পাক-আফগান সংঘাত!!

কাবুলে পাকিস্তানের বিমান হামলার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই আফগানিস্তানের তালিবান সেনা জবাব দিয়েছে যে, ইসলামাবাদের ঘুম উড়ে গেছে। আফগানিস্তান দাবি করেছে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৫৮ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। বেশ কয়েকটি পাকসেনা পোস্ট উড়িয়ে দিয়েছে এবং দখল করে নিয়েছে। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার গভীর রাতে সীমান্ত এলাকায় ‘প্রতিশোধমূলক ও সফল অভিযান’ চালানো হয়েছে। যা পাকিস্তানের লাগাতর আক্রমণ ও আকাশসীমা লঙ্ঘনের জবাব হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এখানে শেষ নয়, তালিবান সরকারের মুখপাত্র জবিহুল্লাহু মুজাহিদ দাবি করেছেন, তাদের বাহিনী ২৫ টি পাকিস্তানি সেনা পোস্ট দখল করেছে। এতে ৫৮ জন পাকসেনা নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। তিনি পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনের কোনও চেষ্টা হলে, আরও কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক মহলের একাংশের দাবি, হুঙ্কার বাস্তবে করে দেখাল আফগানরা। আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে পাকিস্তানি বিমান হামলার প্রতিশোধ নিতে, তালিবান বাহিনী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পাল্টা হামলা চালায়। ১১ অক্টোবর গভীর রাতে আফগানিস্তানের ২০১তম খালিদ বিন ওয়ালিদ আর্মি কর্পস নাঙ্গারহার এবং কুনার প্রদেশে ডুরান্ড লাইনের কাছে পাক সামরিক পোস্টগুলিতে আক্রমণ চালায়। খবরে প্রকাশ, আফগান বাহিনী হেলমান্দ, কান্দাহার, জাবুল, পাকতিকা, পাকতিয়া, খোস্ত, নাঙ্গারহার, এবং কুনার প্রদেশে পাকিস্তানি সেনাপোস্টগুলি আক্রমণের নিশানা করে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে তিনটি বিস্ফোরণের খবর সামনে আসে। এর মধ্যে দুটি কাবুলে এবং একটি দক্ষিণ-পূর্ব পাকতিকায়। তালিবান নিয়ন্ত্রিত আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রক ইসলামাবাদকে এই হামলার জন্য দায়ী করে। পাক সেনার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে। এই হামলার পরপরই তালিবান সরকার পাকিস্তানকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, শীঘ্রই এর জবাব দেওয়া হবে।সেই হুশিয়ারি চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই বাস্তবায়িত করলো তালিবান সরকার।
উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় হচ্ছে, তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী ঠিক যেদিন ভারত সফরে এসেছিলেন, সেই দিনই কাবুলে হামলা করে পাকিস্তান। যদিও এই হামলা নিয়ে পাকিস্তান মুখে কুলুপ এঁটেছে। তারা এই হামলার দায় স্বীকারও করেনি আবার অস্বীকারও করেনি। এদিকে, পাকিস্তানে আফগান সেনাবাহিনীর হামলার পর কড়া বিবৃতি দিয়েছেন পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি। তিনি বলেছেন, দেশটি আগুন ও রক্তের খেলা খেলছে। তিনি এই ঘটনার সাথে ভারতের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলির জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, পাকিস্তানি ভূখণ্ডে আফগান বাহিনীর বিমান উস্কানিতে গুলী চালানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। পাকিস্তান সেনা, কোনও উস্কানি সহ্য করবে না এবং দ্রুত এর জবাব দেবে। আফগানিস্তানকে ইটের জবাব পাথর দিয়েই দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের খবর সামনে আসতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। খবরে প্রকাশ, শনিবার রাতে ডুরান্ড রেখা অতিক্রম করেই একাধিক পাকিস্তান সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালায় আফগান বাহিনী। পাকসেনা অবশ্য এর জবাব দেবে। এমনটাই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।বসে থাকবে না আফগানিস্তানও। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন্দিকে মোড় নেয় সেটাই এখন দেখার। যদিও ভারত সরকার গোটা পরিস্থিতির উপরই তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছে বলে খবর।