বিতর্কে ধনখড়!!

রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় প্রায়শই বিতর্কের কেন্দ্রে যাবেন।বিশেষ করে অধিবেশন চলাকালে বিরোধীদের বক্তব্যে বাধাদান এবং বিরোধীদের সাথে তর্ক পর্যন্ত তিনি জুড়ে দেন। এ নিয়েই গতবছর সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার জন্য সই পর্যন্ত সংগ্রহ করা শুরু করেছিলেন। যদিও গত বছর প্রস্তাব গ্রাহ্য করা হয়নি। কেননা নামের বানানে ভুল যুক্তি দিয়ে সেই অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দেওয়া হয়েছিলো। ঠিক হয়েছিলো বাজেট অধিবেশনে ফের অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে। কিন্তু সে সময় উপরাষ্ট্রপতি তথা চেয়ারম্যান ধনখড় অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় বিরোধীরা মানবিকতার খাতিরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেননি। তবে আসন্ন সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ধনখড়ের বিরুদ্ধে বিরোধীরা কোন অনাস্থা আনবে কিনা তা এখনও ঠিক হয়নি বা এ বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।
সম্প্রতি ফের বিতর্ক দানা বেঁধেছে উপরাষ্ট্রপতি সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতান্ত্রিক শব্দ বাদ দেবার জন্য যে রাজনৈতিক বিতর্ক এতে অংশ নেওয়ায়।উপরাষ্ট্রপতি একটি সাংবিধানিক পদ।তার রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ না নেওয়ারই কথা। তিনি রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিতেই পারেন না। সম্প্রতি ১৯৭৫ সালে জারি করা জরুরি অবস্থার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি গোটা দেশে ঘটা করে পালন করে। আলোচনাচক্র, বিতর্ক সভা, মকপার্লামেন্ট ইত্যাদি সহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মকে জরুরি অবস্থার সময়কার নানা ঘটনাবলি, পরিস্থিতি তুলে ধরতে এবং তৎকালীন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ইন্দিরা গান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের সে সময়কার কাজকর্মের সমালোচনা করেই বিজেপি তা পালন করে। এই ধরনের এক অনুষ্ঠানে এসে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সহকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবলে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ এই দুটি শব্দ নিয়ে আপত্তি তোলেন এবং তা সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে বাদ দেবার দাবি তোলেন। তার দাবি এবং বক্তব্য ছিল জরুরি অবস্থার সময় এই দুটি শব্দকে প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তদানীন্তন সরকারের তরফে। আম্বেদকরের সংবিধানের প্রস্তাবে এই দুটি শব্দ ছিল না। যদিও রাহুল গান্ধী এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন যে, আরএসএসের আসল স্বরূপ এতদিনে উন্মোচিত হয়েছে। এই সমস্ত পলিটিক্যাল বিতর্কে আচমকা ঢুকে গেছেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। তিনিও সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ২টি শব্দ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ বাদ দেওয়ার বিষয়ে সওয়াল করেন। আর এতেই ফের সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিরোধীদের প্রশ্ন – তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে পারেন কিনা। তিনি সাংবিধানিক পদে বসে রাজনৈতিক মন্তব্য করতে পারেন কিনা। শাসক এবং বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক তরজা চলতেই পারে। কিন্ত এর মধ্যে সাংবিধানিক পদে বসে থাকা ব্যক্তির ঢুকে পড়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীরা।
বিরোধীদের আরও আপত্তি, শাসকের কি ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে আপত্তি রয়েছে? তাহলে তারা পরিষ্কার বলছেন না কেন? উপরাষ্ট্রপতি ধনখড় সংবিধান ইস্যুতে ফের মন্তব্য করা নিয়ে বিতর্কে জড়ালেও এবার তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বিরোধীরা আনবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডে গিয়ে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েছেন উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়। সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের আগে তিনি পুরো সুস্থ হবেন কি না তাও স্পষ্ট নয়। সুতরাং এ যাত্রায় বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা নাও আনতে পারে। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতির পদে বসে তিনি কেন সরাসরি রাজনৈতিক বিতর্কে নিজেকে জড়ালেন তাও বোধগম্য নয়। যদিও বিতর্ক তার চিরসঙ্গী। সে রাজ্যপাল পদ হোক কিংবা উপরাষ্ট্রপতি পদ, আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করতে তিনি ভালোবাসেন। তাই বিতর্ক তার পিছু ছাড়ে না। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালেও বিতর্ক তার পেছনে ধাওয়া করতো। উপরাষ্ট্রপতি পদে বসেও তার সেই সহজাত প্রবৃত্তি রয়েই গেছে। তাই তিনি বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রে।