বর্ষপূর্তির রণসাজ!!

 বর্ষপূর্তির রণসাজ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে টানা ১১ বছর ক্ষমতায় থাকার এক মাইলফলক পূর্ণ করলেন নরেন্দ্র মোদি।২০১৪ সালের ২৬ প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী পদে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিতে তাকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছিলেন প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।সেই থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে আসীন মোদি। গুজরাটের দাহোদরে সোমবার এক অনুষ্ঠানে নিজের ১১ বছর পূর্ণ হওয়ার দিনটিকে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, এই দিনটিতেই আমি প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করি। গুজরাটের জনগণ প্রথমে আমাকে তাদের আশীর্বাদ দিয়েছিলেন। তারপরে সারা দেশের মানুষ। আমি আমার কর্তব্য পালন করে চলেছি। এই সময়কালে আমরা এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়েছি যা অকল্পনীয়, অভূতপূর্ব।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, বিজেপি দল ও সরকার মোদির ১১ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বের সাফল্যের কৃতিত্ব প্রচারে এবার ময়দানে নামছে। যদিও তৃতীয়বার সরকারে আসার পর গত বছরের ৯ জুন নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছিলেন। সেইদিক থেকে আগামী ৯ জুন তৃতীয় মোদি সরকার তাদের প্রথম বর্ষপূর্তি পালন করতে চলেছে। সম্ভবত এই বর্ষপূর্তির দিন থেকেই গোটা বছর ধরে সরকারের সাফল্যের প্রচার নিয়ে মাঠে নামছে সরকার ও দল।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি তথা এনডিএ জোটের ১১ বছর ধরে একনাগাড়ে দেশে সরকার পরিচালনা করা।নিঃসন্দেহে এক অসামান্য কীর্তি। এই অবস্থায় বিগত দুইটি সরকারের কাজের খতিয়ানের পাশাপাশি, তৃতীয় মেয়াদের সরকারের ১ বছরে কীকী সাফল্য এসেছে, সেগুলোকেই মূলতঃ প্রচারের আলোকে সামনে এনে জনসংযোগ কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসকদল ও নরকার। যে কারণে খুব অনিবার্য ভাবেই সাম্প্রতিক অপারেশন সিঁদুর-এর মতো দেশাত্মবোধের বিষয় এবং চতুর্থ অর্থনীতির দেশ হিসাবে ভারতকে প্রতিষ্ঠিত করার মতো আবেগমথিত ইস্যুগুলোকে এক এক করে তুলে এনে অতীতের ভারত এবং বর্তমানের ভারতের মধ্যে শুণগত ফারাক তুলে ধরার জন্য প্রচারকৌশলে এগোচ্ছে ক্রমতাসীনেরা।শুধু অপারেশন সিঁদুরই নয়, সংসদে ওয়াকফ বিল পাস করা, আগামী জনগণনার সাথে জাতগণনাকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত,কেন্দ্রীয় বাজেটে মধ্যবিত্তদের জন্য বিভিন্ন খাতে কর ছাড়ের মতো ব্যবস্থা,এক দেশ-এক নির্বাচনের মাধ্যমে বিধানসভা ও লোকসভায় একসাথে ভোটের উদ্যোগ এবং এই সম্পর্কিত বিল তৈরি করার বিষয়গুলোকে সামনে তুলে ধরে সরকারের সাফল্য তুলে ধরার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। চলতি বছরের শেষদিকে এবং আগামী বছরের মাঝামাঝির মধ্যে দেশে অন্তত তিনটি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন হবে। স্বাভাবিক কারণেই এই সুযোগেই সাফল্যের জয়গাথা প্রচার করে গণতন্ত্রের গোলাভর্তি ধান ভোটের বাক্স পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো সুযোগ নিশ্চয়ই আর কিছু হতে পারে না। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকারের সাফল্যের আড়ালে ভোট ম্যানেজেমেন্টের কৌশলী খেলার হাঁটতে চাইছে বিজেপি। যদিও বিরোধীরা এক কাঠি উপরে উঠে সোমবার থেকেই মোদি সরকারের ১১ বছর পূর্তিকে, অঘোষিত জরুরি অবস্থার ১১ বছর বলে প্রচারে নেমে পড়েছে। কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে গতকালই মোদি সরকারের ১১ বছর নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। অন্যদিকে বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস একটি ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে ১১টি সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে লেখা, জুমলার ১১ সাল, তৃণমূলের ১১ সওয়াল, বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন যে, কালো টাকা উদ্ধার করবেন, কৃষকের আয় দ্বিগুণ করবেন, বছরে ২কোটি বেকারের চাকরি দেবেন, প্রতিটি মানুষের মাথার উপর ছাদ দেবেন। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ঠিক বিপরীত। কালো টাকা উদ্ধারের নামে নোট বাতিলের নামে দেশকে সংকটে
ফেলা হয়েছে, বেড়েছে বেকারত্ব, চাকরির সুযোগ কমেছে, বেড়েছে আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। কৃষকরা আন্দোলনে গিয়ে রাবার বুলেট খাচ্ছেন, আর বেটি বাচাঁও, বেটি পড়াও- এর নামে নারীরা আজ সুরক্ষাহীন। সব মিলিয়ে ‘সাফল্য বনাম অবক্ষয়’ এই দুইয়ের লড়াই ও প্রচারে, সরকার বনাম বিরোধীর রণসজ্জার তীব্রতা হয়তো বাড়বে।কিন্তু ‘আম-আদমি’-র আদৌ যে বিশেষ কিছুই জুটবে না তা বলাই বাহুল্য।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.