September 10, 2025

পরিবেশ বান্ধব পুজো, ১০০ শতাংশ ‘হার্বাল দুর্গা’ বানালেন ইন্দ্রজিৎ!!

 পরিবেশ বান্ধব পুজো, ১০০ শতাংশ ‘হার্বাল দুর্গা’ বানালেন ইন্দ্রজিৎ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- প্রতি বছরই ‘দুর্গা প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে চমক থাকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাবরার শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দারের শিল্প ভাবনায়। এর আগে জয়পুরের পাথর খোদাই করে তাতে সোনা, রুপো দিয়ে প্রতিমা বানিয়ে নজর কেড়েছিলেন ইন্দ্রজিৎ।
আর এই বছরে তার চমক, ফেলে দেওয়া শুকনো গাছের সামগ্রী দিয়ে তৈরি উমা। পুরোপুরি পরিবেশ বান্ধব পুজো, সেই সঙ্গে প্রতিমা। বৃহস্পতিবার তার হাতের তৈরি অভিনব এই দুর্গাপ্রতিমা পাড়ি দিয়েছে উত্তরবঙ্গের একটি পূজো মণ্ডপে।
হাবরার বাণীপুরের বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ পোদ্দারের শিল্পকলা নিয়ে প্রথাগত কোনও পড়াশোনা নেই। শিল্প চেতনার সবটাই তার নিজস্ব। প্রতিমা তৈরিতে প্রতি বছরই নতুন নতুন চমক দেন তিনি।
বিগত বছরগুলিতেও ইন্দ্রজিতের গড়া দুর্গা পাড়ি দিয়েছে ভিন রাজ্যে। এবছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সাতটি দুর্গা ভিন রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে।
আগামী সপ্তাহে ওই প্রতিমাগুলির ‘ফাইনাল টাচ’ দিতে উত্তরপ্রদেশ থেকে রাজস্থান আর ওড়িশা থেকে মেঘালয় পর্যন্ত দৌড়াতে হবে ইন্দ্রজিতকে। এ বছর সাকুল্যে চোদ্দটি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন ইন্দ্রজিৎ।
কোনটা লোহা দিয়ে তো, কোনটা আবার কাচ দিয়ে। রাজস্থান আর নয়ডায় দুটো বাড়ির প্রতিমা বানিয়েছেন রুপো দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ থেকে বারাসত, বিরাটি,আগরপাড়ার পুজো মণ্ডপে যাচ্ছে চারটি প্রতিমা।
আর পঞ্চমটি তৈরি হয়েছে শুকনো দেশি ও বিদেশি গাছের পাতা, ফুল, ফল, শিকড় দিয়ে। গত জুলাই থেকে এই প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন শিল্পী। এই ‘হার্বাল দুর্গা’ মূর্তিটি এ বছর পৌঁছে গিয়েছে কোচবিহার সদর শহরের খাগড়াবাড়ি সর্বজনীন শারদোৎসব নাট্যসংঘের মণ্ডপে।
কীভাবে ১০০ শতাংশ ভেষজ প্রতিমা বানালেন ইন্দ্রজিৎ তার বৃত্তান্ত শোনালেন ‘দৈনিক সংবাদ’-কে। বললেন, ‘প্রথমে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। তার পর তাতে সেঁটে দেওয়া হয়েছে দেশি ও বিদেশি গাছের বিভিন্ন সামগ্রী।’ বাদ যায়নি ড্রাই ফ্রুটসের খোলক। আখরোট, কাজু বাদামের খোলক যেমন আছে তেমনই ধুধুল, শুকনো লাউকেও ব্যবহার করেছেন প্রতিমা গড়তে।
ইন্দ্রজিত বলেন, ‘দেবীর দেহটি তৈরি হয়েছে থাইল্যান্ডের পাটকাঠি দিয়ে। মুখ তৈরি হয়েছে বেলের মালা ব্যবহার করে। চুল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ফুলকপির শিকড়।দেবীর কোমরে থাকা বিছে ও ওড়না তৈরি হয়েছে ঘাসফুল দিয়ে। শাড়ি এবং নখ তৈরি হয়েছে পেঁপে গাছের ছাল, পাইন ফল, অস্ট্রেলিয়ার পিনুক গাছের ফুলের পাপড়ি, আখরোেট খোলক আর বিভিন্ন ধরনের শুকনো ফুল দিয়ে। চালি তৈরি হয়েছে কদবেল দিয়ে। চালচিত্র তৈরি করা হয়েছে সিম ট দিয়ে। তালপাতা সঙ্গে ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ার ডুমুর ফল দিয়ে তৈরি হয়েছে দেবীর বেদী।’
‘হার্বাল দুর্গা’ মূর্তির উচ্চতা সাড়ে ১১ ফুট। চওড়া সাড়ে ৭ ফুট। কমিটির প্যান্ডেলও তৈরি করেছেন ইন্দ্রজিৎ। পুজোর থিম কাল্পনিক স্বর্ণমন্দির। খাগড়াবাড়ি সর্বজনীন শারদোৎসব নাট্যসংঘের মণ্ডপের সম্পাদক, শুভময় সেন ফোনে জানালেন, তারা প্রতি বছর অভিনব থিম ও মূর্তি উপহার দিয়ে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *