September 1, 2025

ভেন্টিলেশনে পিএসইউগুলি,দুর্বল পরিচালনা, রাজকীয় আয়েশ, দুর্নীতিই মূল কারণ!!

 ভেন্টিলেশনে পিএসইউগুলি,দুর্বল পরিচালনা, রাজকীয় আয়েশ, দুর্নীতিই মূল কারণ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের পিএসইউগুলির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত বিশেষ রিপোর্ট দৈনিক সংবাদে ফাঁস হওয়ার পরই জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সব থেকে বিস্ময়কর ঘটনা হলো, রাজ্যের অর্থনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত এই সংস্থাগুলি দীর্ঘ বছর ধরে রাজনৈতিক পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।সবথেকে মারাত্মক বিষয় হলো,সংস্থাগুলি পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং হলেও,এই সংস্থাগুলি পরিচালনার দায়িত্বে একজনও পাবলিক রিপ্রেজেনটেটিভ অর্থাৎ জনপ্রতিনিধি নেই।২০১৮ সালে সরকার পরিবর্তনের পর পিএসইউগুলি শাসকদলের নেতা নেত্রীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ফলে ওই নেতা নেত্রীদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সরকার এবং জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। যে কারণে যা হওয়ার তাই হয়েছে। দীর্ঘ বাম আমলে রুগ্ন হয়ে পড়া পিএসইউগুলো ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, বরং দুর্বল পরিচালনা, অপ্রয়োজনীয় খরচ এবং দুর্নীতির কারণে এখন একপ্রকার কোমায় চলে গেছে।
এখানে একটি উদাহরণ তুলে ধরলে
বিষয়টি জনগণের সামনে আরও স্পষ্ট হবে। যেমন টিআইডিসি, রাজ্যের শিল্প উন্নয়ন নিগম। ১৯৭৪ সালে ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের জন্ম হয়েছে। এক সময় এই শিল্প উন্নয়ন নিগম রাজ্যের অন্যতম লাভজনক একটি পিএসইউ হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করে।
দীর্ঘ বাম আমলের শেষ পাঁচ থেকে সাত বছরে টিআইডিসির অবনতি শুরু হয়। তারপরেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮-এ রাজ্যে সরকার পরিবর্তনকালে টিআইডিসি ভালো একটা অবস্থানে ছিলো। টিআইডিসির নিজস্ব ফান্ড এবং বিভিন্ন প্রজেক্টের ফান্ড মিলিয়ে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ছিলো শিল্প নিগমের কোষাগারে। জানা গেছে, ওই সময়ে রাজ্যের পিএসইউগুলির মধ্যে শিল্প নিগম ছিলো এক নম্বর স্থানে। শিল্প নিগমের মূলত দুটি কাজ। এক, শিল্প স্থাপনে ইচ্ছুক যুবক-যুবতীদের আর্থিক সাহায্য করে রাজ্যে শিল্প স্থাপনে সহায়তা করা। বহিঃরাজ্যের শিল্পপতিদের রাজ্যে এনে শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করা এবং সহায়তা করা। দুই, শিল্প সহায়ক পরিবেশ এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন করা। দেশের অন্য রাজ্যগুলিতে এই দুটি কাজ করার জন্য পৃথক দুটি নিগম থাকে। যাকে বলা হয় ‘স্টেট ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশন’ এবং ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’। ত্রিপুরা যেহেতু ছোট রাজ্য তাই এই দুটি কাজ একসাথে শিল্প নিগমই করে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের নিগমের বিশেষ করে শিল্প উন্নয়ন নিগমের বোর্ড অব ডাইরেক্টর অর্থাৎ পরিচালন বোর্ড হতে হবে এককথায় ওজনদার। পরিচালন বোর্ডে এমন সব লোক থাকতে হবে, যাদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন না থাকে। কেননা, এখানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের ব্যাপার রয়েছে। যারা বিনিয়োগ করবে তাদের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস ও ভরসা তৈরি করার মতো মানুষ থাকতে হবে বোর্ড অব ডাইরেক্টরে। যাদের দেখে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ও ভরসা পাবে। বোর্ডের মাথায় এমন অভিজ্ঞ মানুষ থাকতে হবে, যিনি রাজ্যে হোক কিংবা বহিঃরাজ্যে বিভিন্ন শিল্প সম্মেলনে অংশ নিয়ে শিল্পপতিদের আকৃষ্ট করতে পারেন। বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়তে পারেন। পশ্চিমবঙ্গ শিল্প উন্নয়ন নিগমে সোমনাথ চ্যাটার্জির মতো মানুষ দীর্ঘ কুড়ি বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। অমিত মিত্র’র মতো প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ একসময় দায়িত্ব পালন করেছেন। আর আমাদের রাজ্যে বাম আমলে শিল্প নিগমের মাথায় ছিলেন কখনো এমপিরা, কখনো মন্ত্রীরা। ২০১৮ সালে সরকার পরিবর্তনের পর শিল্প নিগমের পরিচালন বোর্ডও পরিবর্তন হয়। নতুন মুখ আসে। প্রথম চেয়ারম্যান হন টিংকু রায়, এখন তিনি রাজ্যের মন্ত্রী। টিংকু রায়ের পর এখন শিল্প নিগমের চেয়ারম্যান নবাদল বণিক। বর্তমানে তিনিই এই দায়িত্ব পালন করছেন। গত সাড়ে সাত বছরে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের আর্থিক অবস্থার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টে তা খুবই উদ্বেগজনক। ২০১৮ সালেও যে সংস্থার হাতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ছিলো, সে সংস্থা এখন লোকসানে! সম্প্রতি শিল্প নিগমের চেয়ারম্যান একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেছিলেন যে নিগমের এবার ৯ কোটি টাকার মতো আয় হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে খরচ কত হয়েছে? সেটা কিন্তু জানা যায়নি। আয় বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, সেটাও স্পষ্ট হয়নি।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন শেষ করবো আপাতত। যেমন পূর্বাশা। এখন কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে পূর্বাশাকে ঘিরে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। শাসক দলের এক পাতি মাতব্বর একটি এনজিও খুলে পূর্বাশার যাবতীয় মেলা আয়োজনের নামে অর্থ লুটের পাকা বন্দোবস্ত করে নিয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। আরেক চেয়ারম্যান তো নিগমের কর্মীদের বাড়িতে এনে বাড়ির কাজ করান প্রায়ই। এসবই চলছে। আসলে লক্ষ্য একটাই, কামাই আর রাজকীয় আরাম-আয়েশ। বাকি সব ধ্বংস হয়ে যাক।এতে কারোর কোনো মাথাব্যথা নেই।জনমনে প্রশ্ন,এর নামই কি সুশাসন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *