পেটের অসুখে আক্রান্ত মানুষ,জল জীবন মিশনে কেলেঙ্কারি রাজ্যব্যাপী সমালোচনার ঝড়!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ছড়ার জল
পান করে গোটা গ্রামের মানুষ পেটের অসুখে আক্রান্ত। প্রশাসন নীরব দর্শক। কাঞ্চনপুর মহকুমার খাসনামপাড়ায় কোটি টাকার প্রকল্প কাগজেপত্রে থাকলেও একফোঁটা জল নেই ওই পাহাড়ি গ্রামে। জল জীবন মিশনের নামে চলছে কোটি টাকার লোপাট বাণিজ্য।
যেখানে প্রতিটি ফোঁটা জলের জন্য শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত পাথুরে ঢাল বেয়ে নেমে আসে সেখানে সরকারী বিজ্ঞাপনের ব্যানারে লেখা- জল পানীয় জল।বিপরীতে বাস্তব চিত্র
এমন যে কাঞ্চনপুর মহকুমার খাসনামপাড়ার পাহাড়ি মানুষ আজও অকেজো পানীয় জলের উৎসের সামনে দাঁড়িয়ে কেবল অপেক্ষা করে। দপ্তরের কাগজে লেখা আছে – এই পাহাড়ি জনপদে পানীয় জলের জন্য বরাদ্দ হয়েছে কোটি কোটি টাকা। সরকারী রিপোর্টে প্রতিদিন বোলেরো ভ্যানে জল সরবরাহ চলছে। কিন্তু সেই ‘জল সরবরাহ’ কেবল ফাইলের পাতায়, বাস্তবে একফোঁটা জলও পৌঁছাচ্ছে না খাসনামপাড়ার মানুষের ঘরে। পাহাড়ের গায়ে বসবাসকারী রিয়াং জনগোষ্ঠীর জীবন এখন এক অদ্ভুত তৃষ্ণায় বন্দি। দুপুরবেলা নারী-পুরুষেরা মাথায় পাত্র নিয়ে তিন কিলোমিটার নিচে নেমে যাচ্ছে ছোট ছড়ার ধারে ধারে যেখানে কাদা আর পাতা মিশে পানীয় জলের উৎস তৈরি হয়েছে। সেই জলেই চলে রান্না, খাওয়া, এমনকি স্নানও।
সেখানে সরকারের ঘরে ঘরে পানীয় জল প্রচারে যেন এক নির্মম রসিকতা। দপ্তরের দাবি প্রতিদিন একটি পিকআপ ভ্যানে জল পৌঁছচ্ছে এই পাহাড়ি গ্রামে। কিন্তু গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, গাড়ি দিয়ে জল দেওয়ার নামে ভুয়া বিল করা হচ্ছে। ছড়ার জল খেয়ে ছোট ছেলে-মেয়েরা এখন পেট খারাপ নিয়ে কাতরায়। এই জলে অসুখ হচ্ছে কিন্তু তাদের কাছে বিকল্প কিছু নেই।
অভিযোগ, যে জল সরবরাহের গাড়ির নম্বর দিয়ে বিল পাশ হচ্ছে সেটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর দপ্তরের খতিয়ানে প্রতিদিন জল সরবরাহ করে দেখানো হচ্ছে। এমনকি কয়েকটি দিনে ‘ডবল ট্রিপ’ ত্রিপল ট্রিপ দেখিয়ে দ্বিগুণ তিন গুণ বিলও তোলা হয়েছে। রবিবার খাসনামপাড়ার পাহাড়ি ঢালে গিয়ে দেখা গেলো সেই কথিত পাম্প হাউস আজ কাঁটাঝোপে ঢাকা। দরজায় তালা ভিতরে মরিচা ধরা মোটর, ছেঁড়া তার, আর পায়ে জমে থাকা কালো জল। পাশে ফাটল ধরা রিজার্ভার যার দেয়ালে শুকনো শৈবাল লেগে আছে- জলহীনতার সাক্ষ্য দিয়ে। সরকারের প্রকল্প আছে তাতে ছবি আছে ব্যানার আছে- কিন্তু জল নেই। অভিযোগ, জনজীবন মিশনের আওতায় পাহাড়ি এলাকাগুলিতে দুর্নীতি চরমে। পাইপলাইন বসানোর নামে বালি-কংক্রিটের বিল তোলা হচ্ছে কিন্তু পাইপ দেখা যায় না কোথাও। জল সম্পদ দপ্তর অবশ্য এখনও মুখে কুলুপ এঁটেছে। এই ঘটনা কেবল খাসনামপাড়ার নয়- সারা উত্তর জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে একই চিত্র। ‘জনজীবন মিশন’ এখন কাগজের প্রকল্পে পরিরণত হয়েছে যেখানে ব্যানারে জল ঝরে। খাসনামপাড়ায় গিয়ে দেখা গেলো এক দুই জন লোপাট বাণিজ্যের সহযোগী আছে যারা নিজেদের বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং আরএসএস নেতা পরিচয় দিয়ে পানীয় জলের উৎস থেকে উৎকোচ নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক দুই তলা দালান বাড়ি তৈরি করেছে। মুখে তারা জনজাতিদের কথা বলে ওইসব নেতারাই জল জীবন মিশনের অর্থ লোপাট করছে, ফলে জনজাতিদের দুর্গতি চরমে। প্রশ্ন উঠছে- কোথায় গেলো সেই কোটি টাকার বরাদ্দ? কেন নীরব সরকার ও প্রশাসন? জল জীবন মিশনের কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজ্যবাপী সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে। প্রশ্ন উঠেছে সরকার কেন দুর্নীতির তদন্ত করে কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না?