রোগে আক্রান্ত সুপারি বাগান,ক্ষতির মুখে চাষিরা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-উত্তর ত্রিপুরার
জম্পুই পাহাড় ও কাঞ্চনপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সুপারি গাছে অজানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে প্রথমে সুপারি গাছের পাতা ও কাণ্ড হলুদাভ রঙ ধারণ করছে কিছুদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ গাছটি শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। এই অবস্থায় বাগানের পর বাগান ধ্বংস হয়ে চলেছে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষের মূল অর্থনৈতিক অবলম্বন সুপারি চাষ। জানা গিয়েছে জম্পুই পাহাড় সহ আশে পাশের বিস্তীর্ণ পার্বত্য অঞ্চলের বহু মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সুপারি চাষের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক মরকের প্রকোপে তাঁদের দুশ্চিন্তা চরমে। অনেক চাষিই ইতোমধ্যে কয়েক লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের ক্ষোভের আঙুল উঠছে রাজ্য কৃষি দপ্তরের দিকে। তাঁদের অভিযোগ, রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়লেও এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট সরকারী পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।এই প্রসঙ্গে রাজ্য কৃষি দপ্তরের নির্লিপ্ত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কৃষক সমাজ।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে উত্তর জেলার কৃষি দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর বিভাস কান্তি দে জানান, সুপারি গাছ সম্পর্কিত বিষয়টি মূলত উদ্যান দপ্তরের অধীন। তবে শুষ্ক মৌসুমে উলু পোকার আক্রমণ প্রায়শই
দেখা যায় যা সুপারি গাছের গোড়ায় বাসা বেঁধে ধীরে ধীরে গাছটিকে ধ্বংস করে দেয়।
তিনি জানান, আমরা প্রায়শই চাষিদের পরামর্শ দেই শুকনো মরশুমে গাছের গোড়ায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অধিকাংশ চাষিই তা মানে না। ফলে পোকার উপদ্রব বেড়ে গিয়ে গাছ ধ্বংস হচ্ছে।তবে বর্ষাকালে অতি বৃষ্টির ফলে এই পোকা অনেকাংশে ধ্বংস হয় যা কিছুটা স্বস্তির বিষয়। কৃষি দপ্তরের বক্তব্য যতই দায় এড়ানোর ইঙ্গিত দিক না কেন সুপারি চাষিরা এর মধ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছে। তাঁদের অভিযোগ, শুধু মৌখিক পরামর্শ নয়, প্রয়োজন মাঠ পর্যায়ে কাজ করার বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক
সহায়তা দেওয়ার।
কাঞ্চনপুর মহকুমার এক প্রবীণ সুপারি চাষি পরেশ চাকমা বলেন, আমরা অনেক টাকা ব্যয় করে বাগান করেছি। এখন গাছ মরছে কিন্তু কেউ এসে খোঁজ নিচ্ছে না। সরকার শুধু বাহবা কুড়ায় কিন্তু আমরা মরছি তা দেখার লোক নেই।
অন্যদিকে, জম্পুই পাহাড় এলাকার তরুণ চাষি রাকেশ লালরেমচানা জানান, গাছের গোড়া ফেঁটে যাচ্ছে, পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন সকালে উঠে দেখি আরও কয়েকটা গাছ মরে গেছে। এখন তো বুঝতেই পারছি না কী করব।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি অবিলম্বে হর্টিকালচার দপ্তরের বিশেষজ্ঞদের পাঠিয়ে রোগ চিহ্নিত করে কার্যকর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।পাশাপাশি যাঁরা ইতোমধ্যে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে তাঁদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবিও জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে এই ধরণের রোগ যদি উলু পোকার কারণে হয় তবে তা নিয়মিত পরিচর্যা ও প্রাথমিক প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই এড়ানো সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সচেতনতার অভাব এবং সরকারী সহায়তার অভাবে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে কৃষি ও উদ্যান দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতির অভিযোগও উঠছে। কৃষি ক্ষেত্রে এই ধরনের বিভ্রান্তি ও দায় ঠেলাঠেলি পরিহার করে দ্রুত সমাধান খোঁজার পক্ষে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
বর্তমানে যে ভাবে বাগান ধ্বংস হচ্ছে তাতে একাধিক পরিবার চরম ক্ষতিগ্রস্ত
হওয়ার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে আগামী দিনে সুপারি চাষ এই অঞ্চলে অচল হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে চাষিরা।
এই সংকটের প্রেক্ষিতে প্রশাসনের তরফে দ্রুত ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে কী না সে দিকেই এখন তাকিয়ে জম্পুই পাহাড় ও কাঞ্চনপুর মহকুমার অসংখ্য সুপারি চাষি। এই ব্যাপারে জম্পুই পাহাড়ের মিজো কনভেনশনের সম্পাদক ডা: জিরাম থিয়ামা পাচু জানান, জম্পুই পাহাড়ে বহু সুপারির গাছ হলুদ হয়ে যাচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে।এর ফলে ওই অঞ্চলের সুপারি চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।