রাজস্থানে গ্রেফতার ‘লুটেরা দুলহন’ সম্পতি লুট করতে ২৫ বার বিয়ে!!

 রাজস্থানে গ্রেফতার ‘লুটেরা দুলহন’ সম্পতি লুট করতে ২৫ বার বিয়ে!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-এও এক ‘মধুচক্র’। একে সুন্দরী, তার উপর গরিব এবং অসহায়তার গল্প। সহজেই ফাঁদে পড়তেন অবিবাহিত যুবকেরা। মাটি নরম হয়েছে বুঝতে পারলেই বিয়ের প্রস্তাব দিতেন তরুণীও এবং বিয়ের পরেই চম্পট! খালি হাতে নয় নিশ্চয়ই। শ্বশুরবাড়ি থেকে গয়না, টাকা লুট করে পালাতেন অনুরাধা পাসওয়ান। এবারে সামান্য ভুলচুক হয়েছিল। তাতেই ধরা পড়ে গেলেন।
২৫টি বিয়ের লক্ষ লক্ষ টাকা এবং গয়না লুটের অভিযোগ তরুণীর বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই ‘মক্ষীরানি’ কে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল শহর থেকে গ্রেফতার করেছে রাজস্থান পুলিশ। একা ‘বাবলি’ নয়, দলে ‘বান্টিরা’ও উপস্থিত থাকতেন বলে নিশ্চিত পুলিশ। নাহলে অপারেশন চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত তরুণীর আসল নাম অনুরাধা পাসওয়ান। তবে প্রতারণার সুবিধার জন্য জায়গা ও নাম-পরিচয় বদলে বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন তিনি। গরিব কন্যার অভিনয় করে ফাঁসাতেন স্থানীয় যুবকদের। অনুরাধার লোকেরাই ওই যুবকের পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতেন। কনের অসহায় জীবনের গল্প বলতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাতেই মন গলত পাত্রপক্ষের।ঠিক হয়ে যেত বিয়ে।অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য দু’লক্ষ টাকা নিতেন অনুরাধার দলের সদস্যরা। সব কথা হওয়ার পর একটি নি বিবাহ চুক্তিপত্র প্রস্তুত করা হতো। এরপর কোনও মন্দিরে বা বাড়িতে রীতি অনুসারে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার বি পরেই আসল নাটক শুরু হতো। অনুরাধার অসহয়তা দেখে কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পেতেন না যে তিনি একটি ভুয়ো বিবাহ চক্রের মূল পাণ্ডা। এখানেই শেষ নয় তার প্রতারণার কাহিনী। বিয়ের পর পরিকল্পনা মাফিক কয়েকদিন শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন অনুরাধা। ভাল ব্যবহারে ভুলিয়ে রাখতেন বাড়ির লোকেদের। সকলের বিশ্বাস অর্জনের পর হঠাৎ একদিন খাবার বা পানীয়ের সঙ্গে নেশার দ্রব্য মিশিয়ে খাইয়ে দিতেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের এবং নগদ, গয়না লুট করে পালিয়ে যেতেন। এবারও একই পদ্ধতিতে একটি পরিবারকে ফাঁসান অনুরাধা।
২০ এপ্রিল সওয়াই মাধোপুরের বাসিন্দা বিষ্ণু শর্মার সঙ্গে বিয়ে হয়েও গিয়েছিল ‘লুটেরা দুলহন’-এর। পুলিশ জানিয়েছে, বিয়ে ঠিক করে দেওয়ার জন্য পাপ্পু মিনাকে দু’লক্ষ টাকা দিয়েছিল বিষ্ণুর পরিবার। বিয়ের দুই সপ্তাহের মধ্যেই সওয়া লক্ষ টাকার গয়না, ৩০ হাজার টাকা নগদ এবং একটি মোবাইল ফোন নিয়ে চম্পট দেন অনুরাধা। সমস্যা হল, অন্য প্রতারিতদের মতো কেবল হতাশ হননি বিষ্ণু। তিনি দ্রুত থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। শর্মার বাড়ি থেকে পালানোর পর, অনুরাধা ভোপালে গব্বর নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন বলে জানা গিয়েছে, এবং তার কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা প্রতারণা করেন। এই বিষয়ে বিষ্ণু বলেন,’আমি একটি ঠেলাগাড়ি চালাই।বিয়ে করার জন্য টাকা ধার করেছিলাম।মোবাইলটিও কিনেছিলাম ধারে।সব নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে সে। স্বপ্নেও ভাবিনি যে ও আমায় ঠকাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সচরাচর তেমন ঘুমোই না। কিন্তু ঘটনার দিন রাতে আমি বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়েছিলাম। যেন কেউ আমায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিল।’ এরপরেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন বিষ্ণু। বিষ্ণুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, সওয়াই মাধোপুর পুলিশ অনুরাধার জন্য একটি ফাঁদ পাতে। একজন কনস্টেবল বর সেজেছিলেন। তাকে একজন সম্ভাব্য গ্রাহক ভেবে অনুরাধার এজেন্ট অনেক মহিলার ছবিও দেখিয়েছিলেন। তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মী মিঠা লাল বলেন যে, অনুরাধা তার প্রতারণার পদ্ধতি আরও উন্নত করেছিলেন। সে অতীতে উত্তর প্রদেশের মহারাজগঞ্জের একটি হাসপাতালে কাজ করত। এছাড়া পারিবারিক কলহের পর তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। ভোপালে স্থানান্তরিত হওয়ার পর, তিনি বিবাহ প্রতারণায় বিশেষজ্ঞ একটি অপরাধী চক্রের দলে যোগ দেন। এই চক্রটি হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সম্ভাব্য কনে উপস্থাপনকারী এজেন্টদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করতো তারা।পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্তের পর, সমস্ত নথি এবং বিবাহচুক্তি জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের দল থেকে একজন কনস্টেবলকে বর হিসেবে সাজিয়েছিলাম এবং অনুরাধাকে বিয়ে করার জন্য প্রলুব্ধ করেছিলাম।’ ‘পুলিশ আরও বেশ কয়েকজন গ্যাং সদস্যকে শনাক্ত করেছে যাদের এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। যাদের মধ্যে রয়েছে রোশনি, রঘুবীর, গোলু, মজবুত সিং যাদব এবং অর্জুন, যারা সকলেই ভোপালের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.