December 15, 2025

বিলুপ্তির পথে গ্রাম ত্রিপুরার ছন!!

 বিলুপ্তির পথে গ্রাম ত্রিপুরার ছন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিকভাবে উপকরণ ছন। জীবন জীবিকার প্রশ্নে এক সময় উপজাতিরা জঙ্গল থেকে ছন সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতেন। আর সে বিক্রি করা অর্থ দিয়ে সংসারের জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে ছন ক্রমশ বিলুপ্তির পথে বসেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছনের চাহিদা থাকলেও সে পরিমাণ ছন পাওয়া যায় না। অন্যান্য কৃষিকাজের মতো ছনের জন্য আলাদা চাষাবাদ করতে হয় না। চাষাবাদে তেমন পরিশ্রম নেই। শুধুমাত্র পাহাড়ের যে অংশে ছন চাষ করা হবে তা পরিষ্কার করে দিলে কিছুদিন পর প্রাকৃতিকভাবে ছনের কুঁড়ি জন্ম নেয়। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বা টিলা ভূমিতে এই ছন গজায়। তবে ছন উঠবার সাথে সাথে জায়গাটি আগাছা তুলে জায়গাটা পরিষ্কার করলে চলতো।এরপর একটু বড় হলে তা কেটে দিলে হয়।কমপক্ষে দশ বারো দিন শুকাবার পর এইগুলি বাজারে বিক্রি করা হয়। ছনের ফলন একসময় ঋষ্যমুখের পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক থাকলেও এখন আর নেই বললে চলে। এই ছন গ্রাম পাহাড়ে দিন দিন বিলুপ্তির পথে। পাহাড়ে যত্রতত্র ছন দেখা যেতো। ক্ষুদ্র বনজ সম্পদ হিসাবে ছন পাহাড়ে একটা জায়গা করে ছিলো। একসময় পাহাড়ি এলাকায় ছনে পরিপূর্ণ ছিলো। ছন গ্রাম পাহাড়ের মানুষের জীবন জীবিকার একমাত্র উৎস ছিলো। পাহাড়ি এলাকার উপজাতিরা জঙ্গল থেকে ছন সংগ্রহ করে ভার করে পাশ্ববর্তী বাজারে বিক্রি করতেন। দাম খুব কম ছিলো। আর এই অর্থ দিয়ে সংসার চালাতেন। এই ছন গ্রামীণ এলাকার নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত এলাকার মানুষ ঘরের চালের ছাউনি হিসাবে ব্যবহার করতেন।একসময় গ্রাম বাংলার ছিলো ছনের ঘর।বাজার থেকে ছন সংগ্রহ করে মানুষ ঘরের ছাউনি হিসাবে ব্যবহার করতেন। প্রতিটি ঘরে ছনের দেওয়া ছাউনি ছিলো।এমনকী কোনো অনুষ্ঠানে মাথার উপর যে ছাউনি ছিলো তাও ছনের তৈরি। গ্রামীণ এলাকার মানুষ বছরে একবার পুরাতন ছনের ছাউনি সরিয়ে নতুন করে ছাউনি দিতেন। এছাড়া উপজাতি এলাকায় জুম চাষের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাহাড়ের এককোণে যে টং ঘর নির্মাণ করা হতো সেটিও ছনের তৈরি।এছাড়া পানের বরজের জমিতেও ছনের ব্যবহার অনেক বেশি।পানের ক্ষেতের চারিদিকে এবং উপরের ছাউনিও ছনের তৈরি। অন্যান্য কাজে ছনের ব্যবহার দিন দিন কমলেও এখনো পানের বরজের জমিতে ছনের চাহিদা আগের মতো রয়েছে। এখন আমাদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। অত্যাধুনিকের ছোঁয়ায় বর্তমানে ছনের তৈরি ঘরের ছাউনি আর চোখে পড়ে না।সরকারীভাবে গ্রাম পাহাড়ের মানুষদের টিনের ছাউনি সহ পাকা ঘর প্রদান করা হচ্ছে। মানুষের আয় উন্নতি অনেক বেড়েছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ কষ্ট করেও ছনের ঝক্কি থেকে রেহাই পাবার জন্য টিন দিয়ে ছাউনি দিচ্ছেন। চাহিদা কমে যাওয়ায় ছন সংগ্রহে আর তেমন উৎসাহ পাচ্ছেন না পাহাড়ি এলাকার মানুষ। এছাড়া গ্রাম পাহাড় এখন রাবার চাষের রমরমা। একটা টিলা ভূমি পেলে রাবার চাষ করতে দেখা যায়।রাবারের বারবারন্তে হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি এলাকায় ছন।
জীবনজীবিকা হিসাবে পাহাড়ি এলাকার মানুষ একসময় ছনের বিক্রির মাধ্যম থাকলেও এখন আর নেই। এরাও এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য পেশায় কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তবে যেভাবে ছন বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে তবে আগামী প্রজন্মের কাছে এই ছন হারিয়ে যাবে চিরদিনের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *