রাজনীতির সার্কাস!

সার্কাস,এই শব্দটির সঙ্গে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত।সার্কাস হচ্ছে এক ধরনের বিশেষ বিনোদন কেন্দ্র বা বিনোদন প্রক্রিয়া বিশেষ।সার্কাসের মাধ্যমে আবালবৃদ্ধবনিতা নির্মম ও চিত্তাকর্ষক আনন্দ উপভোগ করেন। সার্কাস মানেই একেবারে ভরপুর বিনোদন।হাসি, ঠাট্টা, নানা কলা-কৌশল, শারীরিক দক্ষতার নানা খেলা, সবমিলিয়ে বিনোদনের জম্পেশ আয়োজন।এই সার্কাস আমাদের দেশে যেমন অত্যন্ত জনপ্রিয়।তেমনি বিদেশেও জনপ্রিয়। তবে আগের তুলনায় এখন নানা কারণেই সার্কাস অনেকটাই তার ঐতিহ্য এবং জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। ফলে এখন আর সেইভাবে সার্কাস পার্টিকে দেখা যায় না। জনপ্রিয়তা হ্রাসের সাথে সাথে, সার্কাস পার্টিও এখন বিলুপ্তির পথে।
এই কথাগুলি বলার কারণ হলো, ভরপুর বিনোদনের এই মাধ্যমটি এখন অবলুপ্তির পথে হাঁটলেও, সাধারণ মানুষকে এখন ভরপুর বিনোদনের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করে দিচ্ছে আমাদের দেশের বর্তমান রাজনীতি। এমনটাই অভিমত বিশিষ্টজনদের। কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও, এটাই এখন অনেকটা সার্কাস পার্টির ভূমিকা পালন করছে। ওই দলগুলির বিভিন্ন সময়ের কার্যকলাপ ভরপুর বিনোদনকেও হার মানিয়ে যায়। প্রায়ই সাধারণ মানুষের মুখ থেকে এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তাদের এই বিনোদনমূলক কার্যকলাপ যে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি, চরম দুর্দশা এবং বড় ধরনের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এতে তাদের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা আছে তাদের মতো করে। জনগণ জাহান্নামে যাক। তাদের কাছে জনগণের সুবিধা-অসুবিধা, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার, জনগণের ভালো-মন্দ-স্বার্থ, এসবের কোনও মূল্য নেই। সাধারণ মানুষকে চরম সমস্যা ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলে নিজেদের বিনোদনী রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করাটা যেন তাদের অধিকার বলে মনে করেন।
এই কথাগুলি বলছি এই কারণে যে, সামান্য একটি বিষয়কে ইস্যু করে রাজ্যের একটি আঞ্চলিক দলের কর্মী-সমর্থকরা গত সোমবার দিনভর যে ভরপুর বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করলো, তাতে এই কথাগুলি বলা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। সরকারে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন! এটা সার্কাসের বিনোদন নয় তো, আর কি? আর বিস্ময়কর ঘটনা হলো, রাজ্য সরকার ও সরকারের মাথাভারী প্রশাসন পাশে দাঁড়িয়ে থেকে এই বিনোদন কর্মকাণ্ডকে উৎসাহ জুগিয়ে গেছে। যা দেখে গোটা রাজ্যবাসী ছি: ছি: করছে। গত সোমবারের পর থেকে রাজ্যবাসীও একপ্রকার বুঝে গেছে যে, এই রাজ্যে সরকার ও প্রশাসনের অস্তিত্ব সংকটে। এই দুর্বল প্রশাসনের কিছুই করার ক্ষমতা নেই। ওই আঞ্চলিক দলের কর্মী-সমর্থকরা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, এরা ইচ্ছে করলে যখন খুশি, যা কিছু করতে পারে। তাদের বাধা দেওয়ার কেউ নেই। এরা গত সোমবার সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছে। সকাল থেকে দিনভর একটি জেলার সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্মকে অচল করে রেখেছে। জেলাশাসকের অফিস থেকে শুরু করে জেলার সমস্ত মহকুমা শাসকের অফিস, ব্লক অফিসগুলিতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হলো। আর প্রশাসন পাশে দাঁড়িয়ে নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করে গেছে। কেলেঙ্কারির এখানেই শেষ নয়, পুলিশ প্রশাসনকে দেখা গেলো তথাকথিত আন্দোলনকারীদের আপ্যায়ন করে ডেকে নিয়ে জেলাশাসকের অফিসে তালা দেওয়ার সহায়তা করতে! এই দৃশ্য ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে। যা দেখে গোটা রাজ্যবাসী ছি:ছি: করছে। নানাদিকে সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এটা কোন ধরনের প্রশাসন?
সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, যারা এসব করছে ওই আঞ্চলিক দলটি বর্তমান রাজ্যের বিজেপি জোট সরকারের অন্যতম শরিক। দলের দুইজন বিধায়ক রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য। সরকারের শরিক হয়ে, সরকারের সমস্ত সুযোগসুবিধা ভোগ করে, আবার সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে শামিল হচ্ছে এরা। তার চাইতেও বড় অবাক করার বিষয় হলো, সরকারের বড় শরিক (বিজেপি) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে! তাদের এই উদ্ভুত কর্মকাণ্ডে বারবার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। রাজনৈতিক বিচক্ষণদের মতে, যে বিষয়টি খুব সহজেই দুই পক্ষকে ডেকে নিয়ে বন্ধ ঘরে মিটিয়ে নেওয়া যেত, সেটাকে একটা ইস্যু করে তোলার সুযোগ দেওয়া হলো! সেই ইস্যুকে সামনে রেখে আন্দোলনের নামে অরাজকতা তৈরি করার সুযোগ করে দেওয়া হলো! তারাও সুযোগ পেয়ে সরকার ও প্রশাসনের মুখে চুন কালি মেখে দিয়ে, সরকার এবং প্রশাসনকে ব্যর্থ প্রমাণ করে ছাড়লো। উল্টো দিকে জেলার সাধারণ মানুষ দিনভর সরকারী পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটা কিন্তু নতুন নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার এই ধরনের কর্মকাণ্ড চলেছে। সরকারে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন! আর সরকারও বারবার নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করে, ওই আঞ্চলিক দলটির বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।তবে ভুলে গেলে চলবে না, মানুষ এখন খুবই সচেতন।এই ভাবেই যদি রাজনীতিক সার্কাস চলতে থাকে,তাহলে ঠিক সময়ে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্তই নেবে।এতে কোনও সন্দেহ নেই।