প্রশ্নের মুখে ইডি!!

এ দেশে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)একটি কেন্দ্রীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা।স্বাধীনভাবে কাজ করার দায়িত্ব তাদের।কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ইডি কি স্বাধীনভাবে কাজ করছে দেশে? ইডিকে কি বোতলবন্দি করে ফেলা হয়েছে?বিশেষ করে মোদি জমানায় বহুচর্চিত ইডি,সিবিআইকে রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।বিশেষ করে ইডিকে। শাসকদলের কোন নেতার বিরুদ্ধে ইডির কোন অভিযোগ নেই। ইডির অভিযোগ এবং সব প্রমাণ সব বিরোধীদলের নেতামন্ত্রী, বিধায়কদের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে ইডির বিশ্বাসযোগ্যতা বেজায় প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সময়ে। মূলত আর্থিক তছরূপ সংক্রান্ত মামলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দুর্নীতি মামলার তদন্ত করে থাকে ইডি। এই ইডি হচ্ছে শাসকের অন্যতম অস্ত্র’ বিরোধীদের রাজনীতি ভোঁতা করে দিতে পারে। আর একেই বরাবর কাজে লাগায় শাসক। এবার ইডি ই সুপ্রিম কোর্টের দাবড়ানি খেয়েছে সম্প্রতি। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ইডির ঘরে মামলার পাহাড় জমলেও সাজার হার অত্যন্ত কম। আর সাজার হার কম হলেও বছরের পর বছর বিনা বিচারে অভিযুক্তদের আটকে রাখা হচ্ছে। এটাই ইডির সাজা এবং এটিই এখন মূলত ইডির অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কারণেই সম্প্রতি ইডি সুপ্রিম কোর্টের দাবড়ানি খেয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ইডিকে সম্প্রতি ভর্ৎসনা করেছে এই ইস্যুতে। সবচেয়ে বড় কথা হল মোদি জমানায়ই এই প্র্যাকটিস দেদার বেড়েছে।
মোদি জমানায় আরেকটি বিষয়ের চলন্ত রয়েছে।সেটি হল ‘ওয়াশিং মেশিন’ তত্ত্ব।এই তত্ত্বে কোন বিরোধী দলের নেতা মন্ত্রীকে দুর্নীতির অভিযোগে ইডি বেজায় চাপ সৃষ্টি করে প্রথমে।পরবর্তীতে ওই নেতা বা মন্ত্রী বা প্রাক্তন মন্ত্রী শাসকদলে এসে নাম লিখিয়ে ফেলে। ব্যস ইডির ধরাছোঁয়ার বাইরে হয়ে যান তিনি। বিরোধীরা একে ওয়াশিং মেশিন তত্ত্ব বলে আখ্যায়িত করেছে। উদাহরণ রয়েছে এরকম ভুরি ভুরি। মহারাষ্ট্রের অজিত পাওয়ার, অশোক চ্যবন প্রমুখ। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো গত লোকসভা ভোটের কিছু আগে দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেপ্তার হন দিল্লীর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তার দলের আরও বেশ কয়েকজন নেতামন্ত্রীও, ইডি জেলে পুরে দিলো দুর্নীতির দায়ে।কিন্তু ইডি কোন চার্জশীট যেমন পেশ করতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে তেমনি দুর্নীতির কোনও প্রমাণও পেশ করতে পারেনি।ফলে তারা সহজেই জামিন পেয়ে যান।একই ভাবে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও গ্রেপ্তার করেছিলো ইডি। কিন্তু ইডি তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কিংবা কোন চার্জশিট জমা করতে পারেনি। ফলে তিনিও সহজে জামিন পেয়ে যান এবং বর্তমানে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। এই হল বিরোধী নেতামন্ত্রীদের প্রতি ইডির অভিযোগ এবং তদন্তের নমুনা। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যান জানানো হয়েছে যে, গত দশ বছরে আর্থিক অনিয়ম। দুর্নীতির অভিযোগ দেশে ৫২৯৭টি মামলা দায়ের করে ইডি। কিন্তু সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে আরও জানানো হয় যে, গত জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত সাজার হার মাত্র ০.১%। এতেই বোঝা যায় ইডির তদন্তের হাল হকিকত। এই সমস্ত পরিসংখ্যান সরকারেরই দেওয়া সম্প্রতি এ ধরনের একটি মামলায় প্রধান বিচারপতি সরকারের কাছে ইডির তদন্তের সাফল্যের হার অর্থাৎ সাজার হার জানতে চান। তখন সরকারের তরফে জানানো হয় যে সাজার হার অত্যন্ত কম। আর তখনই প্রধান বিচারপতি দীর্ঘদিন শুনানি চলাকালীন অভিযুক্তদের আটকে রাখার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। সাজা না হলেও দীর্ঘদিন একের পর এক চার্জশিট পেশ করে অভিযুক্তদের আটক করে একে নিজেদের সাফল্য বলে ঢাক পেটায় ইডি। প্রধান বিচারপতি এ কারণে সম্প্রতি ইডিকে ভৎর্সনা করেন। আসলে বর্তমানে বিশেষ করে মোদি জমানায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডিকে যথেচ্ছভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে অপব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে ইডি লেলিয়ে দেবার অভিযোগ উঠেছে শাসকের বিরুদ্ধে। আর এ কারণেই ইডির বিশ্বাসযোগ্যতাও তলানিতে ঠেকেছে। সুতরাং কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা থেকে বিরত না রাখলে এর আস্থা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা কীভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব তা নিয়ে গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সব মিলিয়ে বলা যায়, সিবিআই, ইডিকে যে কারণে কেন্দ্রীয় সরকার গড়ে তুলেছিলো সেই কারণের বর্তমান সময়ে অপমৃত্যু ঘটছে।