ছ’মাস পর ভারতকে আবার বিরল খনিজ রফতানি শুরু করল চিন, নতুন চুক্তিতে কড়া শর্ত আরোপ বেজিংয়ের!!
রুদ্রসাগরের বিবর্ণ জলাশয়ে ঝুঁকির মুখে পর্যটন
রুদ্রসাগর জলাশয় তুমি কার ?এই প্রশ্নই আজ ভাবিয়ে তুলছে অগণিত পর্যটককে । যে জলাশয়কে ঘিরে রয়েছে রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র নীরমহল । চতুর্দিকে বিস্তীর্ণ জলরাশির মাঝে অবস্থিত দ্বীপভূমিতে গড়ে উঠেছে হিন্দু ও মোগল স্থাপত্য শিল্পের অনুকরণে একটি প্রাসাদ । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যার নামকরণ করেছিলেন ‘ নীরমহল ‘ । সেই পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে থাকা রুদ্রসাগর জলাশয়ের আজ কী বিবর্ণ দশা তা চাক্ষুষ না করলে বিশ্বাস করা কঠিন । বর্ষাকালে এই জলাশয় ফিরে পায় তার যৌবন । শুখা মরশুমে এই জলাশয় হারিয়ে যায় ধানচাষের জমির মধ্যে । জলের গভীরতা থাকে মাত্র দুই হাত , বর্ষাকালে যে জলের গভীরতা ন্যূনতম দশ হাত । বর্তমানে বর্ষাকাল । রুদিজলা আজ পরিপুষ্ট জলরাশিতে । কিন্তু এই জলরাশি ঢাকা পড়ে গেছে কচুরিপানা , নানা জলজ উদ্ভিদে । জলাশয় পরিষ্কার করার দায় নেই কোনও পক্ষের । রুদ্রসাগর সমবায় সমিতির দাবি এই জলাশয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত । জলাশয়কে ঘিরে দুই হাজার মৎস্যজীবী পরিবারের জীবনজীবিকা জড়িয়ে রয়েছে । বর্ষাকালে মাছ ধরা , শুখা মরশুমে ধান চাষের উপরই দুই হাজার পরিবার নির্ভরশীল । আর নৌকাযোগে অগণিত পর্যটকদের নীরমহল প্রাসাদে নিয়ে যাবার মধ্য দিয়ে এই সমবায় সমিতি তাদের আর্থিক তহবিলকে মজবুত করে চলছে । যাকে ঘিরে পর্যটকদের স্বপ্ন , রাজ্য সরকার যাকে সাজিয়ে তোলার জন্য নানা সময়ে নানা স্বপ্নের জাল বুনে এই পর্যটন কেন্দ্রকে গোটা ভারতে এক বিশেষ স্থানে নিয়ে যাবার জন্য বদ্ধপরিকর , সেই জলাশয়ের আজ কী দশা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন পর্যটকরা ।

প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক পর্যটক বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন নীরমহলকে । রুদ্রসাগরের ঘাট থেকে প্রাসাদে যাবার জন্য রয়েছে মোটরচালিত নৌকা , যার মধ্যে ১০০ জন সওয়ার হতে পারেন । বর্তমানে রুদ্রসাগরের প্রধান ঘাট থেকে নীরমহল প্রাসাদ পর্যন্ত গোটা জলাশয় ঢেকে গেছে কচুরিপানায় । যার ফলে একে জলাশয় ভাবা অতিকঠিন । শুখা মরশুমে জল কমে গেলে কিংবা বর্ষাকালে প্রধান ঘাট থেকে প্রাসাদ পর্যন্ত জলাশয়ে একটি পথ চিহ্নিত করে নৌকা চলাচল করতো । কিন্তু বর্তমান সময়ে কচুরিপানা এই পথসহ নীরমহল প্রাসাদের সামনের অংশ থেকে গোটা জলাশয়কে গ্রাস করে নিয়েছে । ফলে বিস্তীর্ণ জলরাশির রূপ সৌন্দর্য বিলীন হয়ে গেছে । জল আর দেখা যায় না । যেদিকে চোখ যায় সর্বত্রই কচুরিপানার দাপাদাপি । অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নৌকা চালিয়ে এখন আর পর্যটকদের সরাসরি নীরমহল প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না । নৌকা আর জলাশয়ের দখল নিয়ে রাখা কচুরিপানার মধ্যে চলে লুকোচুরি খেলা । ১০০ আসন বিশিষ্ট নৌকা কচুরিপানা ঠেলে বা সরিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না । নৌকার মাঝি জলাশয়ে খুঁজে বেড়ায় কোথায় কচুরিপানার মধ্যে ফাঁক রয়েছে । এই ফাঁক দেখে দেখে অতিশ্লথতায় নৌকা পাড়ি দেয় নীরমহলের উদ্দেশে । প্রধান ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে । সরীসৃপের মতো এঁকেবেঁকে জলাশয়ের এক প্রান্ত থেকে ডানদিক , কখনও বাঁদিক এভাবে এগিয়ে যায় । যেকোনও সময় কচুরিপানার বেড়াজালে নৌকা আটকে গেলে কচুরিপানার আস্তরণ সরিয়ে নৌকা বা পর্যটকদের নিরাপদে নিয়ে আসা অতি কঠিন । বিপজ্জনকভাবে কচুরিপানার আস্তরণ পাশ কাটিয়ে এঁকেবেঁকে নৌকা চালিয়ে পর্যটকদের নীরমহল প্রাসাদে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি রয়েছে একে উপেক্ষা করেই রুদ্রসাগর সমবায় সমিতি নৌকা চালনা করছে ।

কেননা এক্ষেত্রে অর্থ যে বড় দায় । প্রতি পর্যটকপিছু নৌকা ভাড়া ৫০ টাকা । পর্যটকদের নীরমহল প্রাসাদে নিয়ে যাবার জন্য রুদ্রসাগরের জলকেই মাধ্যম হিসাবে নিয়েছে সমবায় সমিতি । কিন্তু জলাশয়কে রক্ষণাবেক্ষণের দায় নিতে নারাজ সমবায় সমিতি। জলাশয় ঢেকে গেছে কচুরিপানায় । তা নির্মূল করে জলাশয় পরিষ্কার করার প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা লক্ষ্য করা যায় না । কেবলমাত্র নৌকা পরিচালনার জন্য কিছু বাঁশ জলাশয়ে পুঁতে কচুরিপানাকে আটকে রাখার প্রয়াস সফলতা পাচ্ছে না । বর্তমানে বর্ষাকাল হওয়ায় রাসাগর জলাশয়ে জলস্তর প্রতিনিয়ত বাড়ছে । কচুরিপানার দৌলতে যেভাবে নৌকা চালিত হচ্ছে তাতে যেকোনও সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে । গভীরতা সমৃদ্ধ বর্তমান জলাশয়ে বিপজ্জনকভাবে নৌকা সরীসৃপের মতো এঁকেবেঁকে যাবার ফলে পর্যটকদের বিপদের ঝুঁকি পদে পদে । পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই লাইফজ্যাকেট । যে ক’টি রয়েছে তাও পর্যটকরা গায়ে চাপাতে চান না । নেই কোনও প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতা । নামসর্বস্বতায় লাইফজ্যাকেট নৌকায় রাখা হলেও পর্যটক পিছু যথেষ্ট সংখ্যায় নেই । রুদ্রসাগর জলাশয়কে কচুরিপানামুক্ত করার জন্য কোনও উদ্যোগ এ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি । এই জলাশয় রামসা সাইট হিসাবে স্বীকৃত । রামসা বা বন দপ্তরের কোনও উদ্যোগ নেই । তেমনি নির্বিকার রুদ্রসাগর সমবায় সমিতি । ফলে রুদ্রসাগর জলাশয় শ্রী হারিয়ে তার আঙ্গিক শোভাবর্ধন করছে কচুরিপানা । গোটা জলাশয়ের দখল নিয়ে এই জলজ উদ্ভিদ পর্যটন কেন্দ্রকে করে তুলেছে হাসির খোরাক । কেবলমাত্র জলাশয়কে কেন্দ্র করে অর্থ রোজগারই একমাত্র লক্ষ্য । একে পরিষ্কার করা , স্বচ্ছতায় রাখার দিকটি একেবারেই উপেক্ষিত । অথচ রুদ্রসাগর জলাশয়ের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য দশ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা হয়েছে ফিনল্যান্ড থেকে আনা ড্রেজিং মেশিন ওয়াটার মাস্টার । যা ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকেই অকেজো । সম্প্রতি তা সংস্কার করা হয়েছে বলে জল সম্পদ দপ্তর দাবি করলেও এই মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে না । রুদ্রসাগর জলাশয়ের পাড়ে সামনের জায়গাকে পর্যটকদের কাছে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য প্রায় দশ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে । শুরু হয়েছে নির্মাণকাজ । যাকে ঘিরে স্থলভূমিতে সৌন্দর্যায়নের প্রয়াস , সেই জলাশয়ের বিবর্ণতা হতশ্রী , বিষময় রূপ কী বার্তা দেবে অগণিত পর্যটকদের কাছে সেই জিজ্ঞাসাই তারা করছে সকলকে ।