September 5, 2025

মিজোরামে বাজবে বাঁশি, সাজগোজ আগরতলায়!!

 মিজোরামে বাজবে বাঁশি, সাজগোজ আগরতলায়!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আর মাত্র দশদিনের অপেক্ষা।তারপরই রেলপথে জুড়বে মিজোরামের সাইরাঙ।তেরো সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী ট্রেন চলাচল শুরু হবে এই স্টেশনে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে সূচনা করা হবে এর। গুয়াহাটি থেকে সাইরাঙের মধ্যে শুরু হবে যাত্রী ট্রেনের চলাচল। এর জন্য উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। প্রস্তুতি চলছে আগরতলা স্টেশনেও। ত্রিপুরার প্রধান স্টেশনের উপর গুয়াহাটি-সাইরাঙ-গুয়াহাটির জন্য নয়া ট্রেন তৈরির দায়িত্ব পড়েছে। আগরতলায় দুটি ট্রেন তথা রেলের পরিভাষায় রেক তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে একটির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে।এতে মোট কোচ রয়েছে
বারোটি।এর মধ্যে পাঁচটি শয়ন শ্রেণী তথা স্লিপার কোচ।দুটি করে বাতানুকূল তথা এসি থ্রি টায়ার ও সাধারণ তথা জেনারেল কোচ। একটি করে রয়েছে এসি টু টায়ার, জেনারেটর তথা পাওয়ার কার এবং গার্ড ব্র্যাক ভ্যান।এই রেকটি দাঁড় করানো আছে আগরতলা স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে।
আগরতলা স্টেশনে গুয়াহাটি-সাইরাঙ- গুয়াহাটির জন্য অপর ট্রেনটি হবে মোট দশ কোচের। এর মধ্যে আটটি থাকবে সাধারণ শ্রেণীর তথা জেনারেল কোচ। বাকি দুটির মধ্যে একটি থাকবে গার্ড ব্র্যাক ভ্যান ও জেনারেটর তথা পাওয়ার কার। সাইরাঙের সঙ্গে সহসা তেজস রাজধানী এক্সপ্রেসও জুড়তে চলেছে। এর জন্য পুরো ট্রেন তৈরির কাজ চলছে শিলচর স্টেশনে।চলছে আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি।অন্যদিকে আগরতলা-নারিঙ্গি-আগরতলার মধ্যে প্রস্তাবিত বিশেষ এক্সপ্রেসের জন্য ট্রেন তৈরির কাজ চলছে কামাখ্যা স্টেশনে।
সাইরাঙ স্টেশনটি মিজোরামের রাজধানী শহর আইজল থেকে
আঠারো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সাইরাঙ রেল স্টেশনের প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রয়েছে আইজল বিমান বন্দর। – এর আগে মিজোরামের ভৈরবীতে রেলপথের সংযোগ ঘটেছে। এই ভৈরবী আসলে আসামের হাইলাকান্দি জেলার সীমানায় অবস্থিত। হাইলাকান্দি জেলার -জামিরা স্টেশনের পরই মিজোরাম সীমান্ত। ২০১৬ সালের ২১ মার্চ মিজোরামের ভৈরবী স্টেশনের সঙ্গে যাত্রীট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর বহু আগে ব্রিটিশ যুগে হাইলাকান্দি সহ আসামের বরাক উপত্যকায় রেলপথ চালু হয়ে গেছে।
টানা প্রায় সাড়ে চার বছর ভৈরবী মিজোরামের একমাত্র স্টেশন হিসাবে রেল সংযোগের পরিচয় বহন করেছে। কিছুদিন পরই আইজলের কাছাকাছি এলাকা জুড়ে যাবে রেলপথে। শিলচর স্টেশন সংলগ্ন কাটাখাল জংশন, বদরপুর জংশন হয়ে হাইলাকান্দি থেকে যেতে হয় ভৈরবী।আর এই ভৈরবী স্টেশন থেকে ৫৩.৩৮ কিলোমিটার দূরে সাইরাঙ স্টেশন। ভৈরবী থেকে হিসাব ধরলে মিজোরামে মোট প্রায় আটান্ন কিলোমিটার রেলপথ হয়েছে। আবার কাটাখাল – জংশন থেকে ভৈরবী স্টেশনের দূরত্ব প্রায় তিরাশি কিলোমিটার।
২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর সাইরাঙ স্টেশনের ভিত্তিপ্রস্তর বসানো হয়। বসান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই হিসাবে ভৈরবী-সাইরাঙ রেলপথ তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় এগারো বছর। এই দুই স্টেশনের মাঝখানে আরও চারটি স্টেশন তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে আছে হর্তোকি, কাউনপুই এবং মুয়ালখাঙ। পুরো রেলপথটি পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠেছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকার রেলপথে মোট ১৪২টি সেতু রয়েছে। এইগুলির ৫৫টি বড়। ৮৭টি মাঝারি ও ছোট। এর মধ্যে ৯৬ নম্বর সেতুটি রেলের প্রকৌশলের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মাটি থেকে এর – উচ্চতা ১১৪ মিটার। কুতুব মিনার থেকে এর উচ্চতা বেশি ৪২ মিটার।
শুধু সেতু নয়, রয়েছে মোট ৪৮টি কৃত্রিম সুড়ঙ্গ। সবচেয়ে বড় সুড়ঙ্গটি দৈর্ঘ্যে – প্রায় তেরো কিলোমিটার। সোজা কথায় ১২ কিলোমিটার ৮৫৩ মিটার। এখানেই – শেষ হয়ে যায়নি প্রকৃতির কোলে দাঁড়িয়ে থাকা রেলপথটির বৈচিত্র্য এবং বিস্ময়। -এই রেলপথে মোট এগারোটি সড়ক সংযোগকারী সেতু রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি – রয়েছে রেলপথের নীচে এবং ছয়টি রেলপথের উপরে। রেলের পরিভাষায় রোড ওভার ব্রিজ এবং রোড আন্ডার ব্রিজ আসলে স্থানীয় সড়ক যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্মাণ করা হয়েছে।
ভারতের পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ এবং মায়ানমার সীমান্তের কাছে দাঁড়িয়ে আছে ভারতীয় রেলের গর্বের এই কারিগরি উদাহরণ।নানা ভূ-প্রাকৃতিক এবং অবস্থানগত বাধা অতিক্রম করে নির্মাণ করতে হয়েছে এই রেলপথ। ২০২৩ সালে এই রেলপথের সবচেয়ে উঁচু সেতু নির্মাণের সময় ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।ওই বছর আগষ্ট মাসে নির্মাণকাজে নিয়োজিত আঠারোজনের মৃত্যু হয়েছে। এর – উপর দুর্গম পাহাড়ি জনমানবহীন এলাকায় রেলপথ নির্মাণে পোহাতে হয়েছে – নানা ধরনের যন্ত্রণা। টানা বর্ষণের মতো সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে বারবার। সব বিপত্তি কাটিয়ে, বাধা এড়িয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানো রেলপথে – নিয়মমাফিক পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করেছে চলতি ২০২৫ সালের মে মাসের ১ তারিখ। মিলেছে যাত্রীট্রেন চলাচলের প্রশ্নে রেলের সুরক্ষা কমিশনারের প্রয়োজনীয় অনুমোদন। আপাতত শুধু অল্প কিছুদিনের অপেক্ষা। তারপরই মিজোরামের রাজধানী শহরের কাছে শোনা যাবে রেলের বাঁশির সুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *