December 11, 2025

বিএলও মৃত্যুঃ দায়ী কে?

 বিএলও মৃত্যুঃ দায়ী কে?

এসআইআর নিয়ে এই মহর্তে দেশ উত্তাল।সংসদে প্রতিদিন হৈ হট্টগোল হচ্ছে। বিরোধীরা চায় এই ইস্যুতে আলোচনা। চালাতে গররাজি। ফলে সংসদের কাজকর্মে এর প্রভাব পড়ছে। শুরু সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে শুনানি চলছে। সরকার এ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বিহার দিয়ে। বিহার ভোটের আগে এসআইআর নিয়ে সে রাজ্যেও ব্যাপক শোরগোল পডে গেছিল। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী পরবর্তী অধ্যায়ে বিহারে বিধানসভা ভোেটও হয়ে গেলো। বিপুল সে রাজ্যে ভোটার অধিকার যাত্রা বের করেছিলেন। এসআইআর গরিষ্ঠতা নিয়ে ফের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এনডিএ। এবার ১২ রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়া চলছে এবং সবচেয়ে বেশি চর্চা এসআইআর নিয়ে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় একের পর এক বিএলও-র মৃত্যুর খবর আসছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, বিএলও মৃত্যুর খবর আসছে উত্তরপ্রদেশ থেকেও।
এসআইআর প্রক্রিয়ায় তাই দেশভর এখন প্রবল চর্চিত বিষয় হচ্ছে বিএলও। বিএলও অর্থাৎ বুথ লেভেল অফিসার। গোটা দেশেই বুথ লেভেল অফিসাররা সরকারী কর্মচারী। তারা অন্যান্য দপ্তরের কর্মচারী। অতিরিক্ত কাজ হিসাবে তারা নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ করেন বছরব্যাপী। যদিও এর জন্য তাদের পারিশ্রমিক জুটে সামান্যই। বুথ লেভেল অফিসারদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজকর্ম করা। অথচ এই বুথ লেভেল অফিসাররা পার্ট টাইম কর্মী। নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ সবচেয়ে বেশি করেন এই বিএলও-রাই। মূলত বিএলও-রাই হচ্ছেন নির্বাচন সংক্রান্ত কাজের তৃণমূল স্তরের কর্মী। কিন্তু এরাই নির্বাচন দপ্তরের ভাড়াটে কর্মী, নিজস্ব কর্মী নয়। অন্য সরকারী কর্মচারীরা যেমন শুধু ভোটের সময় নির্বাচনের কাজে যুক্ত হন আবার নির্বাচন শেষ হলে তাদের কাজও শেষ হয়ে যায়, বিএলও-দের কাজটা তেমন নয়। বিএলও অন্যান্য দপ্তরের কর্মী হলেও সারা বছরই বিএলও-র কাজে যুক্ত থাকেন অতিরিক্ত কাজ হিসাবে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন দিল্লীতে যার দপ্তর তা একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। নিজস্ব তার কর্মপদ্ধতি। তাদের কাজে কেউ হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু বর্তমানের নির্বাচন কমিশনের কাজ নিয়ে হাজারো প্রশ্ন রয়েছে। তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাজটা হল সুষ্ঠু ভোট পরিচালনা করা। দেশের সাধারণ নির্বাচন থেকে রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা ভোট করানো নির্বাচন কমিশনের কাজ। অন্যদিকে, রাজ্যে নির্বাচন দপ্তরের কাজ হলো রাজ্যের অধীনস্থ যে নির্বাচনগুলি হয় যেমন পুর ভোট, পঞ্চায়েত ভোট- এগুলি করানো। সবক্ষেত্রেই বিএলও-দের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই বিএলও-রা হচ্ছেন অন্যান্য দপ্তরের কর্মী। কেউ নির্বাচন দপ্তরের কর্মী নয়। অথচ বিএলও-দের উপর গুরুদায়িত্ব নির্বাচনের। এই মুহূর্তে যে এসআইআর হচ্ছে তার মূল কাজটা করছেন বিএলও-রা। এই বিএলও-দের উপর চলছে অতিরিক্ত কাজের চাপ। তারা সবাই সরকারী কর্মচারী। তাই বাধ্য হয়ে মুখটি বজে তারা কাজটি করে যাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গে এই বিএলও-দের অনেকেই চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন এমন খবর এসেছে। উত্তরপ্রদেশ থেকেও এমন খবর এসেছে। প্রশ্ন হলো,নির্বাচন কমিশনের এতো ক্ষমতা, তারা কেন নিজস্ব বিএলও নিয়োগ করছেন না? একেকটা রাজ্যে যত বুথ ততই বিএলও প্রয়োজন। তা তো রাজ্য সরকার নিয়োগ করতেই পারে বিএলও হিসাবে যারা একমাত্র সারা বছর ভোট সংক্রান্ত কাজই করবেন। এ কাজে তো পুরো সময়ের কর্মী দরকার। এই সহজ সরল বিষয়টি কি সরকারের মাথায় বসে থাকা ব্যক্তিরা বুঝেন না? নির্বাচন কমিশনে বসে থাকা বাঘা বাঘা আমলারা বুঝেন না? তারা কেন ‘পার্ট টাইম’ কর্মী দিয়ে কাজটা করাচ্ছেন?
এসআইআর প্রক্রিয়া যে এই মুহূর্তে দেশে চলছে তাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হচ্ছে বিএলওদের। ম্যাপিং করা থেকে শুরু করে প্রতিটি ভোটারের বাড়িতে গিয়ে এনুমারেশন ফরম পৌঁছানো,পরবর্তীতে তা সংগ্রহ করে আবার অ্যাপে আপলোড করা, সবটা আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করা- অনেক সময় অসাধ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু বিএলও-রা মুখ বুজে বেজায় চাপ নিয়ে তা করছেন। অনেকেই চাপ নিতে পরছেন, অনেকেই পারছেন না। ফলে বিএলও-দের মৃত্যুতালিকা বাড়ছে দেশে। এর জন্য দায়ী কে? নির্বাচন কমিশনকে তো এর জবাব দিতে হবে। এসআইআর কেন এত তড়িঘড়ি করানো হচ্ছে? এসআইআর নিয়ে নির্বাচন কমিশনের উপর কারও কি মারাত্মক চাপ রয়েছে? সেই অদৃশ্য শক্তি কারা? বা কে? কেন বিএলও-দের উপর কমিশন এত চাপ সৃষ্টি করছে? কেন বিএলও-দের মৃত্যু হচ্ছে? পশ্চিমবঙ্গে এমনও দেখা গেছে, দিব্যাঙ্গ এক বিএলও অসুস্থ হবার পর তার স্ত্রীকে দিয়ে তার অসম্পূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে। এটা কি অমানবিকতা নয়? নির্বাচন কমিশন বিএলও নিয়োগ করুক নিজস্বভাবে। রাজ্যে রাজ্যে বিএলও নিয়োগ হোক নির্বাচন দপ্তরের তরফে। তাহলে বিএলও-রা একদিকে সারা বছর শুধুমাত্র এ কাজে মনোনিবেশ করতে পারবে এবং অনেক চাপমুক্ত অবস্থায় তারা নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য নির্বাচন দুপুর বিষয়টি নিয়ে ভাবক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *