September 5, 2025

মুখ্যমন্ত্রীকে ইতিহাস পড়ার পরামর্শ বিরোধী দলনেতার!!

 মুখ্যমন্ত্রীকে ইতিহাস পড়ার পরামর্শ বিরোধী দলনেতার!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বামপন্থীরাই রাজ্যে সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করেছিল বলে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করলেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। বুধবার উত্তর জেলা সফরে এসে সন্ধ্যায় ধর্মনগর সিপিএম পার্টি অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘অজ্ঞের মতো’ ইতিহাস বিকৃতি বলে আখ্যা দেন। সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন দুই বিধায়ক শৈলেন্দ্র চন্দ্র নাথ ও ইসলাম উদ্দিন। বিরোধী দলনেতা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর মতো একজন শিক্ষিত মানুষের কাছ থেকে এমন অশিক্ষিতের মতো মন্তব্য আশা করা যায় না। সারা দেশ ও বিশ্ব জানে, ত্রিপুরায় ১৯৮০ সালে জাতিদাঙ্গা এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের আসল কারণ কী ছিল। জিতেন্দ্র চৌধুরী ১৯৭৮ সালের বামফ্রন্ট সরকারের জনমুখী কার্যকলাপের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, তৎকালীন সরকার ভূমি সংস্কার, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, গ্রামীণ শিক্ষা বিস্তার এবং আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় ত্রিপুরা উপজাতি স্বশাসিত জেলা পরিষদ গঠনের মতো যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিল। তার কথায়, সারা দেশে যখন মিড-ডে মিল বা সামাজিক ভাতার কথা কেউ ভাবেনি, তখন ত্রিপুরায় কমরেড নৃপেন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার তা চালু করে পথ দেখিয়েছিল। তিনি অভিযোগ করেন, বামফ্রন্ট সরকারের এই জনমুখী কর্মসূচিকে ভোটের ময়দানে হারাতে না পেরে তৎকালীন কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র শুরু করে। একদিকে ত্রিপুরা উপজাতি যুব সমিতির মতো দলগুলো আগে বিদেশি বিতাড়ন, পরে এডিসির নির্বাচন স্লোগান তুলে বাঙালি উদ্বাস্তুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়। অন্যদিকে,তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং আমরা বাঙালির মতো সংগঠন রক্ত দেব, এডিসি দেব না স্লোগান দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে। জিতেন্দ্র চৌধুরী মনে করিয়ে দেন, ১৯৮০ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য দিল্লীতে গিয়ে এডিসি আইন খারিজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিরোধী দলনেতার মতে, এই জনমুখী কার্যকলাপকে রুখতেই সেদিন রাজ্যে জাতিদাঙ্গা বাধিয়ে একটি রক্তাক্ত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল এবং সেখান থেকেই উগ্রপন্থার জন্ম হয়। মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ করে তিনি বলেন, আমি ডা. মানিক সাহাকে অনুরোধ করব, আপনার ডানে বামে, সামনে পেছনে যারা বসে আপনার স্তুতি করছে, তাদের দিকে তাকান। তারাই তো সেদিন স্বাধীন ত্রিপুরা এবং স্বাধীন বাঙালিস্তান তৈরির মূল কারিগর ছিল। তিনি বলেন, আশ্চর্যজনকভাবে মুখ্যমন্ত্রীর এই বিবৃতির ঠিক একদিন আগেই আগরতলায় আমরা বাঙালি মিছিল করে একই সুরে বলেছে যে সিপিএম উগ্রপন্থী তৈরি করেছে। তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বাঙালির ফারাক কোথায়? জিতেন্দ্র চৌধুরী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাজ্যের মানুষ ইতিহাস ভুলেনি। নির্বাচনের ময়দানে পেরে না উঠে পেছন থেকে উগ্রপন্থার হাত ধরে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা তখনও ছিল, এখনও অন্য কৌশলে চলছে। স্বাধীন ত্রিপুরা, স্বাধীন বাঙালিস্তান, তিপ্রাল্যান্ড বা গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড এসব শব্দগুলো একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। আমি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, আপনি ইতিহাস পড়ুন। রাজ্যের সর্বোচ্চ পদে বসে এমন অযাচিত ও অসত্য মন্তব্য ত্রিপুরার মানুষ মেনে নেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *