September 24, 2025

প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ ইস্যুতে,বিধানসভায় বেকায়দায় পড়তে হলো রাজ্য সরকারকে, ত্রাতা রতন!!

 প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ ইস্যুতে,বিধানসভায় বেকায়দায় পড়তে হলো রাজ্য সরকারকে, ত্রাতা রতন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-নবরূপে সজ্জিত উদয়পুর মাতাবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উদয়পুর মাতাবাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ এমনকী রাজপরিবারের কোনও সদস্যকে। এই অভিযোগে মঙ্গলবার বিধানসভায় বেকায়দায় পড়তে হলো রাজ্য সরকারকে। বরাবরের মতো আজও বিধানসভায় ত্রাতার ভূমিকায় অবর্তীণ হতে হলো মন্ত্রী রতন লাল নাথকে। তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে শেষে বলেছেন, বিশাল বড় একটি আয়োজন হয়েছে। এক্ষেত্রে নিমন্ত্রণে ত্রুটি থাকতেই পারে। আগামী দিনে যাতে এমনটা না হয়, সেই দিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীও বিরোধীদের এমনকী শরিক দলের ভাবাবেগের প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এই বলে যে, প্রধানমন্ত্রী শুধু মাতাবাড়িতে পুজো দিতে এসেছেন। আর কিছু নয়। আর প্রধানমন্ত্রী যখন আসছেন, তখন আমরা চিন্তা করলাম যে-মাতাবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে করালে সবদিক দিয়ে ভালো হবে। সেই জন্যই করা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী রাজ্য থেকে ফিরে যাওয়ার পরই বিরোধী দল, সরকারের শরিক দল থেকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করে অনেকে প্রশ্ন তুলেন। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকী বিষয়টি নিয়ে জাতীয়স্তরেও সংবাদ হয়। আজ বিধানসভার একেবারেই শুরুতেই তিপ্রা মথার বিধায়ক পাঠানলাল জমাতিয়া অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, উদয়পুরে মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির মহারাজা ধন্য মাণিক্যের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মহারাজা ধন্য মাণিক্যই এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন।সেই থেকে রাজ্যের ঐতিহ্য ও পরস্পরা অনুযায়ী রাজপরিবারের সদস্যদের নামে মন্দিরে পুজো হয় আসছে। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী মাতাবাড়িতে পুজো দিতে এসেছেন। তিনি পুজো দিয়েছেন। এটা আমাদের ত্রিপুরাবাসীর কাছে অত্যন্ত গর্বের। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের এবং
লজ্জার বিষয় হলো, এমন একটি গৌরবময় অনুষ্ঠানে আমাদের রাজপরিবারের উত্তরসূরি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। কেন প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণকে আমন্ত্রণ জানানো হলো না? এই প্রশ্নের জবাব চান বিধায়ক শ্রী জমাতিয়া। যদিও অধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল বলেন, এখন প্রশ্নোত্তর পর্ব।এখন এবিষয়ে আলোচনা হবে না।পরে আলোচনা হবে।এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়ে যায়।প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হলে বিষয়টি পুনরায় উত্থাপিত হয় এবং জবাব দিতে উঠে পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, আমন্ত্রিতদের তালিকা তৈরি করার ক্ষেত্রে একটা প্রোটোকল আছে। এটা রাজ্য সরকার ঠিক করে না। এটা ঠিক করে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে। আমরা শুধু প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অথচ এটা নিয়ে একটা বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে বৃহৎস্বার্থ নিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি। মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা দাঁড়িয়ে বলেন, আমন্ত্রিতদের লিস্ট তৈরি বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম।আমি বৈঠকে বলেছিলাম, যেহেতু ধন্যমানিক্যের নামে পুজো করা হয়। তাই রাজপরিবারের একজনকে নিমন্ত্রণ করা হোক। আমি রাজমাতা বিভুকুমারী দেবীর নাম প্রস্তাব করেছিলাম। না হলে প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণকে আমন্ত্রণ জানানো হোক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে সংক্ষিপ্ত করার কথা বলেছে। কিন্তু সেই সংক্ষিপ্ত কতটা? আমার মনে হয় রাজপরিবারের একজনকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো যেতো। এই বিষয়ে তিপ্রা মথা বিধায়ক রঞ্জিৎ দেববর্মা বলেন, ধন্যমানিক্যের আমলে মন্দির নির্মিত হয়েছে। রাজপরিবারের নামে পুজো হয়। রাজমাতা রয়েছে, আমাদের মহারাজ প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ রয়েছে।কেউ আমন্ত্রণ পায়নি।এটা রাজ্যের ইতিহাসে কলঙ্ক হয়ে থাকবে বলে মনে করি। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা বলেন, উদয়পুর মাতাবাড়ি মন্দির কি শুধু শাসক দলের জন্য? এই নিয়ে বিতর্ক যখন বাড়তে থাকে, তখন উঠে দাঁড়ান ত্রাতা রতন লাল নাথ। তিনি বলেন, আমন্ত্রণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম। আমরা কে কে, কেন জায়গায় থাকবে তার লিস্ট তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী অফিসে পাঠিয়েছি। পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভার সাংসদ কৃতি সিং দেববর্মার সাথে আমি নিজে কথা বলেছি। কৃতি দেবী নিজেও যেহেতু রাজপরিবারের সদস্যা, আমরা সেই মতো কৃতি দেবীর কাছে জানতে চেয়েছি আপনি কোথায় থাকবেন? বিমান বন্দরে নাকি মাতাবাড়িতে? কোনটা আপনি পছন্দ করেন। প্রথমে তিনি বিমান বন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর বিষয়ে সম্মতি দিয়েছিলেন, পরে আবার বলেছেন তিনি মাতাবাড়িতে থাকবেন। সে যাই হোক, আমরা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কে কে, কোন কোন জায়গায় থাকবে, সেই মতো তালিকা প্রধানমন্ত্রী অফিসে পাঠিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী অফিস থেকে পরবর্তী কালে যে নির্দেশ এসেছে সেই মতো কাজ করেছি। তবে এটা ঠিক যে আমন্ত্রণে ত্রুটি থাকতে পারে। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। পরে মুখ্যমন্ত্রীও এই ব্যাপারে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এসেছেন শুধু পুজো দিতে। তেমন কোনও সরকারী অনুষ্ঠানও ছিলো না এটা। উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি ছিলো। আমরা ভাবছিলাম প্রধানমন্ত্রীর হাতে উদ্বোধন হলে সবদিক থেকে ভালো হবে। প্রধানমন্ত্রী যখন আসছেনই, তাই আমরা এই সুযোগটা নিলাম। যদিও এরপর বিতর্ক বাড়েনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *