December 15, 2025

শক্তি সংরক্ষণে ফের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হলো ত্রিপুরা!!

 শক্তি সংরক্ষণে ফের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হলো ত্রিপুরা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ দিবসে ফের একবার দেশের শক্তি মানচিত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠল ত্রিপুরার নাম। শক্তি সংরক্ষণ ও শক্তি দক্ষতার ক্ষেত্রে ধারবাহিক সাফল্যের নজির গড়লো ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশন লিমিটেড (টিএসইসিএল)। ২০২৪ সালে গ্রুপ-৪ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করার পর, ২০২৫ সালে গ্রুপ-৫ ক্যাটাগরিতে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে ত্রিপুরা। ছোট রাজ্যের বড় সাফল্য হিসেবে এই অর্জন ইতিমধ্যেই জাতীয় স্তরে প্রশংসিত হচ্ছে। রবিবার নয়া দিল্লীর বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গ্রহণ করেন টিএসইসিএলের কারিগরি অধিকর্তা ডক্টর সুবীর সেন এবং ব্যুরো অফ এনার্জি এফিসিয়েন্সি (বিইই)-র স্টেট ডিজিগনেটেড এজেন্সির নোডাল অফিসার তথা এজিএম সীমা দাস। বিদ্যুৎ মন্ত্রকের আওতাধীন বিইই-র উদ্যোগে এবং এসইইআই ২০২৫ সূচকের ভিত্তিতে এই মূল্যায়ণ ও পুরস্কার প্রদান করা হয়। ত্রিপুরা বিদ্যুৎ নিগমের এই সাফল্যের জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ।এদিন, নয়া দিল্লীর বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু স্পষ্ট ভাষায় বলেন, শক্তি সংরক্ষণ এখন আর কেবল একটি বিকল্প নয়, এটি সময়ের অপরিহার্য প্রয়োজন। প্রতিটি ইউনিট বিদ্যুৎ সাশ্রয় প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ববোধের প্রতিফলন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের সংবেদনশীলতার পরিচয় বহন করে। তিনি উল্লেখ করেন, পরিচ্ছন্ন শক্তি ও শক্তি দক্ষতার ক্ষেত্রে ভারত নির্ধারিত সময়ের আগেই বহু প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। যা দেশের ডিকার্বনাইজেশন যাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহর লালও উপস্থিত থেকে জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ পুরস্কার ২০২৫ এর বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, এই পুরস্কার প্রমাণ করে যে উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ একসঙ্গে এগোতে পারে। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাও তুলে ধরেন।
এ বছর শক্তি দক্ষতার ক্ষেত্রে স্টেট পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ডে গ্রুপ-৫ এ ত্রিপুরা দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে। এই গ্রুপে মোট এগারোটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রতিযোগিতায় ছিল। যার মধ্যে রয়েছে চণ্ডীগড়, মেঘালয়, সিকিম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, অরুণাচল প্রদেশ, লাদাখ, মণিপুর, লাক্ষাদ্বীপ, নাগাল্যান্ড এবং মিজোরাম। এই কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যেও ত্রিপুরার এই সাফল্য নিঃসন্দেহে রাজ্যের প্রশাসনিক দক্ষতা ও পরিকল্পিত শক্তি ব্যবস্থাপনার স্বীকৃতি।
এসইইআই ২০২৫ সূচক অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে দেশের ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শক্তি দক্ষতার পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হয়েছে। ভবন, শিল্প, পরিবহণ, কৃষি, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা (ডিসকম), পৌর পরিষেবা এবং আন্ত:ক্ষেত্রীয় উদ্যোগ-এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মোট ৬৬টি সূচকের ভিত্তিতে রাজ্যগুলির অগ্রগতি বিচার করা হয়েছে। এই সূচক রাজ্যস্তরে শক্তি ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ, সেরা অভ্যাস চিহ্নিতকরণ এবং প্রতিযোগিতামূলক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ত্রিপুরার এই ধারাবাহিক সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ। তিনি বলেন, পরপর দু-বছর জাতীয় ক্ষেত্রে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের এই স্বীকৃতি এক কথায় নজির। নিগমের আধিকারিক ও কর্মীদের নিরলস পরিশ্রম, পরিকল্পিত রোডম্যাপ এবং স্বচ্ছ প্রশাসনের ফলেই এই সাফল্য এসেছে। তিনি নিগমের সমস্ত কর্মী ও আধিকারিককে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
একইসঙ্গে বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজ্যের আপামর বিদ্যুৎ ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান, আরও বেশি সচেতন হওয়ার। বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ করা, শক্তি সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার এবং দায়িত্বশীল ভোগের মধ্য দিয়েই এই সাফল্যকে ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
টিএসইএলের ব্যবস্থাপক অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসুও নিগমের পক্ষ থেকে সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই পুরস্কার শুধু একটি সংস্থার নয়, গোটা ত্রিপুরা রাজ্যের অর্জন। নিগমের আধিকারিক ও কর্মীদের প্রচেষ্টা, মাঠ পর্যায়ে কার্যকর বাস্তবায়ন এবং বিদ্যুৎ ভোক্তাদের সহযোগিতার ফলেই জাতীয় স্তরে এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। সব মিলিয়ে শক্তি সংরক্ষণে ত্রিপুরার এই ধারাবাহিক অগ্রগতি প্রমাণ করে যে সঠিক পরিকল্পনা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা থাকলে ছোট রাজ্যও জাতীয় স্তরে বড় উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। ত্রিপুরার এই সাফল্য আগামী দিনে দেশের শক্তি দক্ষতা আন্দোলনে আরও অনুপ্রেরণা জোগাবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *