October 20, 2025

রেগা কর্মচারীদের চাকরিতে কালো মেঘ!সুশাসনের চরম অব্যবস্থাপনায়বেতন ঘাটতি ১৩ কোটি টাকা!

 রেগা কর্মচারীদের চাকরিতে কালো মেঘ!সুশাসনের চরম অব্যবস্থাপনায়বেতন ঘাটতি ১৩ কোটি টাকা!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতা, আর্থিক অদক্ষতা এবং শৃঙ্খলার অভাব আবারও স্পষ্টভাবে সামনে এলো রেগা কর্মচারীদের বেতন-বিল সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৮ কোটি টাকা।এই অর্থেই ২,৬০০ জন রেগা কর্মচারীর বেতন, ভাতা এবং প্রশাসনিক খরচ মেটানোর কথা ছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার অজানা কারণে ব্যয় করে ফেলেছে ৩১ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৩০ কোটি টাকাই খরচ হয়েছে শুধুমাত্র বেতন বাবদ। অর্থাৎ প্রাপ্ত অর্থের তুলনায় রাজ্যের অতিরিক্ত ব্যয় ১৩ কোটি টাকা। যা এখন পরিণত হয়েছে এক ভয়াবহ আর্থিক সংকটে। রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক মেশিনারির মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি, হিসাবরক্ষণের শৃঙ্খলা লঙ্ঘন এবং পরিকল্পনা ছাড়াই ব্যয় করা, এই তিনটি কারণে আজ রেগা প্রকল্প এক গভীর সংকটে।প্রকল্পের তহবিল ব্যবস্থাপনায় রয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা।যেখানে সংখ্যার হিসাব মেলে না, নথি স্পষ্ট নয়। অথচ এর দায় নিচ্ছে না কেউ। কিন্তু সরকার অতিরিক্ত ১৩ কোটি টাকা কোথা থেকে ব্যয় করল? সেই প্রশ্নের কোনো স্পষ্ট উত্তর নেই। হিসাবরক্ষার খাতায় নেই পরিষ্কার ব্যাখ্যা। দপ্তরের মধ্যে চলছে দায় এড়ানোর প্রতিযোগিতা। এই ‘অতিরিক্ত খরচ’ এখন রাজ্যের উপর এক বিশাল আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের রেগার কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে।কর্মচারীরা বকেয়া টাকার আশায় অফিসে ঘুরছেন প্রতিদিন। অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন ধার-দেনায় বাঁচতে। রেগা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো গ্রামীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটেছে, তা হলো নথি জালিয়াতি, বাজেটের অপচয় ও পরিকল্পনাহীন ব্যয়। এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে ‘ফাইল পাস’ করতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ লাগছে। অথচ কর্মচারীদের বেতন আটকে পড়েছে। এই অদক্ষতা শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, প্রশাসনিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। রাজ্যের অর্থ দপ্তর ও গ্রামীণ উন্নয়ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এখন পরিণত হয়েছে কর্মচারীদের দুর্ভোগের মূল কারণ। রাজ্যের ২,৬০০ রেগা কর্মচারীর মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন যে, সেপ্টেম্বর মাসের বেতন এখনো হয়নি। তবু প্রতিদিন অফিসে হাজিরা দিতে হচ্ছে। কাজ করতে হচ্ছে মাঠে। কিন্তু কোনো প্রতিদান নেই। রেগা প্রকল্পে এখন কার্যত অচলাবস্থা। মাঠ পর্যায়ে কাজ বন্ধ হওয়ার পথে। কাজের অনুমোদন আসছে না। কর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়েছে এবং প্রকল্পের প্রশাসনিক কাজও স্থগিত হয়ে আছে। অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, খরচের অসঙ্গতির কারণে ফাণ্ড রিলিজ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে মাঠের কাজ ব্যাহত হচ্ছে এবং রাজ্যের গ্রামীণ উন্নয়ন কার্যক্রমেও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। অভিযোগ, রাজ্য সরকারের এই আর্থিক অদক্ষতা একদিনে তৈরি হয়নি। বরং বছরের পর বছর ধরে গড়ে উঠেছে এই বিশৃঙ্খলার সংস্কৃতি। যেখানে দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যয়, ফাইলের জট এবং পরিকল্পনাহীন সিদ্ধান্তই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এতে রাজ্যের ২,৬০০ রেগা কর্মচারী আজ এক ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তার মধ্যে দাঁড়িয়ে। তাদের চাকরি, বেতন, ভবিষ্যৎ- সবই এখন প্রশ্নের মুখে। সরকার অতিরিক্ত খরচ করে নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছে। আর এর ভার বইতে হচ্ছে সাধারণ কর্মচারীদের। যদি দ্রুত কোনো আর্থিক সংশোধন বা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না নেওয়া হয়, তাহলে আগামী মাস থেকেই রেগা প্রশাসন কার্যত স্থবির হয়ে যাবে। আর তখন ২,৬০০ পরিবারের জীবিকা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *