ভালুক আতঙ্কে জবুথুবু গোটা উত্তর জেলা, গভীর ঘুমে প্রশাসন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- হিমালয়াণ ব্ল্যাক বিয়ার (ভালুকের) বিচরণে উত্তর জেলার বিভিন্ন মহকুমার প্রত্যন্ত অঞ্চল জুড়ে সম্প্রতি ভালুক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমে অরণ্যে খাদ্যাভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। অরণ্য ধ্বংস ও নির্বিচারে বৃক্ষ নিধানের কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভেঙে পড়েছে।
ফলে মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যপ্রাণীরা ক্রমশ মানুষের বসতি পাড়ার দিকে চলে আসছে। উত্তর জেলার হেলেনপুর, খেদাছড়া, কালাপানি, থুমছাপাড়া, বৃক্ষতল, লুংগির, থারমা পাড়া, দমদই, সিমলুং, রাইমনি পাড়া, ব্রজকুমার পাড়া ও মধুচন্দ্রপাড়ার মতো এলাকাগুলি এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ক্ষুধার্ত ভালুকেরা ছড়ার জল খেতে আসছে। বাঁশঝাড়ে করুল খুঁজতে গিয়েই হঠাৎই গ্রামাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে। মানুষের উপস্থিতি টের পেতেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
চলতি বছরেই একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুধু এই মাসেই খেদাছড়া গ্রামে ভালুকের আক্রমণে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় পুরো এলাকা শোকস্তব্দ হয়ে পড়ে এবং গ্রামবাসীদের ভয় আরও বেড়ে যায়। জুমিয়ারা জুমে একা কাজ করতে পারছে না।
মহিলারা ছড়া থেকে জল আনতে যাচ্ছে দল বেঁধে। রাতে গ্রাম জুড়ে নেমে আসছে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। মানুষ দল বেঁধে চলাফেরা করছে।
স্থানীয় জুমিয়ারা অভিযোগ করেছে, ফসল কেটে আনার সময় হঠাৎ ভালুক আক্রমণ করছে। বাঁশঝাড় থেকে করুল তুলতে গিয়েও প্রাণহানির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। থুমছারাইপাড়া, হেলেনপুরে অনেকে ইতিমধ্যে আহত হয়েছে।
গৃহপালিত পশুর উপরও আক্রমণ হচ্ছে নিয়মিত। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির বিপর্যস্ত। উল্লেখ্য, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার প্রজাতির এই ভালুক প্রায়ই দেখা যাচ্ছে উত্তর জেলার বিভিন্ন বনাঞ্চলে। গ্রামের পাশে অরণ্যে যেমন তারা ঘোরাফেরা করছে, তেমনি বসতি পাড়ার ভেতরেও প্রবেশ করছে। লকিন্তু কত সংখ্যক ভালুক আছে এর সঠিক তথ্য বন দপ্তরের কাছে নেই। দপ্তরের কর্মকর্তারা অনুমান নির্ভর বক্তব্য রাখলেও প্রকৃত তথ্য জানা যাচ্ছে না।
ফলে কার্যকর কোনো পরিকল্পনা নেওয়া যাচ্ছে না। গ্রামবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। কোনো প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ নেই। ফলে সাধারণ মানুষ নিজেদের ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছে এই বিপদের মূল কারণ অরণ্য ধ্বংস। বন্যপ্রাণীর জন্য বিকল্প খাদ্য সংস্থান তৈরি হয়নি।
অবৈধ কাঠ পাচার বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। ফলে গ্রামে ঢুকে পড়ছে ক্ষুধার্ত বন্যপ্রাণীরা। মানুষ আজ সেই অব্যবস্থাপনার খেসারত দিচ্ছেন। এখন সময় হয়েছে প্রশাসন ও বন দপ্তরের জবাবদিহি নিশ্চিত করার।
প্রথমে জরুরি ভিত্তিতে ভালুক গণনা শুরু করা উচিত। গ্রামাঞ্চলে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা জরুরি। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে প্রাণহানি অব্যাহত থাকবে। উত্তর জেলার বিভিন্ন মহকুমার বাস্তবতা হলো- ভালুক আতঙ্ক ও প্রশাসনের অবহেলার দুঃসহ বোঝা। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি মানুষের জীবন প্রতিদিন নতুন করে হুমকির মুখে পড়ছে।
যতদিন না কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় ততদিন হিমালয়ে ব্ল্যায়ান বিয়ারের ভয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন এক দুঃস্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে।