August 2, 2025

শীতের পড়ন্ত বিকেলে পূর্ব আকাশে রহস্যময় আলো ঘিরে চাঞ্চল্য কলকাতায়

 শীতের পড়ন্ত বিকেলে পূর্ব আকাশে রহস্যময় আলো ঘিরে চাঞ্চল্য কলকাতায়

ঘড়িতে তখন ঠিক পৌনে ছটা। কলকাতার পূর্ব আকাশের একটু দক্ষিণ দিকে দেখা গেল এক উজ্জ্বল আলোর ছটা। যে আলোর ছটা শুধু কলকাতা থেকে নয়, দেখা গিয়েছে
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পূর্বও পশ্চিম
মেদিনীপুর থেকে শুরু করে বর্ধমান বা উত্তর ২৪ পরগণা থেকেও। ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল বসিরহাট এলাকা থেকেও এই আলো দেখা গিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা
জানিয়েছেন। কপি প্রেসে যাওয়া পর্যন্ত জানা যায়নি বাংলাদেশ থেকে এই আলো দেখা গিয়েছিল কিনা। যাইহোক হঠাৎ শীতের পড়ন্ত বিকেলে এই উজ্জ্বল আলোকে ঘিরে রহস্য
ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। বেশ কিছু উৎসুক ব্যক্তি একে ‘ইউফো’ বলেও চিহ্নিত করতে পিছপা হচ্ছেন না। শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনের
পরিধিও ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। বিকেল পঁচটার পর থেকেই
কমতে শুরু করে সূর্যের আলো।
কলকাতার বিড়লা তারামণ্ডলের
তরফ থেকেও ঘটনার সত্যতা
স্বীকার করে জানানো হয়েছে,
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা
থেকে পৌনে ছ’টার আশপাশে অর্থাৎ
সন্ধ্যা নামার ঠিক পরই এই আলো
দেখতে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের
বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা। কেউ
বলছেন কয়েক মুহূর্তদেখা গিয়েছে
ওই আলো, কেউ বলছেন আকাশে
প্রায় মিনিট তিনেক ধরে এই আলো
চোখে পড়েছে। অনেকেই দৃশ্যটি
মোবাইল বন্দিরও চেষ্টা করেছেন।
অনেকেই ছবি তুলে সমাজমাধ্যমে
পোস্ট করেও দিয়েছেন।
যারা ওই দৃশ্য চোখে দেখেছেন,
তারা জানিয়েছেন, আলোর তীব্রতা
ছিল অত্যন্ত বেশি, দেখতে অনেকটা
সার্চলাইটের মতো। আলোর ফোকাস
ছিল ওপরের দিকে। অন্ধকার আকাশ
রীতিমতো আলোকিত হয়ে যায়
কয়েক মিনিটের জন্য। সমাজমাধ্যমে
ওই সব ছবি চোখে পড়ার পর থেকেই
নানা জল্পনার কথাও উঠে আসছে ।
কেউ বলছেন, হতে পারে উল্কাপাত।
আবার কেউ মনে করছেন ক�োনও
বিমানে আগুন লেগে গিয়ে থাকতে
পারে। তবে এখনও পর্যন্ত আলোর
উৎস সম্পর্কেক�োনও স্পষ্ট ধারনা
পাওয়া যায়নি।
কলকাতার ইনস্টিটিউট অব
অ্যাস্ট্রো নমি স্পেস অ্যান্ড আর্থ
সায়েন্সের ডিরেক্টর দেবী প্রসাদ
দুয়ারীর ‘দৈনিক সংবাদ’কে জানিয়েছেন,ছবি দেখে তাঁর মনে
হয়েছে, এটি ক�োনও উল্কাপাত
নয়। কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন,
‘উল্কাপাতে সাধারণত এত তীব্র আলো
দেখতে পাওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া
উল্কাপাত হয় কয়েক মুহূর্তের জন্য,
তাই এতগুলি জায়গা থেকে একসঙ্গে
প্রায় তিন মিনিটের জন্য সেই দৃশ্য
দেখতে পাওয়া সম্ভব নয়।’
এর আগে চলতি বছরের ১৩
সেপ্টেম্বর ঠিক একই রকম আলোর
ছটা দেখতে পাওয়া গিয়েছিল
লক্ষ্ণৌয়ের আকাশে। তখনো পড়ন্ত
বিকেলে আচমকাই আলোর মেলা
ঘিরে রহস্য বেড়ছিল। সেদিন সন্ধ্যা
সওয়া ৭টা নাগাদ হঠাৎই একসঙ্গে
একাধিক আলো এক লাইনে ভেসে
ভেসে এগিয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল।
রাতের আকাশে ৫১টি রহস্যময় ওই
আলো ঘিরে ক�ৌতূহল এখনও কমে
িন। সেদিন‌ প্রথম ওই আলোর এই
বিন্দু দেখা গিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের
মাহিলাবাদে।
তিন মাসের মধ্যেই ফের
আলোর ঝলকানি দেখে অনেকেই
মনে করছেন এটি ভিন্‌গ্রহীদের যান।
সেপ্টেম্বর মাসে দেখা মিলেছিল
আলোর এক রেখার। আর ডিসেম্বর
মাসে দেখা মিলল সার্চলাইটের মত
উজ্জ্বল আলো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে
নামতেই এই নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে
যায় আম নাগরিক থেকে শুরু করে
বৈজ্ঞানিক মহলে। বিমানবন্দরেও
বারবার ফোন আসতে শুরু করে
ক�োথা থেকে এলো এই আলো।
তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানে সন্দীপ
চক্রবর্তী মনে করছেন পৃথিবীর খুব
কাছাকাছি কক্ষপথে থাকা উপগ্রহের
ক�োন একটি অংশ ভেঙে গিয়ে পৃথিবীর
বায ়
ুমণ্ডলে প্রবেশ করছিল। আর
বায ়
ুমণ্ডলের প্রবেশের সময় উপগ্রহের
ওই ভাঙা অংশের সঙ্গে বায ়
ুর ঘর্ষণে
আগুন ধরে যায় স্বাভাবিকভাবেই।
উজ্জ্বল আলোয় পুড়তে শুরু
করে ওই উপগ্রহের ভগ্নাবশেষ।
আলোর গতিপথ বিশ্লেষণ করে
ইন্ডিয়ান অ্যাস্ট্রো নমিক্যাল সোসাইটি
জানিয়েছে, উত্তরের দিকে এগিয়ে
গিয়ে ক্রমশ হারিয়ে গিয়েছে আলোর
ওই বিন্দু।
সন্দীপ বাবুর মতে মহাকর্ষশক্তির
প্রভাবে ক্রমশ নিচের দিকে নামছিল
উপগ্রহের ভগ্নাবশেষ। কিন্তু পৃথিবীর
বায ়
ুমণ্ডলের যত কাছাকাছি এসেছে
ততই তার ঘর্ষণে উপগ্রহটি পুরোপুরি
পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। তার ফলে
আর ওই আলোর ছটা দেখা যায়নি।
তবে এই নিয়ে এখনো র্বিজ্ঞানীদের
মধ্যে চর্চা চলছে জোর কদমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *