প্রতিবেশীমূলক!!
বাংলাদেশে ২০২৪-এর আন্দোলন, সহিংসতা এবং শেখ হাসিনার চাইছিল নয়াদিল্লী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে দেয়।কিন্তু ঘটনাক্রম সেদিকে যায়নি, শেখ হাসিনাকে সেই দেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে তুলে দেওয়া সমীচীন মনে করেনি নয়াদিল্লীর কূটনীতি। যদিও বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা ও বাণিজ্যে সাময়িক ব্যাঘাত ছাড়া আর কোনো প্রতিবন্ধকতা ঘটেনি। প্রতিবেশী দেশের প্রতি নয়াদিল্লী আগের মতোই সহানুভূতিশীল নীতি নিয়ে চলেছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী আরও দুটি দেশ শ্রীলঙ্কা এবং নেপালে আভ্যন্তরীণ অশান্তি, হিংসা এবং সরকার উৎখাতের ঘটনা ঘটেছে ইদানীং। যা দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতের কূটনীতিকে প্রভাবিত করে। তিনটি দেশেই আন্দোলনকারীরা স্ব স্ব দেশের সরকারগুলিকে নানা অভিযোগে বিদ্ধ করতে গিয়ে পৃথকভাবে কিন্তু একই সুরে ভারতের সরকারকেও তুলোধোনো করেছে। এতেই ভারতীয় কূটনীতি যে আহত হয়েছে বা হচ্ছে তা বোঝা যায়।
নয়াদিল্লী তার পরম্পরাগত নীতি অনুযায়ী প্রতিবেশীর আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলে না। তবে কূটনীতি আজ আর আগের জায়গায় নেই। অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন চালুর পর গোটা বিশ্বকে যে ভাবনায় একটি গ্রাম বা বিশ্বগ্রাম বলা হয়ে থাকে সেদিক থেকেও প্রতিবেশী দেশগুলির আভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে কথা বলার দায় থেকে যায় বৃহত্তম দেশ ভারতের। নয়াদিল্লী শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে কথা বলল। গত শুক্রবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল নয়াদিল্লীতে জাতীয় একতা দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বললেন, অদক্ষ এবং দুর্বল শাসনের কারণেই সরকারগুলির পতন হয়েছে। বস্তুত সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন-মবার্ষিকী উপলক্ষে সুশাসন নিয়ে স্মারক বক্তৃতায় কথাগুলি বলেছেন দোভাল। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন জাতি গঠন প্রক্রিয়া এবং দেশকে সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে শাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, প্রতিবেশী তিনটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অস্থিরতা সব চেয়ে বেশি। শ্রীলঙ্কা থিতু হয়ে এসেছে। নেপালও প্রায় স্বাভাবিক অবস্থার পথে। তবে বাংলাদেশে স্থিতাবস্থা ফেরার জন্য আরও অনেকগুলি দিন-মাস অপেক্ষা করতে হবে। যদি শেখ হাসিনা ও তার অনুসারীদের হিসাবে নিতে হয় তাহলে আরও কয়েক বছরেও বাংলাদেশে স্থিতাবস্থা আসবে কিনা- এ নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশের জনমানসও মনে করে দিল্লীতে শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরই নাকি দোভাল ‘অদক্ষ ও দুর্বল’ শাসনের কথা বলেছেন। উল্লেখ্য, আগামী ফেব্রুয়ারীতে বাংলাদেশে সরকার নির্বাচন হবে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা না হলেও দলের সবরকম কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রেখেছে ইউনুসের সরকার। ফলত দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কিনা বা করতে পারবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। এই সময়ে হাসিনা তার দেশান্তরিত অবস্থান থেকে তার আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ফেব্রুয়ারী মাসের ভোট বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন।বাংলাদেশের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এবং সহযোগী দলগুলি শেখ হাসিনার সরকারকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের উৎখাতকে তারা জুলাই বিপ্লব বলছেন। এবার শেখ হাসিনার সরকারকে নয়াদিল্লী অদক্ষ এবং শাসক হিসাবে দুর্বল বলায় বাংলাদেশ দিল্লীর পরবর্তী কথাগুলিও শুনতে উন্মুখ হবে। এ কথা আজ সিদ্ধ যে শেখ হাসিনার আমলে গত দুই, তিনটি নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ব্যাহত হয়েছে। একটি প্রজন্ম নির্বিঘ্ন ভোটদান কাকে বলে তার অভিজ্ঞতাই জানতে পারেনি। দেশটির মানুষ সেই ধরনের একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশায় দিন গুনছে। তারা নিশ্চয়ই নিকট প্রতিবেশী, বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতের কাছে তাদের সেই সঙ্কট নিয়েও কথা শুনতে চাইবে। যদিও কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ কোনও জাতি বা রাষ্ট্রের নিজস্ব চাহিদা প্রত্যাশার সঙ্গে মেলানো যায় না। অন্তত ভারতের কূটনীতি অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদা – প্রত্যাশাকে ছুঁয়ে কথা বলতে যাবে না।