বিনিয়োগের প্রসারে তৃতীয় বৈঠক,মুখ্যমন্ত্রীর খসড়া প্রতিবেদনে প্রশংসা ডোনার মন্ত্রী সিন্ধিয়ার!!
রাজ্যে “সার্কাস” চলছে!
“সার্কাস” এই শব্দটির সাথে সাধারণ জনগণ কমবেশি সকলেই পরিচিত। সার্কাস হলো এক বিশেষ ধরনের বিনোদন।এর মাধ্যমে আবালবৃদ্ধবনিতা নির্মল আনন্দ ও চিত্তাকর্ষক শারীরিক কৌশল (খেলা) উপভোগ করেন। কাল ও সময়ের পরিবর্তনে নির্মল বিনোদনের এই উৎকৃষ্ট মাধ্যমটি এখন প্রায় অবলুপ্তির পথে। তবে সুখের বিষয় হলো, জনগণকে সার্কাসের মতো সেই অনাবিল আনন্দ দেওয়ার দায়িত্বটি এখন আন্তরিকভাবে কাঁধে তুলে নিয়েছে রাজনৈতিক দল, সরকার ও প্রশাসন। সার্কাস পার্টির অভাব এখন রাজনৈতিক দলগুলি এবং দলের পরিচালিত সরকার ও সরকারের পরিচালিত প্রশাসনই পূরণ করে দিচ্ছে। দুটোই সার্কাস। ফারাক শুধু একটাই, জনগণ সার্কাস দেখে ভরপুর আনন্দ উপভোগ করতো। আর রাজনৈতিক দল, সরকার ও প্রশাসনের সার্কাসে জনগণকে চরম ভোগান্তি এবং নাজেহাল হতে হয়। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন চূড়ান্তভাবে ব্যাহত হয়। দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন চলাচল, সাধারণ ও গরিব মানুষের রুটিরুজি সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। জনগণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা রাজ্যবাসী দিনভর এমনই এক সার্কাসের সাক্ষী হয়ে রইল। যেখানে তথাকথিত সিভিল সোসাইটির নামে শাসক দলেরই শরিক, তিপ্রা মথার এক বিধায়কের ডাকা চব্বিশ ঘন্টা বন্ধকে কেন্দ্র করে রাজ্যবাসী দিনভর সার্কাস দেখলো। সারা রাজ্যের একাধিক জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে, রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে, একাধিক জায়গায় রেললাইন অবরোধ করে রাখা হলো। অবরোধকারীরা সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিষোদ্গার করলো। এদিন দিনভর জনগণকে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হলো। আর সরকার ও প্রশাসন দিনভর ওইসব তামাশা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করে গেছে। রাজধানী সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় এ দিন দেখা গেল তথাকথিত সিভিল সোসাইটির পক্ষে অনেকটা সহৃদয় হয়ে পুলিশকে কাজ করতে। পুলিশের সামনে জনগণকে হুমকি ধমকি, এমনকী বাইকের চাবি নিয়ে যাওয়া, এসব অসভ্যতা চলেছে দিনভর। পুলিশ পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তামাশা দেখেছে।পুলিশ দেখা গেল সাধারণ জনগণকে অন্য রাস্তায় ঘুরিয়ে দিতে। সরকার ও প্রশাসন এই অযৌক্তিক বন্ধকে প্রতিহত করার – জন্য কার্যত কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।দিনভর পুলিশের ভূমিকা ও সরকারের নীরবতা দেখে স্পষ্ট হয়েছে যে, তথাকথিত সিভিল সোসাইটির নামে ডাকা এই বন্ধে রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের নীরব সমর্থন ছিল।এ জন্যই পুলিশকে দিনভর বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলো বন্ধ আহ্বানকারীদের পক্ষে সহযোগিতা করতে।পুলিশের এমন নির্লজ্জ ভূমিকা এখন প্রায়ই রাজ্যবাসী প্রত্যক্ষ করতে পারছে। সন্ত্রাসবাদী দমন করে রাষ্ট্রপতির কালার্সপ্রাপ্ত ত্রিপুরা পুলিশ এখন মেরুদণ্ড সোজা করে আর দাঁড়াতে পারছে না। পুলিশের আত্মসম্মান অনেক আগেই হাওড়ার জলে বিসর্জন হয়ে গেছে। অনেকে আবার বলেন, পুলিশকে দায়ী করে কোনো লাভ নেই। পুলিশ এখন রাজনৈতিক দলের ও সরকারের হুকুমের গোলম। যখন যেমন হুকুম আসবে পুলিশকে সেটাই মুখ বুঝে পালন করতে হবে। ফলে একা পুলিশ প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলে লাভ নেই। পুলিশ প্রশাসনের উপর নিশ্চয়ই এমন নির্দেশ ছিল। সেই নির্দেশই হয়তো পুলিশ আন্তরিকভাবে পালন করেছে। আর নির্দেশ ছিল বলেই তো রাজ্যের কোথাও এই বন্ধকে কেন্দ্র করে কোনো অশান্তির খবর নেই। রাজ্যের কোথাও একজনও পিকেটারকে আটক করার কোনো খবর নেই। রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের নীরব সমর্থনে এমন শান্তিপূর্ণ সফল বন্ধ রাজ্যবাসী সাম্প্রতিক কালে দেখেনি। এককথায় সরকারী মদতে সফল বন্ধ দখলো রাজ্যবাসী।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এটাই যদি হবে তাহলে বন্ধ প্রতিহত করার জন্য এত ঢাকঢোল পেটানোর কী দরকার ছিল? বন্ধের বিরুদ্ধে এত তর্জন গর্জন কোথায় গেলো? সরকারের নোটিশ, বিবৃতি এসবের কী দরকার ছিল? বন্ধ প্রতিহত করতে সরকার, প্রশাসন এমনকী শাসক দলের পক্ষেও আজ কোনো পদক্ষেপ রাজ্যের কোথাও লক্ষ্য করা যায়নি। উল্টো রাজ্যের জনগণকে আজ দিনভর চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। এছাড়াও আজকে ছিল ভাইফোঁটা। বন্ধের কারণে এই সামাজিক অনুষ্ঠানটিও আজ মারাত্মকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। সবথেকে বিস্ময়কর ঘটনা হলো, সরকারের একটি শরিক দল, সরকারের বিরুদ্ধে অর্থাৎ নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে বন্ধ ডাকছে, সেই বন্ধ সরকার এবং প্রশাসনই নীরব সমর্থন দিয়ে সফল করে তুলছে। এটা “সার্কাস” নয় তো আর কী? রাজ্যের সচেতন মানুষ সবই বুঝতে পারছে।কান পাতলেই পতনের শব্দ শোনা যাচ্ছে।সেই দিন আর বেশি দূরে নেই।