December 15, 2025

প্রধান শিক্ষক – স্কুল ইনস্পেক্টর১৫ বছর নিয়োগ প্রক্রিয়া নেই লাটে পড়াশোনা, ঘুমে সরকার!!

 প্রধান শিক্ষক – স্কুল ইনস্পেক্টর১৫ বছর নিয়োগ প্রক্রিয়া নেই লাটে পড়াশোনা, ঘুমে সরকার!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে ১৫ বছর ধরে সরকারী স্কুলে প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ। শুধু তাই নয়, ইনস্পেক্টর অব স্কুল পদেও সরাসরি নিয়োগে প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে শিক্ষা দপ্তর। যদিও এক সময় রাজ্যে ত্রিপুরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক এবং ইনস্পেক্টর অব স্কুল পদে নিয়মিত বেতনক্রমে সরাসরি নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার টিপিএসসির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক এবং ইনস্পেক্টর অব স্কুল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসে রাজ্যের বর্তমান বিজেপি সরকার ও বামফ্রন্ট সরকারের সিদ্ধান্তকে পুরোপুরি মান্যতা দিয়েছে।
শিক্ষা দপ্তরের এই সিদ্ধান্তের দৌলতে প্রায় ৪ হাজার ৬৬৮টি সরকারী স্কুলের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৬৫ শতাংশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষিকা নেই। ইনস্পেক্টর অব স্কুল পদে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার জন্য প্রায় ৮৮টি শূন্যপদ অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। প্রধান শিক্ষক এবং প্রধন শিক্ষিকা পদেও প্রায় ১৮৮টি পদ অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। বিস্ময়ের ঘটনা হলো, পূর্বতন সরকারের বেকার বিরোধী, শিক্ষক-কর্মচারী বিরোধী সিদ্ধান্তকে কেন বর্তমান সরকার মান্যতা দিয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষা দপ্তর রীতিমতো কুম্ভনিদ্রায় আচ্ছন্ন।শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, সম্প্রতি টিপিএসসির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকা এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পদে এবং ইনস্পেক্টর অব স্কুল পদে সরাসরি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা দপ্তরের একাংশ আধিকারিক এ সংক্রান্ত ফাইল মহাকরণে যেতে দিলেন না। উল্টো এই পদগুলিতে অনেক শূন্যপদ থাকলেও একাংশ পদে বাছাই করা বিশিষ্টদের পদোন্নতির বন্দোবস্ত করে দিলেন। এতে হাজার হাজার স্কুলের পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের সমস্যার সমাধান হয়নি।
উল্টো হাজারো সিনিয়র শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।অভিযোগ, অধিকাংশ হয়েছে। পূর্বতন বাম সরকারও মেধাকে উপেক্ষা করে এই পদগুলিতে পদোন্নতি প্রদানের জন্য টিপিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করেছিল। বর্তমান সরকারও এই কাজটাই করছে বলে অভিযোগ।
টিপিএসসি সূত্রে খবর, রাজ্যে অন্তিমবারের মতো ২০১২ সালে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এরপর টিপিএসসির মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়াও সমাপ্ত হয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দু-ধাপে প্রায় ১২৭ জন সরাসরি নিয়মিত বেতনক্রমে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি পান। যদিও ওই সময়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বহু বিতর্কও হয়।২০১২ সালের আগেও টিপিএসসির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ হয়েছে।২০১২ সালের পর এই নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে এই পদগুলিতে একাংশকে পদোন্নতি প্রদান হলেও হাজার হাজার স্কুল টিচার্স ইনচার্জ দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার ৬৭৭ স্কুলের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই। দক্ষিণ ত্রিপুরায় ৬৫৮ স্কুলের মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই। খোয়াই জেলারও ৪৮৮ স্কুলের মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই। ঊনকোটি জেলায় ৩৩২ স্কুলের মধ্যেও প্রায় ১৭শতাংশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই। সিপাহিজলা জেলার ৫৬৬টি স্কুলের মধ্যেও প্রায় ১৮ শতাংশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই।
উত্তর ত্রিপুরা জেলার ৪৮৬ স্কুলের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই। ধলাই জেলার ৮৭৪টি স্কুলের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই। গোমতী জেলার ৫৮১ স্কুলের মধ্যেও প্রায় ১৯ শতাংশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই। এটাই শিক্ষার বাস্তব হাল!
রাজ্যে গত ১৫ বছরে হাজারো প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকা, সহকারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা এবং ইনস্পেক্টর অব স্কুল অবসরে গিয়েছেন। যদিও সমহারে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়নি।যেহেতু অবসরের এক বছরের মধ্যে এই শূন্যপদগুলিতে নিয়োগ হয়নি, তাই সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী এই পদগুলি অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। এভাবেই প্রত্যেক বছর প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকরা এবং ইনস্পেক্টর অব স্কুল অবসরে গেলেও সরাসরি নিয়োগ বন্ধ। অথচ এই মুহূর্তে প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষিকা, সহকারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা এবং ইনস্পেক্টর অব স্কুল পদের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক শিক্ষিকা কোনো অভাব নেই। টিপিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া হলেই এই পদগুলি পূরণ হয়ে যাবে। পদোন্নতি প্রদান হলেও আদতে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। অথচ শীতঘুমে সরকার।বর্তমানে টিচার্স ইনচার্জের কাঁধে ভর করে চলা স্কুলগুলিরও করুণ অবস্থা। কেননা, অধিকাংশ স্কুলে টিচার্স ইনচার্জ অবসরে চলে গিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং ইনস্পেক্টর অব স্কুল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের ফলে রাজ্যের সম্পূর্ণ স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা এক প্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *