August 4, 2025

শব্দে নয়, আজও ইশারায় কথা বলে ইন্দোনেশিয়ার গ্রাম।

 শব্দে নয়, আজও ইশারায় কথা বলে ইন্দোনেশিয়ার গ্রাম।

একবিংশ শতাব্দীতে, তুমুল ডিজিটাল সভ্যতায় আজও ভাষা কিংবা শব্দেও নয়, আজও ইশারায় কথা বলে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের উত্তরে অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম। গ্রামের নাম বেংকালা। পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ছোট্ট গ্রামে প্রায় তিন হাজার মানুষ বসবাস করেন। এই গ্রামের সকলেই খুব দরিদ্র। এই গ্রামের প্রায় হাজার তিনেক বাসিন্দা একে অপরের সঙ্গে যে সাংকেতিক ভাষায় কথা বলেন সেটির নাম ‘কাতা কোলক’। এই গ্রামের সকলেই বধির নয়, তবে অধিকাংশ বাসিন্দাই মূক-বধির হওয়ার সকলেই ‘কাতা কোলক’ সংকেতে একে অপরের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। গ্রামে এটাই মানুষের মধ্যে যোগাযোগের ভাষা। গ্রামটি ছোট হলে কী হবে, গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর গ্রামবাসীদের অদ্ভুত জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করতে প্রতি বছর কয়েক হাজার পর্যটক গ্রামে ছুটে আসেন। বেংকালা গ্রামের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ যে সাংকেতিক ভাষায় কথা বলেন তার নাম “কাতা কোলক’। বস্তুত, এই সাংকেতিক ভাষাই বেংকালাকের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। প্রতিশীতের মরসুমেব ধিরদের নিয়ে গ্রামে একটি সমবেত নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজনকরা হয়। বিশ্বেরনানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা সেটা দেখতেই বেংকালায় উড়ে আসেন। কেন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বধির? বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণায় জেনেছেন, বেংকালার অধিকাংশ বাসিন্দা বিরল এক জিনগত ত্রুটির শিকার। সেই কারণেই গ্রামবাসীদের শ্রবণশক্তি খুব ক্ষীণ, কার্যত তারা বধির।জিনগত এই ত্রুটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘ডিএফএনবি-৩’। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ডিএফএনবি-৩ ব্যাধির কারণেই বেংকালা গ্রামের সিংহভাগ বাসিন্দার শ্রবণশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বেংকালার বাসিন্দারা বিরল জিনগত ত্রুটির শিকার হলেও স্থানীয় মানুষ সাংকেতিক ভাষায় কথা বলেই দিব্যি সুখে আছেন। তারা যে ভাষা প্রয়োগ করেন না বা শব্দে কথা বলেন না, তা নিয়ে গ্রামবাসীদের কোনও আক্ষেপ নেই। গ্রামে কোনও শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে ধীরে ধীরে সেও কাতা কোলকে ‘কথা’ বলতে ক্রমে অভ্যস্ত হয়ে যায়। সাতটি প্রজন্ম ধরে গ্রামের বাসিন্দারা এই সাংকেতিক ভাষায় যোগাযোগ করে চলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *