পর্যটন দপ্তরের ২ প্রকল্পের শিলান্যাস করে মুখ্যমন্ত্রী,ধর্মীয় স্থানগুলিকে আরও আকর্ষণীয় করছে সরকার!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যুক্ত সাধারণ পর্যটন কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি ধর্মীয় স্থানগুলিকেও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছ আকর্ষণীয় করতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে অত্যাধুনিক রূপ দিতে পর্যটন দপ্তর যেভাবে কাজ করছে তারও প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

আজ বিশালগড় মহকুমার অন্তর্গত কসবেশ্বীর মন্দির প্রাঙ্গণে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অর্থানুকূল্যে কমলাসাগর পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলা কসবা ভিউ টুরিস্ট লজের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও মুখমন্ত্রী চতুর্দশ দেবতা মন্দির এলাকার পর্যটন পরিকাঠামোর উন্নয়নে ভার্চুয়ালির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুপ্রেরণায় এবং তার নির্দেশিত পথে ত্রিপুরা সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।নেওয়া হচ্ছে নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প। তিনি বলেন, বনদোয়ারে ৫১পীঠের আদলে যে ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে সেটি সর্বসাধারণের জন্য খোলে দেওয়া হলে ত্রিপুরা এক অন্যমাত্রায় পরিচিতি পাবে। দেশ-বিদেশ থেকেও পূর্ণার্থীরা ছুটে আসবেন। এতে বৃদ্ধি পাবে ত্রিপুরার আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের আর্থ সামাজিক মান উন্নয়নে এবং অর্থনৈতিক ভিত্তিকে সুদৃঢ় করতে পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই বর্তমান সরকার পর্যটন ক্ষেত্রের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তৃষ্ণা অভয়ারণ্য, খুমুলুঙ ইকোপার্ক, বক্সনগরের বহু পুরানো বৌদ্ধ স্তূপ, ছবিমুড়ার কাটিং পাহাড়, বৌদ্ধ এবং হিন্দু ভাস্কর্য সমৃদ্ধ পিলাক পর্যটন ক্ষেত্রে, ভূবনেশ্বরী মন্দির সহ রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নে পর্যটন দপ্তর বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এই সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশ বিদেশের পর্যটকরা আরও বেশি সংখ্যায় রাজ্যে আসবেন। এতে রাজ্যের অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, প্রসাদ স্কিমে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫১ পীঠের রেপ্লিকায় উদয়পুরের বনদোয়ারে যে ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে তা এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া রাজন্য স্মৃতি বিজড়িত কসবেশ্বরী কমলাসাগর কালীবাড়িকেও এই প্রকল্পে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। ধর্মীয় পর্যটনের পাশাপাশি ইকোটুরিজম, অ্যাডভেঞ্চার টুরিজমের ক্ষেত্রেও রাজ্যকে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত হলে আগামী দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে ত্রিপুরা পর্যটনের মানচিত্রে এক নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করবে। এতে রাজ্যের মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পর্যটন দপ্তরের সচিব ইউ কে চাকমা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিধায়ক অন্তরা সরকার দেব। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপাহিজলা জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, সিপাহিজলা জেলার জেলাশাসক ডা. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল, পুলিশ সুপার বিজয় দেববর্মা, পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রশান্ত বাদল নেগি প্রমুখ।

এদিকে কমলাসাগর কালীমায়ের মন্দির প্রাঙ্গণের পাশাপাশি পিকনিক স্পট এবং দিঘির সৌন্দর্যায়নে মোট ১৯ কোটি টাকা ও খয়েরপুর চৌদ্দ দেবতা মন্দিরের চারপাশকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঢেলে সাজাতে প্রায় ১৩ কোটি টাকা মোট ৩২.১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই দুটি ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এই প্রকল্পের মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা ও মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। এ দিনের মূল অনুষ্ঠানটি কমলাসাগর কালীমায়ের মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলেও চৌদ্দ দেবতা মন্দির প্রাঙ্গণের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে বোতাম টিপে ভার্চুয়ালি সূচনা করেন খয়েরপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক রতন চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগদান করে বিধায়ক রতন চক্রবর্তী বলেন, একটা সময় তিনি রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সৌভাগ্য হয়েছিল। তখন রাজ্যে উগ্রপন্থার মত জটিল সমস্যার দরুন পর্যটন শিল্পের তেমন কোন উন্নয়ন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এরপর একটা দীর্ঘ সময় রাজ্যে বামফ্রন্টের শাসনকালে এই চৌদ্দ দেবতার মন্দিরকে বরাবরই অবহেলার শিকার হতে হয়েছে। ২০১৮ সালে রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পর এবং খয়েরপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর এই চৌদ্দ দেবতার মন্দিরকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তার মধ্যেই এই ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি সৌন্দর্যায়নের প্রকল্পটিও অন্যতম বলে উল্লেখ করেন তিনি।
