August 2, 2025

মধ্যবিত্তের ভবিষ্যৎ!!

 মধ্যবিত্তের ভবিষ্যৎ!!

দেশের অন্যতম বড় শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির দে বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আমেরিকার আদালত। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।এমন একটি ইস্যু সামনে আসতেই স্বাভাবিকভাবেই লুফে নিয়েছে বিরোধী দলগুলি। নেওয়াটাই স্বাভাবিক। কংগ্রেস নেতা তথা সংসদের বিরোধী দল নেতা রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের অন্যান্য নেতৃত্ব সরাসরি আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।এআইসিসি ভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধী একের পর এক নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে। রাহুলের বক্তব্য,আদানি কিংবা সেবি প্রধান, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে।অথচ মোদি সরকারের তদন্তকারী সংস্থাগুলি এই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয় না।তারা দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে পাঠায়।অথচ আদানির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও দায়ের হয় না।
ভারতের এই শিল্পপতির বিরুদ্ধে জালিয়াতি, দুর্নীতি, ঘুষ দেওয়ার মতো মারাত্মক সব অভিযোগ সামনে এনেছে আমেরিকার প্রধান তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই। তদন্তকারী সংস্থাটির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি জেলা আদালত অভিযুক্ত করেছে আদানি গোষ্ঠীকে।এখন সব থেকে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই খবর সামনে আসতেই আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারে যেমন পতন দেখা দিয়েছে, তেমনই ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, ভারতীয় জীবন বিমা (এলআইসি) সংস্থার শেয়ারেও ধস নেমেছে।
এমন পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।তাদের মতে, আদানি গোষ্ঠী ডোবার অর্থ, মধ্যবিত্তের ভরসা এলআইসি, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পতন। আগামীদিনে আদানি গোষ্ঠী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সাধারণ মানুষও সর্বস্বান্ত হতে পারেন।কারণ, এই সংস্থাগুলি আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান মোতাবেক আদানি গোষ্ঠীর সাতটি সংস্থায় এলআইসির বিনিয়োগ রয়েছে।একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদানি গোষ্ঠীর সব সংস্থার প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকারও বেশি শেয়ার ক্রয় করেছে এলআইসি। বৃহস্পতিবার মার্কিন মুলুকের এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই মাত্র একদিনে এলআইসির প্রায় বারো হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। অর্থাৎ আগামীদিনে আদানি গোষ্ঠী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সাধারণ মানুষ কষ্ট করে এলআইসির মতো যেসব সংস্থায় টাকা রাখেন, তারাও ধাক্কা খেতে পারেন। আর তাতে বড় বিপদে পড়তে পারেন দেশের মধ্যবিত্ত জনগণ। আশঙ্কা এখানেই।
আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ধাক্কা লেগেছে ব্যাঙ্কগুলিতেও।কেননা, একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক আদানি গোষ্ঠীকে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে।আদানির টাকা ডোবার অর্থ, সেই টাকা ফেরত আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। সেই অনিশ্চয়তা থেকেই বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির শেয়ারের গ্রাফ হু হু করের নীচের দিকে নেমেছে।শুধু ব্যাঙ্কই নয়, অন্যান্য অর্থনৈতিক সংস্থাগুলিও আদানি গোষ্ঠীকে ঋণ দিয়েছে। খবরে প্রকাশ, সব মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এদিন একদিনেই আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে প্রায় ২০ শতাংশ ধস নেমেছে। একদিনে প্রায় ২.২ লক্ষ কোটি টাকা ডুবে গিয়েছে আদানি গোষ্ঠীর।তাই আদানিরা যদি ঋণ পরিশোধ করতে না পারে, তাতে কী হবে এটা ভেবেই আশঙ্কিত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, আদানি গোষ্ঠীর এই ধাক্কা সামলাতে গিয়ে আগামীদিনে ফিক্সড ডিপোজিট সহ অন্যান্য সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ কমিয়ে দেওয়া হবে না তো? ফলে দেশের আমজনতার ভবিষ্যৎ এখন বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে। এনিয়ে
কোনও সন্দেহ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *