মোদির ১১ বছর!!

 মোদির ১১ বছর!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গত ২৬ মে ২০২৫ইং,ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি ১১ বছর পূর্ণ করলেন।সেই সাথে ১২ বছরে পদার্পণ করলেন।স্বাভাবিকভাবেই দেশজুড়ে সরকারীভাবে এবং দলীয়ভাবে মোদির শাসনকালের ১১ বছর পূর্তি উদ্যাপনের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে ১১ বছর পূর্তি উদ্যাপনের কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছে দলীয়স্তরে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বের এই এগারো বছর, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। কেননা, ২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া তার মেয়াদকালে নীতিগত সংস্কার, শাসনব্যবস্থায় রূপান্তরমূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং জাতীয় পরিচয় ও উন্নয়নের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নয়, ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী এবং জনপ্রিয় নেতা হিসেবে মোদির নেতৃত্ব দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামোতে গভীর ছাপ ফেলেছে বলে মনে করেন তারা।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বেই গুজরাট দেশের উন্নয়নের মডেল স্টেট হিসেবে ব্যাপক প্রচারের আলোতে উঠে আসে। এরপরই মোদি জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছেন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তার নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) লোকসভায় ঐতিহাসিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। যা গত ত্রিশ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। একজন নির্ণায়ক, বলিষ্ঠ এবং উন্নয়নকেন্দ্রিক নেতা হিসেবে মোদির আবেদন কোটি কোটি ভারতীয়ের মন অনুরণিত করেছিল, যারা পরিবর্তনের জন্য আগ্রহী ছিলেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মোদি তার ১১ বছরের শাসনকালে দেশকে কী দিয়েছেন? দেশের কতটা উন্নতি সাধন করতে পেরেছেন?এর একটা সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা হওয়া জরুরি বলে মনে করি। গত ১১ বছরে মোদি সরকার অসংখ্য যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এবং উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটা যেমন একটা দিক, তেমনি তার সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত এবং উদ্যোগ সমালোচিতও হয়েছে এই সময়ে। সমালোচনার দিকগুলি না হয় এখন তোলা রইল।এই সময়ে তার মূল অর্জনগুলি নিয়ে একটু আলোকপাত করা যাক।প্রথমত ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-এর লক্ষ্য ছিল উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলা।এই ক্ষেত্রে ভারত আজ অনেকটাই সফল। ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ আজ ভারতকে প্রযুক্তির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে।’স্বচ্ছ ভারত অভিযান (ক্লিন ইন্ডিয়া মিশন)’ এবং ‘উজ্জ্বলা যোজনা’ দেশের লক্ষ লক্ষ মহিলার মুখে হাসি ফুটিয়েছে। ২০১৭ সালে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) বাস্তবায়ন ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলির মধ্যে অন্যতম, এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। যার লক্ষ্য ছিল একটি ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী বাজার তৈরি করা। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল মোদি সরকারের আরেকটি সাহসী পদক্ষেপ। তিন তালাক প্রথা বাতিল মোদি সরকারের আরেকটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। দেশের কোটি কোটি মুসলিম মহিলার মুখে হাসি ফুটেছে। তারা আত্মমর্যাদা ফিরে পেয়েছেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ওয়াকফ সংশোধনী আইন মোদি সরকারের সাহসী পদক্ষেপ। এমন আরও বেশকিছু বড় উদ্যোগ এই সময়ের মধ্যে গ্রহণ করেছেন তিনি।

প্রতিটি ভারতবাসী মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যে, গত ১১ বছরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি বিশ্বব্যাপী ভারতকে একটা বিশেষ অবস্থানে নিয়ে যেতে সফল হয়েছেন। তার সরকার একটি দৃঢ় বিশেষ নীতি অনুসরণ করে চলেছে। আন্তর্জাতিক জোটের মতো উদ্যোগ এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সম্মেলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক অংশীদার হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। জি-২০ দেশের সম্মেলন আয়োজন ভারতকে বিশেষ মর্যাদার স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। এই সময়ে ভারতের সামরিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি দুটোই আরও মজবুত হয়েছে এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এই ১১ বছরে মোদি আধুনিক ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং মেরুকরণকারী ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার মেয়াদকাল সাহসী সিদ্ধান্ত, উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংস্কার এবং ‘নতুন ভারত’-এর জন্য একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ও রূপরেখা হিসেবে চিহ্নিত। কেউ তার নেতৃত্বকে অগ্রগতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখুক কিংবা বিতর্কের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটা অনস্বীকার্য যে তার শাসনকাল ভারতের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নতুন রূপ দিয়েছে। তার এই সফলতা এবং তার উত্তরাধিকার একবিংশ শতাব্দীতে ভারতের পথকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে? সেটাই এখন দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.