বেহাল স্মার্ট সিটি!!

স্মার্ট সিটি আগরতলার বড় বেহাল দশা চলছে।দিন দিন স্মার্ট স্মা সিটি আনস্মার্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষজনের নিত্য সমস্যা, দুর্ভোগ চরমে উঠছে। বিশেষ করে দুর্গাপুজোর মুখে স্মার্ট সিটির বেহাল দশা জনমনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে। এমন অবস্থা যে আগরতলা শহরে হাঁটাচলা করাই দায়। সবচেয়ে বড় কথা হল স্মার্ট সিটির এই বেহাল দশা চললেও এর কোনো দেখভাল নেই। সব কাজ যেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কিছু নির্মাণ শ্রমিক, ডজার চালক আর ঠিকাদারদের হাতে। এরা এদের মর্জিমতো সব কাজকর্ম করছে। ফলে কোথাও গ্যাসের লাইন কাটা পড়ছে তো কোথাও জলের লাইন কাটা পড়ছে। কোথাও বিদ্যুতের তার ছেঁড়া হচ্ছে, টেলিকম লাইন কাটা পড়ছে। ফলে নিত্যদিন মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে বৈ কমছে না।
আদতে আগরতলা শহরে স্মার্ট সিটির কাজকর্ম দেখলে মনে হবে যেন উন্নয়ন দ্রুত গতিতে চলছে। আদতে এতে করে মানুষের ভোগান্তি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এমনিতে যেকোনো বড় শহরেই উড়ালপুল কিংবা মেট্রো সম্প্রসারণ কিংবা ড্রেনের কাজ চললে মানুষের কিছুটা ভোগান্তি চলে। মানুষ তা মেনেও নেয়। কেননা উন্নয়নের সুফল পেতে গেলে মানুষকে কিছুদিন কিছু গঞ্জনা, যন্ত্রণা সহ্য করে নিতে হয়। এটাই বাস্তব। কিন্তু আগরতলা শহরে যা চলছে, পুরোটা চলছে বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্যবিহীনভাবে। অবৈজ্ঞানিকভাবে। পার্ক নির্মিত হচ্ছে, কিছুদিন পর পার্ক বেহাল হয়ে পড়ছে। রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে, কিছুদিন পর রাস্তার ছালবাকলা ওঠে যাচ্ছে। ড্রেন নির্মিত হচ্ছে, ড্রেন দিয়ে জল যাচ্ছে না-এমন অভিজ্ঞতা মানুষের নিত্যদিনের। হাওড়ার কী অবস্থা! হাওড়ার ড্রেজিং নেই, বেশি বৃষ্টি হলে কাটাখালের বাঁধ বা হাওড়ার বাঁধের কথা তখন মনে হয়। বালির বস্তা দিয়ে বাঁধের ফাটল কোনোরকমে রোধের চেষ্টা হয়। গত বছরের বন্যা থেকে কিছু শিক্ষা নিয়েছে কি স্মার্ট সিটির কর্তারা?
আসলে রাজধানীতে স্মার্ট সিটির কাজ চলছে পরিকল্পনাবিহীনভাবে। কোনো পরিকল্পনা নেই। আগরতলা পুর কর্পোরেটরদের কোনো ভূমিকা চোখে পড়ছে না। কর্পোরেটররা কী কাজ করছেন তা সাধারণ্যে ধরা পড়ছে না। বর্তমানে চারিদিকে ড্রেনের খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে মানুষ একেবারে তিতিবিরক্ত।রাস্তা সম্প্রসারণ যদি মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে এবং একই সাথে ড্রেনগুলিকে কভার ড্রেনে রূপান্তরিত করাই যদি স্মার্ট সিটির কর্তাব্যক্তিদের উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে অন্যরকম আগরতলা তারা উপহার দিতে পারতেন শহরবাসীকে। কিন্তু আদতে কাজ হচ্ছে অবৈজ্ঞানিকভাবে, পরিকল্পনাহীনভাবে।কোথাও রাস্তা সামান্য সম্প্রসারিত হচ্ছে, কোথাও রাস্তা আবার ড্রেনের ফলে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ড্রেনগুলিকে এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যেন মনে হবে ড্রেনগুলি জল যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে না। আদতে পয়সার আদ্যশ্রাদ্ধ হচ্ছে সবটাই। ড্রেন তৈরি হচ্ছে উঁচু নীচুভাবে। কোথাও বা ড্রেন বাঁকানো রূপ নিচ্ছে, সর্পিলাকার রূপ নিচ্ছে। সোজা রাস্তায় একদিকে বাঁদিকে ড্রেন চাপানো হচ্ছে, আবার কিছু দূর গিয়ে দেখা যাচ্ছে রাস্তা ডান দিকে চেপে গেছে। ড্রেন নির্মিত হচ্ছে। এবং কভার ড্রেন নির্মিত যে হচ্ছে তা যদি সত্যি সত্যি আগরতলা শহরকে জলডুবির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হতো তার জন্য বড় প্ল্যান নেবার দরকার ছিল। আদতে এর কিছুই হয়নি। এবং ড্রেন নির্মিত হচ্ছে অত্যন্ত সরু। ফলে আসল উদ্দেশ্য সাধিত তো হবেই না, আদতে টাকার আদ্যশ্রাদ্ধ হচ্ছে।
শুধু তাই নয়,খোঁড়াখুঁড়িতে পাইপ গ্যাসের লাইন, জলের লাইন প্রায়ই কাটা পড়ছে। ফলে অর্থ গচ্ছা যাচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, কোনো সমন্বয় নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির।কিছুদিন আগে স্মার্ট সিটির সিই ও বলেছেন, স্যার্ট সিটির কাজ নাকি পায় শেষ হয়ে গেছে।তো এখন যে গোটা আগরতলা জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে, কভার ড্রেন নির্মিত হচ্ছে এগুলি কী? এরপর বিদ্যুতের খুটি, লাইন, ট্রান্সফরমার -এগুলি যে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এগুলির কী হবে? অর্থাৎ স্মার্ট সিটির কাজে দেখা গেছে সমন্বয়হীনতার অভাব, পরিকল্পনার অভাব, তদারকির অভাব।
এভাবে স্মার্ট সিটির তকমা হয়তো পাওয়া যাবে কিন্তু মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারবে না। কোনো শহর তখনই স্মার্ট হবে যখন তাতে পরিকল্পনার ছাপ থাকবে এবং তা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হয়, স্মার্ট সিটির এই অপরিকল্পিত কাজের মাশুল গুনতে হয় শহরবাসীকে। নিত্য ট্রাফিক জ্যাম এখন আগরতলা শহরের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। সুতরাং স্মার্ট সিটির কাজকে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করার আগে দরকার ছিল সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের। যদিও এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তারপরও বলা যায় সময় এখনও আছে। পুজোর মুখে স্মার্ট সিটির কাজ আপাতত বন্ধ রাখাই শ্রেয় জনগণের
দিকে চেয়ে।পুজোর পর ফের বাকি কাজগুলির সুষ্ঠু তদারকি এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করে তবেই এগোনো দরকার।