August 6, 2025

ভূতের বাড়িতে দুই লাখি এইচ আর জি এম বসানোর ইন্টারভিউ!!

 ভূতের বাড়িতে দুই লাখি এইচ আর জি এম বসানোর ইন্টারভিউ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডে বিদ্যুৎ উৎপাদন নেই।তেমন কোনও কর্মীও নেই। জেনারেশনের ভবিষ্যৎ নিয়েও রয়েছে বড় ধরনের প্রশ্ন। তবুও প্রতিষ্ঠানটির বারান্দায় এখন চলছে লাখোয়ারি ডেকোরেশনের কাজ! রঙ-বেরঙের পোস্টার ছাপিয়ে, নিয়োগের ঢাক পিটিয়ে প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। উদ্দেশ্য, একজন হিউম্যান রিসোর্স জেনারেল ম্যানেজার নিয়োগ করা। যার মাসিক বেতন হবে দুই লক্ষ টাকা!
রাজ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বাস্তব ছবি যদিও কফিন বন্দি। গোমতী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল হয়ে পড়ে আছে মৃতপ্রায় হয়ে। বড়মুড়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। কর্মচারীরা সেখানে ঝাড়ুদার হিসেবেই চাকরি আঁকড়ে রয়েছেন বলে খবর। আর রুখিয়া প্রকল্পে যেখানে ৬০ মেগাওয়াট উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল, এখন ১৫ মেগাওয়াট উৎপাদনও হয় কিনা সন্দেহ।
এই শোচনীয় বাস্তবতার মাঝেও জেনারেশন লিমিটেডে চলছে পদ তৈরির কারসাজি! যেখানে বিদ্যুৎ নিগমে আজ অবধি কখনও হিউম্যান রিসোর্স জেনারেল ম্যানেজার নামক কোনও পদ নেই, সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনহীন একটি প্রতিষ্ঠানে এই পদে নিয়োগ ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রবল বিতর্ক। বিদ্যুৎ নিগমে এখনো পর্যন্ত একজন ইলেকট্রিক্যাল ডিজিএম অতিরিক্ত দায়িত্বে এইচআর সামলাচ্ছেন এবং সঙ্গে রয়েছেন সিনিয়র ম্যানেজার। কাজ চলছে নির্বিঘ্নেই। তাহলে জেনারেশন কোম্পানির জন্য আলাদা করে হিউম্যান রিসোর্স জেনারেল ম্যানেজার কেন?
জবাব খুঁজলে খুঁজে পাওয়া যায় এক রহস্যময় চরিত্রের। কুখ্যাত কেলে আমলের এই কর্মকর্তা বর্তমানে নির্বাসনে ভূতের বাড়ি বলে পরিচিত জেনারেশন লিমিটেডে কাগজে-কলমে বসে আছেন। কাজ নেই, কিন্তু উচ্চাকাঙক্ষা প্রবল। জানা গেছে, তার নেতৃত্বেই চলছে দুই লক্ষ টাকার চাকরি প্রাপ্তির মঞ্চায়ন। অভিজ্ঞতার শর্ত এমনভাবে সাজানো হয়েছে, কমপক্ষে কুড়ি বছরের অভিজ্ঞতা, যাতে একমাত্র তিনিই ফিট হন। যদিও কাজে তিনি অষ্টরম্ভা। কাজে চূড়ান্ত ফাঁকিবাজ বলেই তাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে রাখা হয়েছে। এবার কৌশলে তিনি বাগিয়ে নিতে চলেছেন দুই লাখি চাকরির পদ।
৬ আগষ্ট ইন্টারভিউ প্রার্থী একজন, সেটা তিনি নিজেই।ফেল করলেও চাকরি নিশ্চিত,পাস করলেও চাকরি পাকা! কারণ,প্রতিদ্বন্দ্বী তো কেউ নেই! যারা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছিলেন তাদেরকে নানা কৌশলে এই ব্যক্তিই ছাঁটাই করে দিয়েছেন।কারণ আবেদনকারীদের ঝাড়াই বাছাই প্রক্রিয়ায় তিনি ছিলেন প্রধান।
অথচ রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও পদের জন্য যদি একটি মাত্র আবেদন আসে, সেটি বাতিল করে পুনরায় বিজ্ঞাপন দিতে হয়। এমনকি টেন্ডার প্রক্রিয়াতেও একক আবেদন মানেই বাতিল। কিন্তু এখানেই ব্যতিক্রম! ভূতের বাড়ির চাকরি যেন অলৌকিক নিয়মে চলে। নিয়মের কোনও বালাই নেই।
প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনই নেই, বেতন চলে বিদ্যুৎ নিগম থেকে, সমস্ত কর্মচারী নিগমের নিয়ন্ত্রণে, সেখানে হিউম্যান রিসোর্স জেনারেল ম্যানেজারের মতো মোটা বেতনের পদ কেন? প্রকৃতপক্ষে এই মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল প্রোডাকশন জেনারেল ম্যানেজার বা প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিগত পদ। দরকার ছিল উৎপাদনের রূপরেখা, পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের। কিন্তু সেখানে টুপির উপর পাগড়ি চাপিয়ে ভূতের রাজ্যে চলছে নিজের জন্য নিজেই চাকরি তৈরির কারসাজি। অনেকেই বলছেন, এটা নিছক কোনও নিয়োগ নয়, এটা কোটি টাকার খেলা। আর সেই খেলার প্রধান খেলোয়াড় কেলে আমলের সেই ধুরন্ধর। যাকে নিয়মের দুর্নীতি সম্রাট কেলে মানসপুত্র বলে মনে করতেন। যার আড়ালে চলছে বিদ্যুৎহীন জেনারেশন কোম্পানিকে ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য পরিণত করার চেষ্টা।
জনগণের করের টাকায় পরিচালিত একটি পরিত্যক্ত সংস্থায় এমন নাটকীয় পদ তৈরি করে, একক প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা যদি বাস্তবে রূপ পায়, তাহলে প্রশ্ন তো উঠবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *