November 11, 2025

বিজেপির পতন নিশ্চিত, জানান দিল সংগ্রামী জনতাঃ জিতেন!!

 বিজেপির পতন নিশ্চিত, জানান দিল সংগ্রামী জনতাঃ জিতেন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যের বিজেপি জোট সরকারের পতন যে সুনিশ্চিত -তা আজ প্রকাশ্যে বুঝিয়ে দিলেন সংগ্রামী জনগণ। শাসক দলের হাজারো হুমকি, রক্তচক্ষুকে পাত্তা না দিয়ে যেভাবে গোটা রাজ্য থেকে গণতন্ত্র উদ্ধারকারী সংগ্রামী জনগণ আগরতলামুখী হয়েছেন তাতে শাসক দলের ভিত একেবারে নড়েচড়ে গেছে। বিভিন্ন মোটর স্ট্যান্ডগুলিতে শাসক দল হুলিয়া জারি করে গাড়ি বন্ধ রাখলেও প্রতিবাদী মানুষকে আগরতলামুখী হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি শাসকদল।
জনবিরোধী,গণতন্ত্রবিরোধী, শিক্ষক কর্মচারী বিরোধী,সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা বিজেপি জোট সরকারকে রাজ্যবাসী যে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন- তা হাজার হাজার সংগ্রামী মানুষের দৃপ্ত পদচারণা ও প্রতিবাদী মিছিলে অগণিত মানুষের উপস্থিতি আগাম জানিয়ে দিয়েছে। শাসক দল বিজেপির বিদায়ঘন্টা বেজে গেছে। কোনো প্রতিরোধই আজ রাজ্যের কোনো স্থানেই গণতন্ত্র উদ্ধারকারী প্রতিবাদী মানুষকে রুখে দিতে পারেননি। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল যোগেন্দ্রনগর এবং আগরতলা রেল স্টেশনের সমস্ত গাড়িকে অবরুদ্ধ করে রাখলেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রেলযোগে আসা সমাবেশমুখী সংগ্রামী মানুষকে অবরুদ্ধ করে রাখতে পারল না শাসক দল বিজেপি।
প্রতিবাদী মানুষ গাড়ির অপেক্ষা না করে সংগ্রামী মেজাজে প্রতিবাদ মিছিল
করেছে। শুধু তাই নয়, সরকারের সাড়ে সাত বছরের নানা দুর্নীতি, স্বজন পোষণ, নেতা মন্ত্রীদের কেলেঙ্কারি নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে পায়ে হেঁটে প্রকাশ্য সমাবেশে শামিল হয়েছেন। এ থেকেই আজ প্রমাণিত হয়ে গেলো বিজেপি-মথা-আইপিএফটি জোট সরকারের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। যা শুধু সময়ের অপেক্ষামাত্র।
সোমবার রাজধানীর ওরিয়েন্ট চৌমুহনীতে বাম সমর্থিত সিআইটিইউর প্রকাশ্য সমাবেশে বিজেপি জোট সরকারকে ঠিক এভাবেই বিদায়ঘন্টার আগাম বার্তা দিলেন বিরোধী দলনেতা জিতেন চৌধুরী। তার দাবি বামেদের সমাবেশে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে বিজেপি জোট সরকারের পতন নিশ্চিত। শাসক দল বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোর জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছেন রাজ্যবাসী।
ওরিয়েন্ট চৌমুহনীতে বামেদের সমাবেশের যে মঞ্চ হয়েছিল হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে তার চারদিক- শকুন্তলা রোড, আরএমএস, জ্যাকশন গেটের দিক ও রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের দিক পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, সিআইটিইউর সাধারণ সম্পাদক তপন সেনকে পাশে বসিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী আরও বলেন, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি ও কালো টাকায় ভর করে ক্ষমতায় এসে এখন লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। জোটের মিত্র লুটছে এডিসির টাকা। তিনি বলেন, ক্ষমতার দম্ভে এক মন্ত্রী তো বলেই ফেললেন, ‘আমরা তো ঘুষ খাই’! এই মন্ত্রী এখনও বহাল তবিয়তে মন্ত্রী আছেন। এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরার বিজেপির স্লোগান বর্তমানে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এখন হয়েছে নেশা কারবারে, নারী নির্যাতনে, নারী পাচারে ভারতে সেরা ত্রিপুরা।
জিতেন চৌধুরী তিপ্রা মথার সমালোচনা করে বলেন, ‘শুধুমাত্র নির্বাচনি বৈতরণী পার হতেই ওয়ান লাস্ট ফাইট,নো কম্প্রোমাইজ, ত্রিপাক্ষিক চুক্তি বলে তিপ্রাসাদের ভুল বুঝিয়ে এখন ওয়ান নর্থ ইস্ট ধুয়ো তুলতে চাইছে’। মথার উদ্দেশ্য হলো বিজেপিকে সাহায্য করতে হবে সরকার গঠনে।
জিতেন চৌধুরী বলেন,এই সরকার সাত বছর কিছুই করেনি। আগামী আড়াই বছরও লুটবাণিজ্য ছাড়া কিছুই করবে না। তার দাবি, রাজ্যে এসআইআরের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন বেআইনিভাবে আসল ভোটাররের ভোটাধিকার কেড়ে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে-এর প্রতিরোধ হবে। তিনি বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বামেদের সভা-সমিতির অনুমোদন না দিলেও রাজ্যব্যাপী সংগ্রামী মানুষ দলীয় কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
সমাবেশে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, দেশে স্বাধীনতার পর এক জনবিরোধী সরকার চলছে। সাধারণ মানুষের জন্য দুবেলা পেটপুরে খাবার তুলে দিতে পারছে না সরকার। তিনি বলেন, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট নেই কী পরিস্থিতিতে ওই সরকার পরিবর্তন করা হয়েছিলো একটু ভাবুন, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি, আরএসএস- বিজেপি ও বিশ্ব পুঁজিবাদের মাধ্যমে এই পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল, যেটা মানুষের পক্ষে যায়নি।তিনি বলেন, কেরালায় চেষ্টা করেও পারেনি সেখানে বামশক্তির বিকল্প অর্থনীতিকে ধোঁকা দেওয়া যায়নি।
মানিক সরকার বলেন, মিছিলের নাম করে আজকের সভা বানচালেরও চেষ্ট হয়েছিল। শ্রমজীবী মানুষের দৃঢ় মনোভাব সেই চেষ্টাকেই বানচাল করে দিয়েছে মনে রাখবেন, আপনারা কোনো অন্যায় করেননি,মানুষ আপনাদের বিশ্বাস করে তাই নতন নতন মানষ আসছেন।
আক্রমণ আসবে, মাথা ফাটবে, তারপর উঠে দাঁড়াবেন, আবার সভা হবে, পরিবর্তনের পথ প্রস্তুত হয়েছে, কাজে লাগাতে হবে, নেতৃত্বকে সামনে দাঁড়িয়ে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।
সিআইটিইউ সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, ওরা সভা করতে দেবে না বলে হুলিয়া দিয়েছিল। আমরা তো সভা করবো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। আজ শাসক দলের সমস্ত বাধা ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে যে সভা করেছেন সেটাই মানুষের আসল মেজাজ। ওরা করতে দেবে না আমরা করবো এটাই নতুন স্লোগান।
সিআইটিইউর রাজ্য সভাপতি মানিক দে বলেন, এই অবস্থার জন্য দায়ী সরকার। আড়াই মাস আগে বিবেকানন্দ ময়দান চেয়েছিলাম, আমাদের দেওয়া হয়নি। এরপরও সভা আটকাতে না পেরে দক্ষিণ জেলা পুরোপুরি, গোমতী জেলা থেকে সমস্ত গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও রোখা যায়নি।
প্রাক্তন সাংসদ অনাদি সাহু বলেন, শ্রমিক কৃষক, খেত মজুররাই দেশের চালিকাশক্তি, পৃথিবীর ইতিহাসে তারাই নতুন বিশ্ব গড়ার পথ দেখিয়েছেন বারবার। তার অভিযোগ, দুর্নীতিবাজ কেন্দ্রীয় সরকারের হাত ধরে বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি সরকারগুলোকে লুটতরাজের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, দেশকে বেচে দেওয়া হচ্ছে। পকেট ভর্তি করছে ক্ষমতাসীনরা। খনির আইন, বনের আইন পাস করিয়ে পুঁজিপতিদের সিন্দুক ভরে দেওয়া হচ্ছে। সিআইটিইউর সম্পাদক শংকর দত্ত ও নারী নেত্রী জয়া বর্মণ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এরপরেই টাউন হলে শুরু হয় দুদিনব্যাপী সিআইটিইউর ষোলতম রাজ্য সম্মেলনের প্রতিনিধি সম্মেলন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *