দেশি-বিদেশিদের উপচে পড়া ভিড়,আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে জম্পুই!!
রবীন্দ্রনগর গ্রামের শিল্পীর জীবনে নতুন আলোর সন্ধান!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-সোনামুড়ার রবীন্দ্রনগর গ্রামের চণ্ডী কালীবাড়ি সংলগ্ন ইটবাঁধা সরু গলিপথ পেরোলেই চোখে পড়ে তাদের বাড়ি। বাড়িতে একদিকে থাকা সরকার প্রদেয় টিনের চালা যুক্ত পাকা ঘরটি যতটা সাদামাটা, এর গৃহকর্ত্রী শিল্পী শুক্লদাস তেমন নন। তিনি স্থানীয় প্রতিবেশীদের পাশাপাশি সোনামুড়ার মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন অসামান্য। জীবন সংগ্রামের ময়দানে দাঁড়িয়ে তিনি যেন একাই অদৃশ্য দশ হাত দিয়ে লড়েছেন জীবন সংগ্রামে। সংসার, স্বামী, সন্তান ও বেঁচে থাকার কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে।অভিযোগ, প্রায় ১৫ বছর আগে, ২০০৯ সালে, চিকিৎসার এক ভুলের কারণে অন্ধকার নেমে আসে তার পরিবারের উপর। শিল্পীদেবীর স্বামী শ্যামল চন্দ্র দাস তখন ইটভাট্টায় কর্মরত ছিলেন। তীব্র কানব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসকের পরামর্শে কিছুদিন পর হয় অস্ত্রোপচার। অভিযোগ, অপারেশন টেবিলে ঘটে ভয়াবহ ভুল। চোখের স্নায়ু কেটে যাওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। সংসারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটি হঠাৎই ঘরে বসে পড়লেন চিরতরে। তখন ঘরে শিল্পী ও শ্যামলের পাঁচ মাসের একমাত্র সন্তান মাধব।তার সেই হাসিমাখা মুখই নতুন লড়াইয়ের আলো হয়ে ওঠে শিল্পীর জীবনে। সংসারের হাল ধরতে শিল্পী শুক্লদাস যোগ দেন কৃষি শ্রমিকের কাজে। সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন সেরে ফেলেন রান্নাবান্না, স্বামীর যত্ন ভোর হতেই বেরিয়ে পড়েন অন্যের জমিতে ফসল ফলানোর কাজে। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কাস্তে ও কোদালের শব্দ হয়ে ওঠে তাদের সংসারের ভরসা। বর্তমানে কৃষিশ্রমিক হিসেবে প্রতিদিনের মজুরি মাত্র ৪০০ টাকা। তাতেই চলে ঘরের বাজার, ছেলের বই-খাতা, স্বামীর ওষুধ। অথচ বর্ষাকাল এলে বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে কাজ। তখন আশঙ্কা আরও ঘনিয়ে আসে। কীভাবে চলবে সংসার? অন্ধ শ্যামলবাবুও নিজের অসহায়তার কথা বলতে গিয়ে চোখের জল থামাতে পারেন না।
তিনি জানান, যদি ইটভাট্টার চাকরিটা থাকতো, এখন অন্তত মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় হতো। আজ এতটা কষ্ট হতো না। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী হওয়ায় তিনি মাসে ২০০০ টাকা সরকারী ভাতা পান। পেয়েছেন একটি সরকারী ঘর ও শৌচালয়ও। কিন্তু সেই সাহায্যে জীবনের সব ভার যে লাঘব হয় না তা ভালোই বোঝেন তিনি। চোখে দেখতে না পেলেও স্ত্রীর কষ্ট তিনি প্রতিদিন অনুভব করেন।
শিল্পী দেবীর কণ্ঠে তীব্র ক্লান্তির সঙ্গে মিশে থাকে দৃঢ়তা। তিনি জানিয়েছেন ধীরে ধীরে বয়স হচ্ছে। ঘরের সব কাজ সঙ্গে জোতদারের জমিতে দিনমজুরি। সবকিছু তাকে একাই সামলাতে হয়। এই হাড়ভাঙা খাটুনি আর কতদিন খাটবেন জানা নেই তার। কিন্তু তারপরই তিনি যেন নিজের শক্তিকে আবার ফেরত পান। একটাই আশা ছেলে মানুষের মতো মানুষ হবে। পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করবে।পরিবারের মুখে হাসি ফুটবে।তখন দেখবে তার মা-বাবাকে। মাধব চন্দ্র দাস শ্যামল ও শিল্পীর একমাত্র সন্তান। বর্তমানে দশম শ্রেণীর ছাত্র। প্রতি বছরই ক্লাসে প্রথম বা দ্বিতীয় হয়ে সে যেন তার মায়ের স্বপ্নে আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে। অভাব তাকে দমাতে পারেনি, বরং আরও মেধাবী ও দায়িত্ববান করে তুলেছে। তার স্বপ্ন পরিষ্কার। একদিন নিজের সাফল্যে বদলে দেবে মা-বাবার এই কষ্টের জীবন।