই পথেই কাতার থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসও আসে ভারত।হরমুজ প্রণালীতে আঘাত এলে লম্বা পথে জাহাজের খরচ বাড়বে, বাড়বে ব্যারেল প্রতি তেলের দাম।কিন্তু একই সাথে জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা লাগলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।এমনিতেই রুশ ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে লোহিত সাগরের পরিবর্তে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ভারতে পণ্য ও তেল আমদানিতে পরিবহণ খরচ বেড়েছে। এবার নতুন চিন্তা বাড়াচ্ছে হরমুজ প্রণালী। একেই হয়তো বলে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *