পান চাষে আর্থিক নির্ভরতা খুঁজে পাচ্ছে নলুয়ার মানুষ!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-দক্ষিণ জেলার ঋষ্যমুখ ব্লক এলাকায় নলুয়া অভয়নগর এলাকায় পান চাষে রমরমা। মুখরোচক হিসেবে পানের রসের গুরুত্ব অনেক। এছাড়া এতে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। প্রায় ১৯৬০-৬১ সালের শুরুতে প্রথম পান চাষ শুরু হয় দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার নলুয়ার মাটিতে। তদানীন্তন সময়ে পূর্ব পাকিস্তান তথা অধুনা বাংলাদেশ থেকে পানের বীজ লতা এনে এখানে পান চাষ শুরু করেন প্রথমে উমেশচন্দ্র দত্ত সহ কয়েকজন পানচাষি। কালক্রমে গোটা নলুয়া ছাড়িয়ে মহকুমা, জেলা এমনকী এখন সারা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই নানা পদ্ধতিতে পান চাষ হচ্ছে। ত্রিপুরার মাটি এবং জলবায়ু পান চাষের উপযোগী। এছাড়া এটি একটি অর্থকরি ফসল। এই সময়ে সারা রাজ্যে পানের উৎপাদন হলেও নলুয়ার পানের একটা আলাদা কদর রয়েছে রাজ্যবাসীর কাছে। পানকে ভিত্তি করে রাজ্যের মানুষ নলুয়াকে চেনে। বর্তমানে নলুয়া সহ আশেপাশের এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পান চাষে যুক্ত।
পিতামহের জমানা থেকে পিতার পেশা থেকে তাদের বংশধররা ধীরে ধীরে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে পান চাষের সাথে। গ্রামীণ এলাকায় ধান চাষের সাথে সাথে পান চাষকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই পান চাষ করে গ্রামীণ মানুষ স্বয়ম্ভর হতে শুরু করেছে। পরিবারের আয় উপার্জন হিসাবে পান চাষকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে পান চাষকে ভিত্তি করে প্রতিপালিত হচ্ছে দক্ষিণ জেলার ঋষ্যমুখ ব্লক এলাকার বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার পরিবার। শুধু পানচাষিরাই নয়, পান চাষ ও বাজারজাতকরণকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহের পথ বেছে নিয়েছে অগণিত শ্রমিক, বাঁশ, ছনচাষি, ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মাঝারি ব্যবসায়ী, আড়তদার, পরিবহণ মালিক, শ্রমিক বহু পরিবার। কারণ এগুলি একেকটি একেকটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একজন সাধারণ পানচাষি পান চাষ করে এবং পান পাতা বিক্রি করে লাভবান হয়। আদৌ তা নয়। তার কারণ হচ্ছে বাজারে প্রয়োজনের তুলনায় পানের আয়োজন এখন বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ে যায় শ্রমিকের মজুরি, কাঁচা মালের দাম। যার কারণে পান চাষ এখন অনেক ব্যয়বহুল। জলবায়ুর পরিবর্তন, ঝড় নানাভাবে ক্ষতি করে পান চাষের। ওই সময়ে সরকার পাশে না দাঁড়ালে পানচাষিরা মনোবল হারিয়ে ফেলে।অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে আর ওঠে দাঁড়াতেই পারে না। এরপরেও পান চাষকে ঘিরে আছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। বিশেষত শীতকাল যেকোনো গাছেরই পাতা ঝরার মরশুম। বসন্তকালে নতুন পাতা গজায়। এই শীতকালে তাই পান পাতা ধরে রাখা চাষিদের কাছে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই সময়ে চাষিরা দু’পয়সা পাওয়ার সময়। অথচ আবহাওয়ার দরুন বহু পানচাষি এই সময় মার খেয়ে যায়। তাই পানকে মজুত রাখার জন্য নলুয়ায় তৈরি হয়েছিল হিমঘর। কিন্তু সেটার সঙ্গে পানচাষিদের আন্তরিক সম্পর্ক সেভাবে গড়ে ওঠেনি। পান চাষের ভবিষ্যৎ নিয়েও একটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বংশানুক্রমিকভাবে যারা দীর্ঘ বছর ধরে এই পেশায় নিয়োজিত, নানা কারণে কৃষকরা এই পেশা থেকে ক্রমশ মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এরপরেও নলুয়ার সুস্বাদু পান রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আজও মনে করে।