September 19, 2025

মোবাইলে বন্দি শিশুমনকে আলো দেখানোই পুজোর থিম!!

 মোবাইলে বন্দি শিশুমনকে আলো দেখানোই পুজোর থিম!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পাঁজিতে এ বছর ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার দিনক্ষণ বলে উল্লেখ রয়েছে। যা পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের সূচনাকে ইঙ্গিত করে। এই দিনে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয় এবং এদিনই দুর্গাপুজো উৎসবেরও সূচনা। সেই দিন এখন একেবারে দোরগোড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই পুজো উদ্যোক্তাদের কর্মব্যস্ততাও প্রায় তুঙ্গে।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী দুর্গাপুজোর তাৎপর্য নিহিত রয়েছে দেবী দুর্গা সন্তানদের নিয়ে তাঁর জন্মস্থানে আগমনের মধ্যে।ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া সহ এমন বহু দেশেই উদ্যাপিত হয় শারদোৎসব।
দেশের কথা বললে পশ্চিমবাংলা, ত্রিপুরা, আসামের বাইরে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গুজরাট, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, হিমাচল প্রদেশে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালিত হয় এই উৎসব। বিশেষ করে বাঙালি অংশের মানুষ এই উৎসব পালনের জন্য স্থানীয়ভাবে রকমারি মণ্ডপ তৈরি করেন। পুজোর দিনগুলিকে উৎসবমুখর করে তুলতে এ যেন এক নতুন সাজ পুজো উদ্যোক্তাদের।
রকমারি মণ্ডপসজ্জার ভিড়ে বরাবরেরই মতোই নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে হাজির হয় উজান অভয়নগরের নিউ স্টার ক্লাব। সেই অনুযায়ী এ বছরও তাদের ভাবনায়, ‘অন্ধকারে বন্ধ করা খাঁচায় আয় দূরন্ত আয়রে আমার কাঁচা’।এটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ আমার কাঁচা’ এই নামেও পরিচিত ঠাকুরের ‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থের একটি যেখানে তিনি জীবনকে উদ্দীপিত করতে এবং উদ্যম আনতে আহ্বান জানিয়েছেন, সেখানে কিছুটা হলেও মিল রেখে কবির এই ভাবনাকে তুলে ধরতে চাইছে নিউ স্টার ক্লাব। কার্যত মোবাইলে বন্দি শৈশবকে অন্ধকার থেকে আলোর দিশা দেখাতেই এই উদ্যোগ তাদের।
ক্লাবের পক্ষে পুজো কমিটির সভাপতি রঞ্জিত দাস জানান, রাজ্যের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী রূপা নন্দীর তত্ত্বাবধানে এ বছর সেজে উঠবে তাদের পুজো মণ্ডপ। পরিকল্পনায় রয়েছেন এলাকারই এক উদ্যমী যুবক প্রসেনজিৎ সাহা। তারা জানান, পুরনো সব খেলা হারিয়ে এখন কচিকাঁচাদের গোটা শৈশবটাই আটকে যাচ্ছে মোবাইলে। কার্যত এ থেকে তাদের বের করে আনতেই অভিনব উদ্যোগ তাদের। মণ্ডপে বিভিন্ন স্ট্যাচুর মাধ্যমে তুলে ধরা হবে হারিয়ে যাওয়া সেসব খেলনাগুলো। যেগুলি এখন আর খেলেন না অনেকেই, নামও জানেন না। চতুর্থীর সন্ধ্যায় এ বছর এলাকারই প্রবীণ মহিলাদের হাত ধরে দর্শনার্থীদের জন্য মণ্ডপ খুলে দেবেন তারা।
এ বছর ঢাকেশ্বরী সাজের উপর শান্ত মায়ের রূপ তুলে ধরবে দশমীঘাট ক্লাব। হংকং-এর একটি বিলাসবহুল হোটেল গ্র্যান্ড লিসবোয়ার আদলে এ বছর মণ্ডপ গড়বে তারা। থার্মোকল, পাটশলা, বাঁশবেত এবং লোহার পাইপের সংমিশ্রণে গড়ে উঠবে এই মন্ডপ। স্থানীয় শিল্পী পল্লব দাসের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠবে গোটা মণ্ডপ, গোটা আলোকসজ্জা। সাথে ওড়িশা থেকে হেমন্ত জানা থাকবেন তার সহযোগিতায়। এছাড়াও কুমারটুলি থেকে শম্ভুনাথ নস্কর তাদের প্রতিমা গড়বেন বলে ক্লাবের পক্ষে পুজো কমিটির সম্পাদক সৌরভ রায় জানিয়েছেন। বিগ বাজেটের পুজো না হলেও ক্লাবের সদস্য সদস্যরা মিলে যেটুকু হয়, তাতেই পুজোর দিনগুলিতে আনন্দ উপভোগ করেন তারা।
পুজোর আয়োজনে এ বছর কার্যত ফেলে আসা গ্রাম্য ছবি তুলে ধরতে চায় জয়নগরের যুবসমাজ ক্লাব। বিশেষ করে পশ্চিমবাংলার মেদিনীপুর, বীরভূম এলাকার ঘর-বাড়িগুলিই তুলে ধরা হবে তাদের মণ্ডপসজ্জায়। ক্লাবের পক্ষে যুগ্ম সচিব জয়ন্ত চক্রবর্তী জানান, পুজোকে কেন্দ্র করে বরাবরের মতোই নানা সামাজিক কাজে নিজেদের জড়িত রাখতে চায় তারা। যেমন রক্তদান শিবির থেকে শুরু করে বস্ত্রদান, এমন আরও কত কী।১৯ লাখ টাকার বাজেটে এ বছর দর্শনার্থীদের জন্য তাদের মণ্ডপ খুলবে চতুর্থীর সন্ধ্যায়।
এ বছর মায়ানমারের সোয়েডাগন প্যাগোডার নামজাদা বুদ্ধমন্দিরের আদলে পুজো মণ্ডপ গড়ে উঠবে ঐকতান যুব সংস্থায়। পুজো কমিটির সম্পাদক দীপ দাসগুপ্ত জানান, থার্মোকল, প্লাইউড এবং কাঠের সংমিশ্রণে এ বছর তাদের এই মণ্ডপটি গড়ছেন নবদ্বীপ থেকে আগত শিল্পী সঞ্জীব দেবনাথ। এছাড়াও প্রতিমা সজ্জায় থাকবেন নাড়ুগোপাল দাস এবং আলোকসজ্জায় থাকবেন মিঠুন মজুমদার। বিগ বাজেটের পুজোয় শান্তিপাড়া পুকুরপাড় এলাকায় বরাবরের মতোই দর্শনার্থীদের নজর কাড়তে সক্ষম হয় ঐকতান যুব সংস্থার পুজো মণ্ডপ। এদিক থেকে এ বছরও এর অন্যথা হবে না বলে জানান ক্লাব কর্তৃপক্ষ।বিদুরকর্তা চৌমুহনীর জুয়েলস অ্যাসোসিয়েশন এ বছর ভোকাল ফর লোকালে গুরুত্ব দিয়ে মণ্ডপ গড়তে চায় তারা। স্থানীয় বাঁশবেত আর প্লাইউডের কারুকার্যে কাল্পনিক মণ্ডপ গড়বে জুয়েলস অ্যাসোসিয়েশন। পুজো কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস জানান, স্থানীয় শিল্পী রাহুল ঘোষ এ বছর মণ্ডপ গড়ছেন তাদের। এছাড়াও প্রতিমাসজ্জায় পশ্চিম বাংলার শিল্পীদের সাহায্যে স্থানীয় শিল্পী চিত্ত পাল তাদের প্রতিমা গড়বেন। পুজোর দিনগুলিতে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও বস্ত্র বিতরণ এবং এমন আরও অন্যান্য সামাজিক কাজে নিজেদের জড়িয়ে রাখতে চায় তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *