August 1, 2025

প্রকৃত তথ্য গোপন করে,শত্রু সম্পত্তি নিয়ে প্রদ্যোতের অভিযোগ ঘিরে রাজ্যে বিভ্রান্তি!!

 প্রকৃত তথ্য গোপন করে,শত্রু সম্পত্তি নিয়ে প্রদ্যোতের অভিযোগ ঘিরে রাজ্যে বিভ্রান্তি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রকৃত তথ্য গোপন করে,জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠেছে তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণের বিরুদ্ধে। গতকাল প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ তাঁর সামাজিক মাধ্যমে করা একটি পোস্ট ঘিরে রীতিমতো বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। প্রদ্যোতবাবুর অভিযোগ, এডিসি এলাকায় রাজ্য সরকার এক বাংলাদেশি নাগরিককে জমির পরচা দিয়ে দিয়েছে। জমিটি উদয়পুর মহকুমার কুপিলং মৌজায়। জমির পরিমাণ ০.২২ একর। তাঁর এই অভিযোগ ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই নানা মহলে গুঞ্জন তৈরি হয়। পরে এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে এবং রাজ্য ভূমি সংস্কার ও জরিপ দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, প্রদ্যোতবাবুর অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য। রাজ্য সরকারের পরচায় বাংলাদেশি নাগরিকের নাম উল্লেখ থাকলেও, ওই জমির প্রকৃত মালিক এখন ভারত সরকার। জরিপ দপ্তর সূত্রের খবর, এমন জমি এবং পরচা ত্রিপুরায় প্রচুর আছে।তেমনি বাংলাদেশেও আছে। বাংলাদেশেও এমন বহু জমির রেকর্ডে ভারতীয় নাগরিকদের নাম রয়েছে। ওই জমিগুলির মালিকও এখন বাংলাদেশ সরকার। বিভাজনের সময় বহু মানুষ দুই দেশেই তাদের জায়গা সম্পত্তি ছেড়ে এসেছেন।ওই সময় অনেকে বাংলাদেশে চলে গেছেন, আবার বাংলাদেশ থেকেও (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) বহু মানুষ তাদের বিষয় সম্পত্তি ফেলে এদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।অনেকের মধ্যে সম্পত্তি বিনিময় হয়েছে। অনেকের মধ্যে হয়নি। সম্পত্তি এই ভাবেই ফেলে চলে এসেছেন, এখান থেকেও চলে গেছেন। পরবর্তীকালে ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের সরকারই এই সম্পত্তিগুলিকে ‘এনিমি প্রপার্টি’ অর্থাৎ শত্রু সম্পত্তি হিসাবে চিহ্নিত করে।
যদিও ভারত সরকার এই সম্পত্তিগুলির নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আইন প্রণয়ন করে। যার নাম ‘শত্রু সম্পত্তি আইন ১৯৬৮’।১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরই এই আইনটি তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে পাকিস্তানি নাগরিকদের মালিকানাধীন ভারতে থাকা সম্পত্তিগুলির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা সেই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করতে পারে না, যতক্ষণ না সরকারের (ভারত) পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা না করা হয়। পরবর্তীতে এই আইনটিতে কিছু সংশোধন করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় শত্রু সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সংস্থা রয়েছে। যার নাম ‘কাস্টোডিয়ান অফ এনিমি প্রপার্টি ফর ইন্ডিয়া’। এই সংস্থাটি ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন।
মথা সুপ্রিমো কুপিলং মৌজার যে জমি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ তুলেছেন, সেটি শত্রু সম্পত্তি। এটি সংশ্লিষ্ট আইনের নিয়ম মতোই পরচায় বাংলাদেশি নাগরিকের নাম উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশি নাগরিক এডিসি এলাকায় জায়গা ক্রয় করেছেন বলে প্রদ্যোত কিশোর যে অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ অসত্য।
ভূমি সংস্কার ও জরিপ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে জমির প্রকৃত মালিক ভারত সরকার। বর্তমানে জমিটি সরকারের খাতায় শত্রু সম্পত্তি হিসাবে রেকর্ড করা আছে। কিন্তু খতিয়ানে দিলু মিঞা, বাবা বাদশা মিঞার নাম উল্লেখ আছে। ১৯৭৩ সালে ভারত সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই দেশ থেকেই জমির অদলবদল করা হয়েছে। ফলে এখনও বাংলাদেশে বহু জমির ভারতের বিশেষ করে ত্রিপুরার নাগরিকদের নামে রয়ে গিয়েছে। অথচ এই জমিতে বাংলাদেশে এখন বসবাস করছেন মুসলিম নাগরিকরা। একইভাবে ত্রিপুরা রাজ্য সহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের নাগরিকদের নামে বহু জমি এখনও রয়ে গিয়েছে। এই জমিগুলিতে বসবাস করছেন ভারতীয় নাগরিকরা। এর মধ্যে একটি কুপিলং মৌজায়। যার প্রকৃত মালিক ভারত সরকার। জানা গিয়েছে, ১৯৬৩ সালে কুপিলং মৌজার প্রথম জরিপ চূড়ান্ত হয়। ওই সময়ে জমির সাবেক দাগ নম্বর ছিল ৫৪৪। জমিটি বন দপ্তরের আওতায় রয়েছে। যার খতিয়ান নম্বর ৩/৩৮হিসাবে চিহ্নিত আছে উদয়পুর মহকুমার কুপিলং মৌজায়। ১৯৭৩ সালে তদানীন্তন জেলা প্রশাসক দিলু মিয়াকে এই জমির স্বত্ব অ্যালট করে। অ্যালটমেন্ট নম্বর ১০ জেলা প্রশাসন। ভূমি সংস্কার দপ্তরে রেকর্ড হয় ৮১২ নম্বর খতিয়ান মূলে, যার সাবেক দাগ নম্বর ৫৪৪/১৯৪২।
২০০০ সালে এই জমিটি জনৈক জমাতিয়াবাবুর দখলে ছিল। বর্তমানেও তিনিই এই জমির দখলদার। শুধু তাই নয়, ই জমিতে ৬২৭ নম্বর খতিয়ানের এই জমিটি শত্রু সম্পত্তি হিসাবে রয়েছে। জমির মালিক (বর্তমানে- বাংলাদেশের নাগরিক) কর্তৃক পরিত্যক্ত জমি। ভারতীয় আইনে এই জমি হস্তান্তর অযোগ্য। শত্রু সম্পত্তি আইন ১৯৬৮ অনুযায়ী যে জমিটি শত্রু সম্পত্তি হিসাবে চিহ্নিত তার প্রকৃত (যিনি, রেকর্ড রয়েছেন), মালিকের নামে উদয়পুরের মহকুমাশাসক গত ১৬ জুন নোটিশ জারি করেন। সেই মোতাবেক এই সংক্রান্ত প্রথম শুনানি হয়ে গেছে। দ্বিতীয় শুনানির দিন ধার্য রয়েছে আগামী ২৯ জুলাই। উদ্দেশ্য হল কাস্টোডিয়ান অফ এনিমি প্রপার্টি অফ ইন্ডিয়া বা সিইপিআই-এর নিষ্পত্তি। জানা গেছে, এই ধরনের শত্রু সম্পত্তি রাজ্যের অন্যান্য জেলায় এডিসি এলাকা বা এডিসি বহিভূত সব এলাকাতেই রয়েছে। সেই সব জমিগুলির সিইপিআই অনুসারে নিষ্পত্তির তোর জোড় শুরু করে দিয়েছে ভারত সরকার। তাই একজন জনপ্রতিনিধির এ ধরনের পোস্ট ঘিরে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *