September 13, 2025

ফ্লাইওভার নাকি কোটি টাকার অপচয়?

 ফ্লাইওভার নাকি কোটি টাকার অপচয়?

অনলাইন প্রতিনিধি :- উদয়পুরের রমেশ চৌমুহনীতে প্রস্তাবিত ফ্লাইওভার ঘিরে নতুন বিতর্ক দানা বেঁধেছে। পূর্ত দপ্তর ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের ফিসিবিলিটি টেস্টের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে। যে সংস্থা বরাত পাবে তারা যানবাহনের পরিমাণ, আগামীদিনে যানবাহনের সম্ভাব্য বৃদ্ধি এবং যানজট পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত সমীক্ষা চালাবে। এরপরই সরকার তথা পূর্ত দপ্তর সিদ্ধান্ত নেবে- সত্যিই কি রমেশ চৌমুহনীতে ফ্লাইওভার অপরিহার্য?
ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে উদয়পুরে ফ্লাইওভারের দরকার আছে কি? সরকারী সূত্র জানাচ্ছে, রমেশ চৌমুহনীতে মাল্টি-লেয়ার সড়ক ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনাতেই ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রস্তাব। জাতীয় সড়ক ৮ (আগরতলা-সাব্রুম) এবং কাকড়াবন-উদয়পুর শহর সড়কের সংযোগস্থল রমেশ চৌমুহনীতে এই উড়ালপুল করার কথা। পরিকল্পনা অনুযায়ী জগন্নাথ চৌমুহনী থেকে খিলপাড়া পর্যন্ত ফ্লাইওভারের ফিসিবিলিটি টেস্ট হবে। অর্থমন্ত্রীও বিধানসভায় বাজেট বক্তৃতায় এ নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা থেকে বিশেষজ্ঞ মহল – সবারই একটাই প্রশ্ন, রমেশ চৌমুহনীতে এমন কী ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়, যে কোটি কোটি টাকা ঢেলে ফ্লাইওভার নির্মাণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। স্থানীয়দের দাবি, এখানে যানবাহনের চাপ নিতান্তই সীমিত। জগন্নাথ চৌমুহনী ও খিলপাড়ার মধ্যে যে অল্পসংখ্যক গাড়ি চলাচল করে, তারা সঠিকভাবে ট্রাফিক সিগন্যাল মানলে অনায়াসেই পারাপার সম্ভব। আগামী কয়েক দশকেও বড় কোনো যানজটের সম্ভাবনা নেই।
বরং রমেশ চৌমুহনীর প্রকৃত সমস্যা হলো ট্রাফিক ব্যবস্থার অব্যবস্থা, চৌমুহনীর চারপাশে অবাধ জায়গা বেদখল, নির্দিষ্ট বাসস্টপের অভাব ইত্যাদি।
জাতীয় সড়কের এই গুরুত্বপূর্ণ চৌমুহনীতে বা মোড়ে নেই আগরতলামুখী কিংবা সাব্রুমমুখী নির্দিষ্ট বাসস্টপ। ফলে বাসগুলি সরাসরি হাইওয়ের লেনেই দাঁড়ায় যাত্রী ওঠানামার জন্য। এর জেরেই তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি। অথচ আশপাশে পর্যাপ্ত খালি জায়গা রয়েছে, যা সঠিক পরিকল্পনায় ব্যবহার করলে সমস্যা মিটে যেত। স্থানীয় মানুষের মতে, ফ্লাইওভার নয়, দরকার পরিকল্পিত সমাধান। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ফ্লাইওভার নির্মাণ করলে সমস্যা মিটবে না। বরং বিপুল অর্থ অপচয় হবে। তাদের মতে, উড়ালপুলের বিপুল খরচের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যয় করলেই রাস্তাগুলি চওড়া করা সম্ভব। সঠিক বাসস্টপ তৈরি করা সম্ভব। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের আধুনিক ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। তাহলেই রমেশ চৌমুহনীর যাবতীয় সমস্যা দূর হবে। কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, মাল্টি-লেয়ার সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতেই হলে ফ্লাইওভারের মতো বিশাল প্রকল্পে যাওয়ার দরকারই নেই। বরং স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি ওভারপাস তৈরি করলেই যথেষ্ট। এতে যেমন খরচ অনেক কম হবে, আবার যান চলাচলেরও সুবিধা হবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আসল সমস্যার সমাধান না করে কী ফ্লাইওভারের নামে কোটি কোটি টাকা খরচের আয়োজন চলছে? উন্নয়নের নামে কী তবে আবারও প্রকল্পভিত্তিক অর্থ খরচের খেলায় মেতে উঠছে সরকার? উদয়পুরবাসী স্পষ্ট জানাচ্ছেন, তাদের দরকার সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থা, পরিকল্পিত বাসস্টপ, রাস্তাঘাট সংস্কার এবং সব সড়কে পর্যাপ্ত ফুটপাত। কোটি টাকার ফ্লাইওভার নয়। এখন দেখার বিষয়, সরকারের দৃষ্টি কি জনস্বার্থে বাস্তবসম্মত সমাধানের দিকে যায় নাকি আবারও ‘ঝকঝকে উন্নয়ন’-এর নামে বাজেটের মোটা অঙ্কের টাকার ফ্লাইওভারে আটকে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *