আপত্তিকর কনটেন্ট’ বানাতে বাক্স্বাধীনতার দোহাই দিতে পারবেন না নেটপ্রভাবীরা!!
যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের দৌত্য!!

সাড়ে তিন বছর ধরে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিসমাপ্তি কবে এবং কিভাবে তা কেউ জানে না।একদিকে ইউক্রেনের ইউরোপীয় সমাজের প্রতি দুর্বলতা অন্যদিকে ন্যাটোর সদস্যভুক্তির প্রত্যাশা অন্যদিকে রাশিয়ার নিজ সীমানার বিরোধ।রাশিয়ার সঙ্গে পুরানো বৈরিতাকে পুঁজি করে আমেরিকা প্রথম থেকেই এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে মদত দিয়ে আসছে।তবে সাড়ে তিন বছর পর আলাস্কা সম্মেলনের পর দুইটি দেশের মধ্যেকার ভয়ানক যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ সামনে এসেছে বলা চলে।এই মধ্যস্থতার ভূমিকায় এগিয়ে গিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তি প্রস্তাব সামনে এনেছেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ওয়াশিংটনে ডেকে নিয়ে শান্তি প্রস্তাবের পক্ষে পাঠ দিয়েছেন।তবে সেই সব পাঠ বা আলোচনার কথা প্রকাশ্য নয়।
আলাস্কায় ট্রাম্প পুতিনের আলোচনার পর যুদ্ধ বন্ধে একটি পাকা শান্তি আলোচনার পর্যায় যে শুরু হচ্ছে তা জানা গেছে, ইউক্রেনে শুক্রবার রাশিয়ার অভিযান বন্ধে তিনটি শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শর্তগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে, ইউক্রেনকে পুরো দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া পশ্চিমি বিশ্বের সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না ইউক্রেনে। পাশাপাশি যুদ্ধপরবর্তী ইউক্রেন পশ্চিমি সেনা মোতায়েন করা যাবে না। ক্রেমলিনের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদসংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে। গত ১৫ আগস্ট আমেরিকার আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় তিন ঘন্টা বৈঠক করেন পুতিন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সমঝোতা কেমন হতে পারে, তা নিয়ে বৈঠকে আলাপ করেছিলেন দুই নেতা। বৈঠক শেষে পুতিন বলেছিলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার ওই বৈঠক ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর পথ খুলে দেবে বলে আশা করছেন তিনি। তবে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছিল, সে বিষয়ে তাদের কেউই সুস্পষ্টভাবে কিছু জানাননি।
ট্রাম্প বলেছিলেন কোনও যুদ্ধবিরতি নয়, একটি শান্তি আলোচনাই পারে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধ করতে। ওই বৈঠকে পুতিন কী প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে রুশ সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে,২০২৪ সালের জুনে ইউক্রেনের ভূখণ্ড নিয়ে পতিন যে দাবি করেছিলেন তাতে এবার তিনি কিছুটা ছাড় দিয়েছেন।তখন রুশ প্রেসিডেন্টের দাবি ছিল, ইউক্রেনের চার প্রদেশের পুরোটাই রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে। এর মধ্যে পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্কে ও লুহানস্ক প্রদেশ ছিল। এই দুই প্রদেশ নিয়ে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক প্রদেশ ছিলো। এই দুই প্রদেশ নিয়ে দনবাস গঠিত। বাকি দুটি প্রদেশ হলো দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া। সেই সময় এই দাবি প্রত্যাখ্যান পত্রপাঠ করেছিলে কিয়েভ। তবে বর্তমানে পুতিন চান, শান্তিচুক্তির অংশ হিসাবে দনবাসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে ইউক্রেনকে।
এর বিনিময়ে খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ায় সম্মুখী সীমান্ত বরাবর যুদ্ধ বন্ধ করবে রুশ বাহিনী। এর বাইরে ইউক্রেনের খারকিভ, সুমি ও নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে রুশ সেনাবাহিনীর দখলে থাকা ছোট ছোট এলাকাগুলো ছেড়ে দেবে মস্কো। আমেরিকার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দনবাসের ৮৮ শতাংশ এলাকা এবং জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনের ৭৩ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার দখলে রয়েছে। আরও জানা যাচ্ছে, ভূখণ্ডে হাতবদলের শর্তের পাশাপাশি পুতিন চান, শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আশা ত্যাগ করতে হবে। আবার ন্যাটো যেন তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পূর্বদিকে আর যুদ্ধ সম্প্রসারণ না করে। এ দুইটি দাবি যুদ্ধ শুরুর বহু আগে থেকে করে আসছিলেন পুতিন। এ কথা ঠিক যে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারীতে যুদ্ধ শুরুর পর আলাস্কা বৈঠকের মাধ্যে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় সুযোগ এসেছে দুই দেশের সামনে। কারণ, পুতিন শান্তির জন্য প্রস্তুত আছেন। ছাড় দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক।
মস্কো তার এই বার্তা ট্রাম্পের কাছেও পৌঁছে দিয়েছে। তবে কিয়েভশেষ পর্যন্ত দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দেবে কিনা, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই মস্কোর। আর কিয়েভ এই ছাড় না দিলে রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাবে,এমনই মানসিকতা মস্কোর।অন্যদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলোকে স্বীকৃতি আমেরিকা দেবে কিনা সে বিষয়টিও এখনও পরিষ্কার নয়।পুতিনের শর্তের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইউক্রেনের বিদেশ মন্ত্রণালয়। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট বরাবরই বলে এসেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইউক্রেনের কোনো ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে না। গত বৃহস্পতিবার কিয়েভে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পূর্বাঞ্চল থেকে যদি সাধারণভাবে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়, তাহলে তা আমরা করব না। এটি আমাদের দেশের অস্তিত্বের বিষয়। এর সঙ্গে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষার বিষয় জড়িত। প্রসঙ্গত, ন্যাটোতে যোগদান নিজেদের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা হিসেবে মনে করে কিয়েভ। অপর প্রান্তে ন্যাটো নিয়ে পুতিনের শর্তের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইটহাউস। ন্যাটোও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সম্প্রতি হোয়াইটহাউস সূত্র জানিয়েছিল, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। কিন্তু দেশটির নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর বিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের মতো ভাষা ব্যবহার করা যাবে, এমন শর্তে রাজি হয়েছেন পুতিন। অনুচ্ছেদ ৫-এ বলা হয়েছে, ন্যাটোর কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরা এগিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলাদিমির জেলেনেস্কির ধারণা অন্যরকম। তিনি মনে করেন, রাশিয়া এই যুদ্ধ শেষ করতে চায় না। ভলাদিমির জেলেনস্কি মন্তব্য করেছেন, শান্তি নিয়ে বর্তমান আলোচনার মধ্যেও ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনের মুকাচেভো শহরে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের বাড়িতে হামলা হয়েছে। এছাড়া লিথুয়ানিয়া,পোল্যাণ্ডসহ ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়া হচ্ছে।রাশিয়া অনিচ্ছাকৃতভাবে এসব করছে না,বরং এর মাধ্যমে দুঃসাহস দেখিয়ে যাচ্ছে।