রাজ্যকে পূর্ণ স্বাক্ষর ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর!!


অনলাইন প্রতিনিধি:-রাজধানী আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন থেকে সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক উদ্ধৃতি টেনে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, নরেন্দ্র মোদি সর্বদাই বলেন সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াস-এর কথা।আজ সেই ছবিই আমরা প্রত্যক্ষ করছি।আমাদের লক্ষ্য, সমাজের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত সরকারী বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পগুলির সুফল পৌঁছে দেওয়া।
এ দিন ছিল পূর্ণ স্বাক্ষর ত্রিপুরা, উল্লাস-নবভারত সাক্ষরতা কার্যক্রম রাজ্যের অসামান্য সাফল্য শীর্ষক অনুষ্ঠান। শিক্ষা দপ্তর আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই অভিযানকে সফল করতে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক একটি রূপরেখা দিয়ে যথাসাধ্য সহযোগিতাও করেছে। তার কথায়, সাক্ষরতা অভিযান একটি সামাজিক আন্দোলন।এটা একা কোনও শিক্ষক কিংবা প্রশিক্ষককে দিয়ে সম্ভব নয়।সব মানুষেরই সহযোগিতা প্রয়োজন।তিনি বলেন,পড়াশোনা সকলের ক্ষেত্রেই আবশ্যক। এক্ষেত্রে যারা এখনও পর্যন্ত শিক্ষার আলো থেকে দূরে রয়েছেন তাদেরকে সহায়তা প্রদানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষা দপ্তরকে। বাড়াতে হবে সাক্ষরতার হারও।অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বলেন, ১৯৬১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ত্রিপুরায় সাক্ষরতার হার ছিলো মাত্র ২০.২৪ শতাংশ।এই হার ১৯৯১-এ গিয়ে পৌঁছায় ৬০.৪৪ শতাংশে। ২০০১-এ ৭৩.১৯ শতাংশ এবং ২০১১ সালে ৮৭.২২ শতাংশ। তিনি বলেন, উল্লাস কার্যক্রমের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নবভাবত সাক্ষরতা কার্যক্রম। এতে ২০২৩-২৪ অর্থ সমীক্ষার হার ছিলো ৯৩.৭০ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫.৬০ শতাংশে। তবে যথাযথ সমীক্ষা হলে তা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোনও একটি বাড়িতে মা-বাবা পড়াশোনা না জানলেও তারা চান ছেলেমেয়েরা যাতে পড়াশোনা করতে পারে। শিক্ষিত ছেলেমেয়েরাও চাইছে তাদের মা-বাবাও পড়াশোনা জানুক। এক্ষেত্রে যারাই এখনও শিক্ষার আলো থেকে দূরে রয়েছেন তাদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে শিক্ষা দপ্তরকে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিকশিত ভারত গড়ে তোলার জন্য দেশে সাক্ষরতা অভিযান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদিন দেশের তৃতীয় রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরা রাজ্যকে পূর্ণ সাক্ষার রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।তবে এই ঘোষণার পাশাপাশি রাজ্যে স্বাক্ষরতার হার যে আরও বৃদ্ধি করার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের তৃতীয় রাজ্য হিসাবে ত্রিপুরা আজ পূর্ণ স্বাক্ষর রাজ্যের মর্যাদা পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য যেমন গর্বের বিষয় তেমনি একটি মাইলফলক হিসেবেও চিহ্নিত থাকবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি এর আগে মিজোরাম ও গোয়া পূর্ণস্বাক্ষর রাজ্য হিসাবে মর্যাদালাভ করে বলে জানান। তিনি বলেন, উল্লাস কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি ব্লক ও গ্রামে প্রায় ৯৫৪টি সামাজিক চেতনা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে প্রায় ২,২২৮ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক ও শিক্ষিকা নিযুক্ত রয়েছেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সব অংশের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে ত্রিপুরা এখন সবদিক থেকেই সামনের দিকে এগিয়ে চলছে বলে জানান। জিএসডিপি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে ত্রিপুরা এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। একটি হিসেব তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৭ ফাউন্ডেশন্যাল লিটারেসি অ্যান্ড নিউমেরেসি অ্যাসেসমেন্ট টেস্টে মোট ৪,৫৯৭ জন পরীক্ষা দেয়। দেখা গিয়েছে এর মধ্য থেকে উত্তীর্ণ হয় মোট ৩,৫৮১ জন। একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর এই পরীক্ষায় ১৪,১৭৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ১৩,৯০৯ জন। এছাড়াও এ বছর মার্চ মাসে মোট ৫,৮৯৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫,৮১৯ জন উত্তীর্ণ হয়। এই ফলাফল বরাবরের মতোই ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে। এ দিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও বিশিষ্ট অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের (এডাল্ট এডুকেশন) অধিকর্তা প্রীতি মীনা। ছিলেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রেভেল হেমেন্দ্র কুমার, শিক্ষা অধিকর্তা, এসসিইআরটির অধিকর্তা এল ডার্লং সহ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং দপ্তরের বিভিন্ন আধিকারিকরা। আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিরা ‘উল্লাস’ নামক একটি পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ৯০ সাক্ষরদের মধ্য থেকেও সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয় সেরাদের।